ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র

বাংলাদেশ-রাশিয়ার মধ্যে চূড়ান্ত ঋণচুক্তি সই

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৭ জুলাই ২০১৬

বাংলাদেশ-রাশিয়ার মধ্যে চূড়ান্ত ঋণচুক্তি সই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে চূড়ান্ত ঋণচুক্তি সই হয়েছে। মঙ্গলবার মস্কোয় দুই দেশের মধ্যে এক হাজার ১৩৮ দশমিক ৫ কোটি ডলারের এ ঋণচুক্তি সই হয়। বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের জ্যৈষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন। আর রাশিয়ার পক্ষে চুক্তিতে সই করেন দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী সের্গেই আনাতোলেভিচ স্টরচক। এ ঋণচুক্তি সইয়ের জন্য গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল মস্কো যায়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৬৫ কোটি ডলার। এর ৯০ শতাংশ রাশিয়া ঋণ হিসেবে দিচ্ছে। ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এ কেন্দ্রে প্রথম ইউনিটে ২০২৩ সালে বিদ্যুত উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা। আর দ্বিতীয় ইউনিটে তার পরের বছর উৎপাদন শুরু হতে পারে। এ ঋণ চুক্তি বাংলাদেশের ইতিহাসে সব থেকে বড় ঋণচুক্তি। ইতোমধ্যে রূপপুরের জন্য এক হাজার ১৩৮ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন দিয়েছে রাশিয়া। এক হাজার ২৬৫ কোটি ডলারের দুটি বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের বাকি টাকা অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার। আগামী বছর থেকে বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের মূল কাজ শুরু হবে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য পাঁচ সদস্যর একটি প্রতিনিধি দল রাশিয়া যান। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দলে অন্য সদস্যরা হলেন, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, ইআরডি সিনিয়র সচিব মেজবাহ উদ্দীন, একই বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবুল মনসুর মোঃ ফায়জুল্লাহ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আনোয়ার হোসেন। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন রাশিয়ান ফেডারেশনের আর্থিক সহায়তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। বিদ্যুত কেন্দ্রের ৯০ শতাংশ ঋণ দিচ্ছে রাশিয়া। সব মিলিয়ে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পে ৯০ ভাগ ঋণ নেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রকল্পের ১০ ভাগ অর্থের যোগান দিচ্ছে। যার পরিমাণ এক দশমিক ২৬৫ বিলিয়ন ডলার। আর্থিক দিক দিয়ে দেশের সব থেকে বড় প্রকল্পে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হবে। এক দশমিক ৭৫ শতাংশের সঙ্গে লাইবর যোগ করে ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করা হবে। ঋণের অর্থ ৩০ বছরের মধ্যে ফেরত দিতে হবে। এর মধ্যে ১০ বছর গ্রেইস প্রিরিয়ড পাওয়া যাবে। গত ১৯ মে প্রাথমিকভাবে দুই দেশ ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করে। আর গত ২৫ মে পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রটির নির্মাণ চুক্তি করে রাশিয়া। ইতোমধ্যে রূপপুর বিদ্যুতকেন্দ্রের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। প্রাথমিক ঋণচুক্তি অনুযায়ী পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রটির যন্ত্রাংশ পরিবহনের জন্য রাশিয়া নদীর পাড়ে একটি জেটি নির্মাণ করবে। যন্ত্রাংশ আমদানির জন্য আনুষঙ্গিক অন্য কাজগুলোর দায়িত্বও নিয়েছে রাশিয়া। এছাড়া বিদ্যুতকেন্দ্রটি পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের প্রায় এক হাজার ৯৫০ জন জনবল প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। সরকার বলছে ভিভিআর-১২০০ প্রযুক্তির সর্বাধুনিক রিয়্যাক্টর ব্যবহার করবে রাশিয়া। ইতোমধ্যে রূপপুর বিদ্যুতকেন্দ্রের সমীক্ষা শেষ হওয়ার পর আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ), ভারতের পারমাণবিক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং রাশিয়ান এ্যাটমিক এনার্জি রূপপুর পরিদর্শন করেছে। তারা বিদ্যুতকেন্দ্রটি নির্মাণে সম্মতি দিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুতকেন্দ্রটির নকশা, যন্ত্রাংশ সরবরাহ, বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ, উৎপাদন, নিশ্চয়তা বা গ্যারান্টি, পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ, বিদ্যুতকেন্দ্র পর্যন্ত যন্ত্রাংশ পরিবহন এবং গ্যারান্টি পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন সেবা প্রদানের কথা উল্লেখ করেছে। রাশিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে ১৩ দফা আলোচনার ভিত্তিতে ৪৭টি অনুচ্ছেদ এবং ৫৭৩টি উপ অনুচ্ছেদের চুক্তিটি চূড়ান্ত করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া বিদ্যুতকেন্দ্রটি নির্মাণ এবং পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল সৃষ্টি করবে। বিদ্যুতকেন্দ্রটির প্রথম পর্যায়ের কাজ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। এরপর মূল বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু হবে। বিদ্যুতকেন্দ্রটির নক্সা প্রণয়নের কাজ শেষ করেছে এটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট। চুক্তি বাস্তবায়নের সময়কাল সাত বছর ধরা হয়েছে। ঋণ পরিশোধের সময়কাল ২৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ বছর গ্রেস প্রিরিয়ড রয়েছে। ছয় মাসের লাইবরের সঙ্গে এক দশমিক ৭৫ শতাংশ যোগ করে ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করা হবে। তবে কোনক্রমেই বছরে চার ভাগের বেশি সুদের হার হতে পারবে না। গত ২১ জুন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনকে লাইসেন্স প্রদান করে।
×