ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তারেকের সাজার প্রতিবাদ

বিএনপি কাল ফের বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে

প্রকাশিত: ০৮:১৬, ২৬ জুলাই ২০১৬

বিএনপি কাল ফের বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মুদ্রা পাচার মামলায় হাইকোর্টের দেয়া সাজার প্রতিবাদে আগামীকাল বুধবার আবারও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে বিএনপি। রাজধানী ঢাকাসহ সব মহানগরের থানা এবং দেশের সব উপজেলায় এ বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করা হবে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এই বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা করেন। যদিও এর আগে গত শনিবার ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে জেলা সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচী ছিল বিএনপির। তবে কর্মসূচী ঘোষণা করেও সেদিন মাঠে নামেনি বিএনপি। এই প্রেক্ষিতে নতুন করে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচীর ঘোষণা করা হলেও কার্যকর করা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, আগামী দিনে আরও কঠিন কর্মসূচী দিয়ে ফ্যাসিবাদী এই সরকারের সিংহাসন কাঁপিয়ে দেয়া হবে। তখন সরকারের র‌্যাব-পুলিশ জাতীয়তাবাদী শক্তিকে স্তব্ধ করতে পারবে না। তিনি বলেন, ভোটারবিহীন ‘নির্বাচিত’ সরকার মিথ্যা মামলায় আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে তারেক রহমানকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়েছে। সরকার রাজনীতির দৃশ্যপট থেকে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে সরিয়ে দিতে চায়। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পীড়ন নির্যাতনে অভিনব নিষ্ঠুর কৌশল অনুসরণ করছে সরকার। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলায় সিলেটের নির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হবিগঞ্জের পৌর মেয়র জিকে গউসকে জড়িয়ে দীর্ঘদিন আটকে রাখা হয়েছে একইভাবে। বর্তমান সরকার দুরভিসন্ধিমূলক এক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে নানাভাবে এই কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। এ কারণেই বেগম জিয়া এবং তারেক রহমানকে রাজনীতির দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দিতে দেশব্যাপী সহিংস রক্তপাতের ঘটনার জন্ম দেয়া হচ্ছে। গুম আর বন্দুকযুদ্ধের নামে মানুষ হত্যার পর দেশে সন্ত্রাসের নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। আর তা হলো উগ্রবাদী জঙ্গীগোষ্ঠীর তা-ব। সরকার জঙ্গীবাদ নির্মূলের কথা বার বার ঘোষণার করলেও জঙ্গীরা নিষ্ঠুরভাবে নিরীহ দেশী-বিদেশী মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকার জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণে তারা ঠিকই সফলতার পরিচয় দিচ্ছে। এই প্রতিহিংসা মেটাতে গিয়ে বিএনপিসহ দেশের গণতান্ত্রিক শক্তির ওপর হামলে পড়ছে সরকার। এর আগে ১/১১ এর মঈনউদ্দন-ফখরুদ্দিনের সরকার তারেক রহমানের ওপর চালিয়েছে নিষ্ঠুর ও বর্বর নির্যাতন। এরই ধারাবাহিকতায় এখনও পর্যস্ত চলছে তার ওপর নানামুখী মিথ্যা মামলা, হুমকি, মিথ্যাচার ও কুৎসা রটনা। খালাস পাওয়া একটি মামলায় আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে অন্যায় অন্যায্যভাবে সাজা দেয়া হয়েছে। মুদ্রাপাচার মামলায় আদালত তারেক রহমানের সংশ্লিষ্টতা না পেয়ে বেকসুর খালাস দিয়েছিল। এ দেশে যারা গণতন্ত্রের পক্ষে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে তারা জেলে থাকবে, গুম হবে এটাই হাসিনা সরকারের বাস্তবতা। তাই তারেক রহমানের মামলায়ও প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা পূরণ হয়নি। উচ্চ আদালতে মামলা নিয়ে সাজার ব্যবস্থা করা হলো। এতেই বুঝতে হবে এটাই শেখ হাসিনার আমল। তিনি বলেন, সরকার গায়ের জোরে যাকে ইচ্ছা তার বিরুদ্ধে জঙ্গী অভিযোগ দিয়ে শত শত মামলা দিচ্ছে। আর যাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে দুর্নীতি ও কুপিয়ে হত্যা করার জন্য মামলা হচ্ছে তাদের বেকসুর খালাসের সার্টিফিকেট দিয়ে বের করে আনছে। এখন কাকে ফাঁসি দেয়া হবে, কাকে যাবজ্জীবন দেয়া হবে সব বাস্তবায়ন হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ এখন আর রাজনৈতিক দল নয়। আওয়ামী লীগ এখন ইনু লীগে পরিণত হয়েছে। দলটি তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। ক্ষমতার মোহে জনগণের ওপর দুঃশাসন চালাচ্ছে। গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা সবকিছুকে জলাঞ্জলি দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের পক্ষে বাংলাদেশকে কেয়ারটেকারে পরিণত করেছে। জনসমর্থন ছাড়া ভোটে নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। পার্শ্ববর্তী দেশের সরকারের সমর্থন ছাড়া এদেশের জনগণ, মিডিয়ার কারও সমর্থন তার দরকার নেই। ওই দেশের নীতিনির্ধারকরা সমর্থন করলেই হবে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, শাম্মী আখতার, তাইফুল ইসলাম টিপু ও মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জনগণ সরকারের ওপর ক্ষুব্ধÑ নজরুল ॥ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান দাবি করেছেন দেশের জনগণ সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ। আগামী নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রে তাদের অনিশ্চয়তা রয়েছে। তাই তারেক রহমানকে সাজা দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করতে চায়। তবে সরকারের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে না। এটা সরকারের ভুল ধারণা। নির্বাচনে জয়ী হতে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের দরকার হবে না। পৃথিবীতে অনেক ইতিহাস আছে কাউকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে। পরবর্তীতে তিনিই দেশের রাষ্ট্রনায়ক হয়েছেন। তারেক রহমানেরও রাষ্ট্রনায়ক হতে বাধা নেই। এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। চিন্তার বিষয় হচ্ছে সরকার দেশের সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাসাস আয়োজিত এক আলোচনায় সভায় তিনি আরও উল্লেখ করেন, দেশের জনগণের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের দমন করতে হলে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। দেশ যে সঙ্কটে রয়েছে এ থেকে উত্তরণের জন্যই খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। সরকার এতে সাড়া দিচ্ছে না। দেশের জনগণের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের দমনে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই দেশে প্রথম জঙ্গী হামলা হয়। দুর্নীতিতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়। বিচার বিভাগ প্রভাবিত হয়। ব্যাংক লুট ও রিজার্ভ চুরি হয়। আর এ দলের সরকারের আমলেই প্রথম ক্রসফায়ার হয় সিরাজ শিকদার। অথচ দেশে কোন কিছু হলেই সরকার বিএনপি ও জামায়াতকে দোষারোপ করে। কোন তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই তারা এ কাজ করে আসছে উল্লেখ করেন।
×