ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এনামুল হক

সুরের ঝর্ণাধারায় ইয়ং

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৬ জুলাই ২০১৬

সুরের ঝর্ণাধারায় ইয়ং

গত পঞ্চাশ বছর ধরে সুর ও ধ্বনির ঝর্ণাধারায় নিয়মিত সিক্ত হয়ে আছেন নীল ইয়ং। আর আছেন বলেই এর রূঢ় মর্মবস্তুও অনুধাবন করতে পেরেছেন। সে জন্যই ৭০ বছর বয়সী এই রক তারকা হৈ-হট্টগোলের মধ্যেও চড়া সুরটি অপ্রত্যাশিতভাবেই নির্মাণ করে থাকেন। তিনি বলেন আমি গাঙচিলের ধ্বনি শুনি, সাগর তরঙ্গের ধ্বনি শুনি, হর্ষধ্বনির মধ্যে আমি সব কিছুই শুনতে পাই। আমার কাছে এগুলো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার বলে মনে হয়। মনে হয় এক ঝাঁক বুনোহাঁস উড়ে চলেছে। এ যেন তারই ধ্বনি। সেই নীল ইয়ং এখন আমাদের ‘আর্থ’ এ্যালবামে সেই সব ধ্বনি শোনার সুযোগ দিয়েছেন যা তিনি নিজে শুনে থাকেন। ‘আর্থ’ একটা সেমি-লাইভ এ্যালবাম, যাতে রয়েছে ইয়ংয়ের গাওয়া ১৩টি গান। সেই সত্তরের দশকে তার গাওয়া ‘আফটার দ্য গোল্ড বাশ’ থেকে শুরু করে গত বছরের ‘স্পিড জাস্টিস’ পর্যন্ত গানগুলোর মধ্যে থেকে বেছে বেছে নেয়া হয়েছে। এই বসুন্ধরার ওপর আমাদের অর্থাৎ মনুষ্যজাতির প্রভাব সম্পর্কে ইয়ংয়ের ক্রমবর্ধমান উদ্বিগ্ন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটেছে এই এ্যালবামে। তার দীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে যত রেকর্ডিং হয়েছে এটি তার মধ্যে সবচেয়ে ব্যতিক্রমধর্মী রেকর্ডিংয়ের একটি। স্বভাবতই এর সঙ্গে আশির দশকে মুক্তিপ্রাপ্ত তার রেকর্ডগুলোর একটা তুলনা করার স্পৃহা জাগ্রত হয়। সে সময় তিনি ইলেকট্রনিক সঙ্গীত, রকাবিলি এবং আর এ্যান্ড বি নিয়ে মেতে থাকতেন। আর্থ এর মূল ট্র্যাকগুলো নেয়া হয়েছে তার কিছু প্রাণোদ্দীপক কনসার্ট সিরিজ থেকে যেখানে ইয়ং তখনও তারুণ্যদীপ্ত প্রাণশক্তিতে ভরপুর। তখন তার পেছনে ছিলেন এমন এক ব্যান্ডদল যার মধ্যে উনুসী নেলসনের দুই পুত্র লুকাস ও মিকাও ছিলেন। তবে ক্যালিফোর্নিয়ার মালিবুতে ইয়ংয়ের প্রিয় জুমা সৈকতের কাছে অবস্থিত স্টুডিওতে যখন গানগুলো রেকর্ডিংয়ের জন্য আনা হলো তখন তিনি তার দীর্ঘদিনের প্রযোজক জন হানলুনাক জানিয়ে দিলেন যে লাইভ এ্যালবামের যত রকমের নিয়মকানুন আছে তার প্রতিটি এক্ষেত্রে ছুড়ে ফেলে দিতে হবে। আর তাই তার গানের সুরে এসেছে সেই সব প্রাণী যাদের ইয়ং হর্ষধ্বনির মধ্যে আবিষ্কার করেছেন। এভাবেই এসেছে নেকড়ে, কামাট, মৌমাছি, তিমি, পাখি এবং এলকা নামক এক জাতীয় হরিণের ধ্বনি। তেমনি এসেছে গাড়ি ও মেশিনের আওয়াজ। জনতা ও সঙ্গীত উভয়ের মধ্য দিয়ে এগুলো বরণ করে নিয়ে আসা হয়েছে। ইয়ং তার এই নতুন এ্যালবামের মধ্য দিয়ে প্রকৃতির প্রতি, বিশ্ব জগতের প্রতি মমত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন যে কর্পোরেটগুলোর মুনাফার লালসা, রাজনৈতিক শক্তির নিষ্ক্রিয়তার কারণে পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে তাতে তিনি রীতিমতো ক্ষুব্ধ। এই অবস্থায় আশু অবস্থান দরকার বলে তিনি মনে করেন।
×