ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আবারও জার্মানি আক্রান্ত

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ২৭ জুলাই ২০১৬

আবারও জার্মানি আক্রান্ত

২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হলো জার্মানি। দেশটির মিউনিখ শহরের একটি ব্যস্ত বিপণি বিতানে বড় ধরনের এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার কয়েক ঘণ্টা পর দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আন্সবাখে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। শুক্রবার সন্ধ্যায় অলিম্পিয়া নামের ওই শপিং সেন্টারে ইরানী বংশোদ্ভূত এক তরুণ এই হামলা চালায়। মিউনিখে ৯ জনকে গুলি করে হত্যার পর আত্মঘাতী হয়েছেন একজন বন্দুকধারী। আন্সবাখের বোমা হামলায় সন্ত্রাসী নিজে নিহত হয়। এই পরিস্থিতিকে সে দেশের পুলিশ ‘ভয়াবহ সন্ত্রাসী হুমকি’ বলে অভিহিত করেছে। জার্মানিতে এই হামলার ঘটনা বিশ্ববাসীকে আবারও একটি ভীতিপ্রদ সময়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। মিউনিখের হামলা সম্পর্কে জানা যায়, ঘটনার দিন স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় মিউনিখের রেস্টুরেন্ট ও শপিং সেন্টারে হামলা চালায় বন্দুকধারী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামলার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ প্রকাশের পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ৯ জনকে হত্যার পর আত্মহত্যা করে ১৮ বছর বয়সী বন্দুকধারী। পরিস্থিতি বিবেচনায় এখনও মিউনিখে জরুরী অবস্থা চলছে। সন্ত্রাসী হামলাটি ইসলামী জঙ্গী গোষ্ঠীর কিনা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইএস সমর্থকরা এ হামলা নিয়ে প্রকাশ করছে উল্লাস। স্মরণ করা যেতে পারে, কয়েকদিন আগে জার্মানিরই ভুর্সবুর্গ শহরে এক হামলার দায় স্বীকার করেছিল আইএস। সবটা মিলিয়ে এটা অনুমান করা চলে যে, মিউনিখের ঘটনা আইএস অথবা অন্য কোন জঙ্গী গোষ্ঠীরই কাজ। সমগ্র বিশ্বই আজ এক অঘোষিত যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে, যে যুদ্ধের প্রতিপক্ষ হচ্ছে জঙ্গীবাদ। জঙ্গীরা ইউরোপসহ বিশ্বের কোথায়, কখন, কিভাবে হামলা পরিচালনা করবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই এবং বোঝাই যাচ্ছে, সিরিয়ায় বোমাবর্ষণ করে অথবা অন্য কোন হাতুড়ে পদ্ধতিতে এ যুদ্ধের অবসান ঘটানো সম্ভব নয়। জঙ্গীরা ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যসহ আফগানিস্তান, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশের কিছু অঞ্চল নিজেদের দখলেও নিয়ে গেছে। মানুষ হত্যা করে নৈরাজ্য সৃষ্টিই যাদের লক্ষ্য। এরা মানুষ হত্যায় এতই মরিয়া যে, তাদের চোখে অপরাধী-নিরপরাধের কোন বাছবিচার নেই। নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রয়োজনে তারা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদেরও হত্যা করতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সন্ত্রাসবাদ যে গভীরভাবে বিশ্ববাসীর কাঁধে চেপে বসেছে, তা জার্মানির হামলার মধ্য দিয়েও স্পষ্ট। এ হামলার ঘটনায় ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শোক জানিয়ে সন্ত্রাস মোকাবেলায় জার্মানিকে সব ধরনের সহায়তা দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। শুধু জার্মান, তুরস্ক, ফ্রান্স কিংবা বাংলাদেশ নয়, সন্ত্রাসবাদ বিশ্ববাসীর কাছে আজ এক বিষফোঁড়া হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে। উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলেই হবে না। সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়ানোর সময় এখনই। কাজটি যতই কঠিন হোক না কেন, জঙ্গীবাদ দমন করতে হবে যে কোন উপায়ে। এ দমন প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবতে হবে বিশ্ব নেতৃত্বকে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের কূটনীতিকপাড়া গুলশানে যে জঙ্গী হামলা হয়েছে সেটা উল্লেখ করার মতো। তবে সরকার সচেষ্ট থাকায় এই জঙ্গী হামলা অতিদ্রুত মোকাবেলা করা গেছে। বাংলাদেশও যেহেতু জঙ্গী হামলার শিকার হচ্ছে, তাই জঙ্গী দমন প্রক্রিয়ায় আমাদেরও সম্পৃক্ত হতে হবে। বিশ্বনেতাদের সম্মিলিত পদক্ষেপে সন্ত্রাসবাদের ছোবল থেকে বিশ্ববাসী পরিত্রাণ পাবে- এটাই সবার প্রত্যাশা।
×