ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ২৭ জুলাই ২০১৬

অর্থ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ

জঙ্গীবাদের চেয়েও অনেক পুরনো বৈশ্বিক সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি। সমাজ জীবনকে কলুষিত করার ক্ষেত্রে দুর্নীতির হাত-পায়ের এতই বিস্তৃতি ঘটেছে যে, সর্বত্রই তার দোর্দ- প্রতাপ। নীতিকে পদদলিত করে যার প্রকাশ ঘটে, সেই দুর্নীতি আমু-ু গিলে খাচ্ছে নীতি-নৈতিকতা, এমনকি মূল্যবোধ। দুর্নীতি একটি মারাত্মক অসুখের নাম। চিকিৎসায়ও যার উপশম হওয়ার নয়। তাই দেখা যায় জনপ্রতিনিধিরাও এই রোগে আক্রান্ত। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি শব্দটির জমজমাট অবস্থা ও অবস্থান। দুর্নীতিতে যারা সিদ্ধহস্ত হতে চায় না। এমনকি কাছেও ঘেঁষতে অনাগ্রহী। তাদের কপালে নিন্দা মন্দ যেমন জোটে, তেমনি কর্মক্ষেত্রে অনাদর, অবহেলাও মেনে নিতে হয়। দুর্নীতি অনেক ক্ষেত্রেই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পরিগ্রহ করেছে। দুর্নীতির আবার নানা রূপ, শ্রেণী রয়েছে। এক টাকাও যেমন টাকা, আবার লাখ টাকাও টাকা। দুর্নীতি এই টাকা হাতিয়ে নেয়ার মহার্ঘ যন্ত্র বৈকি। এর সীমা-পরিসীমা নেই। তাই কর্মভেদে দুর্নীতির আভিজাত্য রূপ যেমন আছে, তেমনি আছে গরিবী হালাত। বিষয়ের পরিধির ওপর নির্ভর করে এর মাপ-পরিমাপ। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ সবাই চায়, কিন্তু দুর্নীতিবাজরা দুর্নীতিমুক্ত হওয়ার কোন প্রয়াসের কাছে আত্মসমর্পণ করতে নারাজ। বরং মনে করা হয়, দুর্নীতি উন্নতিরই সোপান। ‘যত বেশি দুর্নীতি, তত বেশি উন্নতি’ এই মূলমন্ত্র যাদের, তারা সমাজ ও রাষ্ট্রে বেশ ঝাঁকিয়ে হাঁকডাক দেয়। সমাজ তাদের ঘৃণা করবে, সে সুযোগ কই। বরং দুর্নীতিই তাদের সামাজিক অবস্থানকে শিখরে নিয়ে যায়। পাশাপাশি দুর্নীতির বিষবাষ্প সবখানেই তার ডালপালা ছড়ায় এমনভাবে যে, সেই বিষ গলধঃকরণ করার বিকাশ আর থাকে না। দুর্নীতি সমাজ ও রাষ্ট্রকে কুরে কুরে খাচ্ছে এ দেশে ওদেশে। দুর্নীতিবাজরা ক্ষমতার অপব্যবহারকেই তাদের মূল কর্ম হিসেবে বেছে নেয়। রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতির পাহাড় গড়া এবং বিদেশে অর্থ পাচারের ঘটনা এই শতাব্দীর শুরুতে বাংলাদেশ দেখেছে। দুর্নীতি এখন জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের প্রধান ও পরম পৃষ্ঠপোষক। দুর্নীতির অর্থই যাচ্ছে জঙ্গীদের হাতে। অর্থনৈতিক সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ আজকের বিশ্বের ভয়াবহ সমস্যা। এই দুই সমস্যাকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিহত করতে না পারলে কেউ নিরাপদে থাকবে না। যে সব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জঙ্গীবাদের পেছনে টাকা ঢালছে, তারা অবশ্যই দুর্নীতিগ্রস্ত। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বে যে সব কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধেও তেমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না। হবেই বা কেমন করে? পানামা পেপারসের তালিকা স্পষ্ট করে যে, দ-মু-ের হর্তাকর্তা থেকে রাষ্ট্র পরিচালনাকারীরা দুর্নীতিতে নিজেরাই এমনভাবে আকণ্ঠ নিমজ্জিত যে, দেশের মানুষকে তারা আর দুর্নীতিমুক্ত করতে পারছে না। তাই দেখা যায়, সরকারী কর্মসূচী টিআর ও কাবিখা বরাদ্দের আশি শতাংশই চুরি হয়। এটা শুধু এ ক্ষেত্রে নয়, অন্যসব ক্ষেত্রেই চলছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর, পরিবহনÑ সবখানেই অর্থ সন্ত্রাসের প্রাদুর্ভাব নানাভাবে ঘটে। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় আজ উদ্ভাবিত হয়নি। আইন করেও দুর্নীতি কমানো যাচ্ছে না। অর্থমন্ত্রীও আক্ষেপ করে বলেছেন, আইনকানুন করেও দেশে দুর্নীতি কমানো যাচ্ছে না। সরকার দুর্নীতি দমনে খুব একটা এগোতে পারেনি। দুর্নীতি দমন কমিশন করেও ফায়দা হচ্ছে না। ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতির মাত্রা ক্রমশ বেড়ে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, টাকা লোপাট, পাচার, চুরি সবই চলছে। আইন তাদের নিয়ন্ত্রণে অপারগ যেন। অর্থ সন্ত্রাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তারই পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে ওঠা জঙ্গীবাদ। এই দুটোর রূপই ভয়ঙ্কর। ভয়াবহ এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো যে জরুরী, তা সবাই উপলব্ধি করে। কিন্তু উপায় আর মেলে না। আইনকানুন, বিচার, শাস্তি, জেল-জরিমানাÑ কোন কিছুই বুঝি এই দুই ত্রাসকে বাগে আনতে পারছে না। স্বদেশবাসীর মধ্যে বিশ্ববাসীকেও আজ এককাট্টা হয়ে উপায় উদ্ভাবন করতে হবে অর্থ সন্ত্রাস ও জঙ্গী সন্ত্রাস নির্মূল করার। ক্ষমতাসীন সরকার দুর্নীতি ও জঙ্গীরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিলেও তা একার পক্ষে দমন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই জনগণকে সচেতন করে একযোগে প্রতিরোধ গড়া জরুরী।
×