ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এক মাসে বেড়েছে ২৫ শতাংশ

মোবাইলে দৈনিক লেনদেনে ৭৭১ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২৭ জুলাই ২০১৬

মোবাইলে দৈনিক লেনদেনে ৭৭১ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোজা ও ঈদের কারণে চলতি বছরের জুন মাসে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনে নতুন রেকর্ড হয়েছে। এ মাসে দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে প্রায় ৭৭২ কোটি টাকা। যা মে মাসের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি। এছাড়া এটি আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ৭৮ শতাংশ বেশি। এ মাসে ক্যাশ ইন ট্রানজেকশন, ক্যাশ আউট ট্রানজেকশন, রেমিট্যান্সের অর্থ প্রেরণ, পারসন টু পারসন লেনদেন, বেতন-ভাতা ও ইউটিলিটি বিল পরিশোধ সবই উল্লেখযোগ্যহারে বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, দ্রুততম সময়ে এক স্থান হতে অন্য স্থানে টাকা পাঠানোর অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম এখন মোবাইল ব্যাংকিং। বর্তমানে এ সেবা ব্যবহার করেই মানুষ তাদের পরিবার পরিজন ও নিকটাত্মীয়ের কাছে বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন। আর অন্য সময়ের চেয়ে ঈদের আগে এ সেবায় টাকা পাঠানোর পরিমাণ বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক সাড়ে ৩ কোটি অতিক্রম করে। জুন শেষে এ সেবায় গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৬২ লাখ। যা মে মাসে ছিল ৩ কোটি ৫৪ লাখ। গ্রাহক বৃদ্ধির সঙ্গে নিষ্ক্রিয় এ্যাকাউন্টের সংখ্যাও বাড়ছে। বর্তমানে মোট গ্রাহকের অর্ধেকেরও বেশি এ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। জুন শেষে নিষ্ক্রিয় এ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৩৩ লাখ। যা মে মাসেও ছিল ১ কোটি ২৮ লাখ। নিয়ম অনুযায়ী, কোন এ্যাকাউন্ট থেকে টানা তিন মাস কোন ধরনের লেনদেন না হলে তা ইন-এ্যাকটিভ বা নিষ্ক্রিয় এ্যাকাউন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। আর তিন মাসের মধ্যে একটি লেনদেন হলেও তা সক্রিয় হিসেবে বিবেচিত। অবশ্য বড় কোন অনিয়ম না পাওয়া গেলে এ্যাকাউন্ট বন্ধ করে না ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, সরকারী ঘোষিত সময়ের মধ্যে অনেক মোবাইল ব্যাংকিং এ্যাকাউন্টে ব্যবহৃত সিম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন না করায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ কারণে নিষ্ক্রিয় এ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত মোবাইল ব্যাংকিয়ের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৮৬ লাখ। গেল এক বছরে গ্রাহক বেড়েছে প্রায় ৭৬ লাখ। গ্রাহক বৃদ্ধির সঙ্গে লেনদেনও বেড়েছে উল্লেখ যোগ্যহারে। গেল বছরের জুন মাসজুড়ে এ সেবায় লেনদেন হয় ১২ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা। ফলে ওই মাসে দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছিল ৪৩২ কোটি টাকা। এক বছর পর চলতি বছরের জুন মাসে এ সেবায় মোট লেনদেন হয়েছে ২৩ হাজার ১৫১ কোটি টাকা। আর দৈনিক লেনদেন হয়েছে ৭৭১ কোটি ৭১ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুন মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশ ইন ট্রানজেকশন হয়েছে ১০ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। এ সময়ে ক্যাশ আউট ট্রানজেকশন হয়েছে ৮ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। মে মাসে ক্যাশ ইন ও ক্যাশ আউট ট্রানজেকশন হয়েছিল যথাক্রমে ৭ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা ও ৭ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা। ফলে এক মাসের ব্যবধানে ক্যাশইন ও ক্যাশ আউট ট্রানজেশন বেড়েছে ২৯ শতাংশ ও ২৩ শতাংশ। এ সময়ে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে ট্রানজেকশন হয়েছে ৩ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। যা আগের মাসে ছিল ২ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। অন্যদিকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জুন মাসে ৪৩৭ কোটি টাকার বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। যা আগের মাসের তুলনায় ১৯১ শতাংশ বেশি। এ সময় ইউটিলিটি বিল পরিশোধ প্রায় ২৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৮ কোটি টাকা। জুন মাসে অন্যান্য বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৩৬৬ কোটি টাকা। যা আগের মাসে ছিল ৩১৯ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো সরাসরি মোবাইল ব্যাংকিং করতে পারে না বিধায় এ কার্যক্রমের জন্য এজেন্ট নিয়োগ করে। নির্ধারিত কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এজেন্ট নিয়োগ দেয় ব্যাংকগুলো। প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন মাস শেষে ব্যাংকগুলোর মনোনীত এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪ হাজার ৪১৮ জন। মে মাস পর্যন্ত এজেন্টের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৯২ হাজার ৪৩২ জন । প্রসঙ্গত, সুবিধাবঞ্চিতদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং চালুর অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো বিভিন্ন মোবাইল ফোন অপারেটরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এ সেবা দিচ্ছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করলেও এখন সবচেয়ে এগিয়ে আছে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ। বর্তমানে ১৯টি ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা থাকলেও মোট লেনদেনের উল্লেখযোগ্য অংশ হয় বিকাশের মাধ্যমে।
×