ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরা থেকে শুরু হয়েছে রাজউকের উচ্ছেদ অভিযান

প্রকাশিত: ০৭:৫১, ২৬ জুলাই ২০১৬

উত্তরা থেকে শুরু হয়েছে রাজউকের উচ্ছেদ অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কিছুক্ষণ আগেই চলছিল রেস্তরাঁর স্বাভাবিক কার্যক্রম। পাশের ভবনে আবাসিক এলাকায় স্থাপিত অবৈধ আবাসিক হোটেলের বিরুদ্ধে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) উচ্ছেদ অভিযানের ভ্রাম্যমাণ আদালতের কঠোর অবস্থান নেয়ার কথা জানতে পেরে রেস্তরাঁ থেকে সঙ্গে সঙ্গেই সবাইকে বের করে দিয়েছে। সকল কার্যক্রম বন্ধ করে সাটার নামিয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষ। পালিয়ে গেছেন রেস্তরাঁর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অভিযান থেকে বাঁচতে রেস্তরাঁর সামনের দেয়ালে সাঁটিয়ে দিয়েছেন সাদা কাগজে লেখা পোস্টার ‘রেস্তরাঁটি স্থায়ী বন্ধ’। এর পরও রক্ষা পায়নি অবৈধ এ রেস্তরাঁটি। বেরসিক রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত এসব দেখেও ক্ষান্ত হয়নি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে রাজউক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তালা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে রেস্তরাঁসহ পুরো ভবনটির বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই রেস্তরাঁটির প্রধান ফটক সিলগালা করে দিয়েছে। সরকারের পূর্বঘোষিত উচ্ছেদ অভিযান এভাবেই শুরু করেছে রাজউক কর্তৃপক্ষ। রাজউকের এ ধরনের কঠোর অবস্থানে বেশ খুশি স্থানীয় আবাসিক এলাকায় বসবাসকারীরা। তাদের মতে, এবার হয়ত আবাসিক চেহারায় ফিরবে পূর্বের উত্তরা আবাসিক এলাকা। সোমবার রাজধানীর উত্তরার ৪নং সেক্টরের শাহজালাল এ্যাভিনিউ থেকে এ অভিযান শুরু করা হয়। পুলিশ সঙ্কট থাকায় আগামী ২৮ জুলাই পুনরায় এ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার জাকির হোসেনের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এদিন শাহজালাল এ্যাভিনিউর একটি দশতলা আবাসিক হোটেলসহ মোট পাঁচটি স্থাপনার নয়টি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। সরকারের পূর্বঘোষিত রাজধানীর আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানে শুধু অননুমোদিত স্থাপনাই নয়, অবৈধ ও রাজউক অননুমোদিত এসব স্থাপনার গ্যাস ও বিদ্যুত সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনায় বাধাদানকারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তি প্রদানেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। এসব দিকনির্দেশনা নিয়ে সরকার ঘোষিত আবাসিক এলাকায় অবৈধ বাণিজ্যিক স্থাপনা সরাতে বেশ জোরেশোরেই মাঠে নেমেছে সংস্থাটি। অভিযানের খবর পেয়ে কোন কোন অবৈধ প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ ভবনে তালা মেরে পালিয়েও যাচ্ছেন। তাৎক্ষণিকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের রোষানল থেকে বাঁচতে অবৈধ স্থাপনার মালিকগণ নানা কৌশল গ্রহণ করছেন। অভিযান থেকে বাঁচতে অবৈধ প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ আজব ঘটনাও ঘটাচ্ছেন। সোমবার দুপুর ১২টা থেকে শুরু হওয়া অভিযান বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত একটানা চলে। উত্তরার ৪নং সেক্টরের শাহজালাল এ্যাভিনিউতে প্লাটিনাম রেসিডেন্স নামে দশতলা একটি আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কর্মকা- পরিচালনা করছিল। ভ্রাম্যমাণ আদালত আবাসিক এ হোটেলটি পরিচালনার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে রাজউকের কোন অনুমোদন রয়েছে কি-না তা জানতে চায়। হোটেল কর্তৃপক্ষ এর পক্ষে কোন অনুমোদন দেখাতে না পারায় ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে সোমবার বিকেল ৪টার মধ্যেই হোটেলে অবস্থিত সকল অতিথিদের সরিয়ে অন্যত্র পাঠানোর নির্দেশ দেয়। আদালত ওই হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাদা কাগজে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সকল অতিথি সরিয়ে নেয়ার অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর নেয়। অঙ্গীকারনামায় ভবিষ্যতে এ স্থানে কোন ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে না বলে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। রাজউক সূত্র জানায়, উক্ত হোটেল কর্তৃপক্ষ সঠিক সময়ের মধ্যে অতিথিদের সরিয়ে নিচ্ছে কি-না তা দেখতে রাজউকের এক কর্মচারীকে পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশ দেন। পরে হোটেলটির পরিচালনা কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধের জন্য গ্যাস ও বিদ্যুত সংযোগও বন্ধ করে দেয়া হয়। আদালত ওই ভবনের লোকদের সহায়তা নিয়েই সংযোগ বিচ্ছিন্নের কার্যক্রম সম্পন্ন করে। ভবনটির নিচতলায় গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় অভ্যর্থনা ডেস্ক, উন্মুক্ত স্থানে সিঁড়িঘর, নিরাপত্তা কক্ষ ও রান্নাঘর তৈরি করা হয়েছে। দ্বিতীয় তলায় রেস্তরাঁ এবং তৃতীয় থেকে দশতলা পর্যন্ত আবাসিক হোটেল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত শাহজালাল এ্যাভিনিউর ৪০ নম্বর বাড়িতে চলা বাকারু রেস্তরাঁর দিকে যায়। ভবনটির নিচতলায় রেস্তরাঁ আর উপরের তলায় কোচিং সেন্টারকে ভাড়া দেয়া হয়েছে। পাশের ভবনের অভিযানের দৃঢ়তার খবর পেয়ে ওই ভবনের রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে সব কার্যক্রম বন্ধ করে বাইরের প্রধান ফটকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। সেখানে দেয়ালে সেঁটে দেয়া হয় ‘রেস্টুরেন্ট স্থায়ী বন্ধ’। ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে তালা ভেঙ্গে ভেতরে ঢোকে রাজউকের কর্মীরা ওই ভবনটিরও বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ওই ভবনে রেস্তরাঁ ছাড়াও পার্টি সেন্টার ও এ্যাডভান্স হোটেল ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট নামে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে। আদালত পরে একই সড়কের আবাসিক ভবনগুলোতে থাকা এভারেস্ট রেস্তরাঁ, স্পাইসি বাইটস, অপি’স ডেন্টাল ক্লিনিক, কুমিল্লা রসমালাই-সুইটস এ্যান্ড বেকারি, নান্না বিরিয়ানি, মেগা ইলেক্ট্রিক্যাল এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও লৌহজং টায়ার এ্যান্ড ব্যাটারি নামের প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেয়। উচ্ছেদ অভিযান চলার সময় ঘটনাস্থলে জড়ো হওয়া বন্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক ও কর্মীরা অভিযোগ করেন, উচ্ছেদ অভিযান চালানোর আগে তাদের সময় দেয়া হয়নি। আদালতের সিলগালা করা দশতলা আবাসিক হোটেল প্লাটিনাম রেসিডেন্সের প্রশাসন বিভাগের ব্যবস্থাপক গোলাম সারওয়ার হোসেন বলেন, আমরা এ বিষয়ে কিছুই জানতাম না। বিদেশী অতিথিদের এত অল্প সময়ের নোটিসে বের করে দেয়া ঠিক হচ্ছে না। এতে আমাদের পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হবে। আমাদের সময় দিলে আগেই তাদের সরিয়ে নিতে পারতাম। সিলগালা করা অপর প্রতিষ্ঠান এভারেস্ট রেস্তরাঁর মালিক আমিমুল এহসান মামুন বলেন, আমরা এখানে দীর্ঘ বছর যাবত ব্যবসা করি। এতদিন কেউ কিছু বলেনি। গুলশানের ঘটনার পর হঠাৎ করেই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলো। এ সড়ক দিয়ে ২৪ ঘণ্টা বাস-ট্রাক চলে। তাহলে এটা আবাসিক এলাকা হলো কী করে? এমন প্রশ্নের বিপরীতে রাজউক ম্যাজিন্ট্রেট খন্দকার জাকির হোসাইন জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের অভিযান চলবে। নোটিসের বিষয়টি একটি কমন অভিযোগ। রাজধানীতে অননুমোদিত সকল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করা হবে। তাই অবৈধ স্থাপনাধারীদের নিজ দায়িত্বে তা সরিয়ে নিতে এ বিষয়ে কয়েকদিন আগে থেকেই একটানা বিভিন্ন গণমাধ্যমে গণবিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। তাই এখানে আলাদা করে কাউকে নোটিস দেয়ার দরকার নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় কোন নোটিস প্রদান করা হয় না। কালকের জন্য পুলিশ না পাওয়ায় আবার ২৮ জুলাই এ এলাকাসহ উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। জানা গেছে, রাজউকের তালিকা অনুযায়ী উত্তরা এলাকায় হোটেল, রেস্তরাঁ ও স্কুল-কলেজসহ অননুমোদিত ৪শ‘ ৩৯টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়েছে। তবে এ তালিতা তৈরির কাজ শেষ হয়নি। প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক বাড়বে।
×