ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হারতে হারতে বেঁচে গেল মোহামেডান

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২৬ জুলাই ২০১৬

হারতে হারতে বেঁচে গেল মোহামেডান

রুমেল খান, চট্টগ্রাম থেকে ॥ রহমতগঞ্জকে জিততে দিল না মোহামেডান। সচেতন ফুটবলপ্রেমীরা নিশ্চয়ই অবাক হবেন বাক্যটি পড়ে। হয় তো বলবেন, মোহামেডান যেহেতু রহমতগঞ্জের চেয়ে সবসময়ই শক্তিধর, তাই লেখা উচিত ছিল মোহামেডানকে জিততে দিল না রহমতগঞ্জ। কিন্তু আদতে এর উল্টোটিই প্রতিফলিত হয়েছে। দুই দলের লক্ষ্যই ছিল জয়। কিন্তু কেউই জেতেনি। আবার হারেওনি। করেছে ড্র। স্কোরলাইন ১-১। সবাই জানে রহমতগঞ্জ হচ্ছে জায়ান্ট কিলার। আর ঢাকা মোহামেডান হচ্ছে ফেবারিট-শিরোপা প্রত্যাশী ও ঐহিত্যবাহী দল। কিন্তু জেবি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলে সোমবারের খেলা দেখে মনে হলো ঠিক উল্টোটাই! হারতে হারতে কোনমতে বেঁচে গেল মোহামেডান। তাও সেটা ‘পেনাল্টি’ নামক লাইফ লাইনকে কাজে লাাগিয়ে। শুরুতেই ধাক্কা খেল বাংলাদেশ আমলে সর্বাধিক ১২ বারের (পাকিস্তান আমলে ৭ বার, মোট ১৯ বার) লীগ চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড। গত লীগে মোহামেডান দুবারই রহমতগঞ্জকে হারায় যথাক্রমে ৫-০ এবং ১-০ গোলে। সর্বশেষ লড়াইয়ে উভয় দল ২-২ গোলে ড্র করে, ফেডারেশন কাপে। এবার লীগেও সেই ফলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখল রহমতগঞ্জ। ম্যাচে প্রথমেই গোল করে এগিয়ে যায় রহমতগঞ্জ। ম্যাচের তখন ১৭ মিনিট। মিডফিল্ডার মেহরাব হোসেন নয়নের কাছ থেকে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের মাথায় বল পান কঙ্গোর ফরোয়ার্ড সিও জুনাপিও। বাঁপায়ে বল রিসিভ করে ডান পায়ের ‘বুলেট’ শটে পরাস্ত করেন মোহামেডানের গোলরক্ষক মোহাম্মদ নেহালকে। আপ্রাণ চেষ্টা করেও বল রুখতে ব্যর্থ হন বেহাল হওয়া নেহাল (১-০)। উল্লাসে ফেটে পড়ে পুরনো ঢাকার ক্লাব রহমতগঞ্জের ফুটবলাররা-অফিসিয়ালরা। গোল খেয়ে যেন দিশেহারা হয়ে পড়ে সাদা-কালো শিবির। তারা অবশ্য হতচকিত ভাব কাটিয়ে খেলায় ফেলার চেষ্টা করে। বেশ কটি আক্রমণও করে। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতায় সেগুলোর কোনটাই মুখ দেখেনি আলোর। তাই বলে বসে ছিল না রহমতগঞ্জও। তারাও প্রতি-আক্রমণ করে ব্যতিব্যস্ত রাখে প্রতিপক্ষের রক্ষণদুর্গ। কিন্তু সফলকাম হয়নি। তাদের আক্রমণের সময় মোহামেডানের বেশিরভাগ খেলোয়াড়কেই দেখা গেছে ডিফেন্সে নেমে খেলতে, যা দেখে অবাক হয়েছে গ্যালারিতে খেলা উপভোগ করতে আসা ফুটবলপ্রেমীরা। ম্যাচ শেষে মোহামেডানের কোচ কাজী জসিমউদ্দিন আহমেদ জোসি বলেন, ‘খেলার গতিপ্রকৃতি বিচার করলে আমরাই এগিয়ে ছিলাম। কিন্তু প্রচুর ভুল করেছে দলের খেলোয়াড়রা। ডিসিশন মেকিং, পাসিং, ফিনিশিংয়ে ভুল ছিল। ব্যাড লাক। তবে আশা করি সামনে এই ভুল হবে না।’ কথায় আছে নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা। কোচ জোসিও অনেকটা এ ধরনেরই অজুহাত দিতে চাইলেন, ‘আসলে আমরা অনেকদিন পর ঘাসের মাঠে খেলছি। ঢাকায় অনুশলীন করেছি টার্ফে (বাফুফে আর্টিফিসিয়াল টার্ফে)। দুই-একদিন বুয়েটে ঘাসের মাঠে অনুশীলন করেছি। সেখানে অতিবৃষ্টিতে মাঠ ডুবে গেলে অনুশীলন করতে পারিনি।’ যখনই মনে হচ্ছিল, রহমতগঞ্জ নিজেরাই পরিণত হচ্ছে ‘জায়ান্ট’-এ, তখনই তাদের মাটিতে নামিয়ে আনে মোহামেডান। বুঝিয়ে দেয় তাদের জার্সির মাহাত্ম্য। তবে এজন্য তাদের আশ্রয় নিতে হয় পেনাল্টির। ম্যাচের তখন ৮১ মিনিট। রহমতগঞ্জের ডি বক্সের কাছকাছি বদলি মিডফিল্ডার আব্দুল মালেক বল পাস দেন আরেক সতীর্থ মিডফিল্ডার মাসুক মিয়া জনিকে। তিনি বল পেয়ে গোলমুখে যে শটটি নেন, তা বক্সের ভেতরে দাঁড়ানো রহমতগঞ্জের অধিনায়ক-ডিফেন্ডার শওকত রাসেলের হাতে গিয়ে লাগে। রেফারি ভারত চন্দ্র গৌড় পেনাল্টির বাঁশি বাজান। এ সময় রহমতগঞ্জের খেলোয়াড়রা আপত্তি জানালেও রেফারি তা গ্রাহ্য করেননি। নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। এরপর মোহামেডানের গিনি ফরোয়ার্ড-অধিনায়ক ইসমাইল বাঙ্গুরা পেনাল্টি থেকে অনায়াসেই গোল করে দলকে সমতায় ফেরান (১-১)। ঘাম দিয়ে যেন জ্বর ছাড়ে জোসির শিষ্যদের। শেষ পর্যন্ত বাকি সময়টাতে দুই দলই আর কোন গোল করতে না পারলে ড্র করে ও পয়েন্ট ভাগাভাগি করে মাঠ ছাড়ে। দুই আবাহনীর দ্বৈরথ অমিমাংসিত স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ লীগ শুরুর আগে দুই দলেরই ঘোষণা ছিল শিরোপা জিততে চায় তারা এবং শুরুটা করতে চেয়েছিল জয় দিয়েই। তবে নিজেদের প্রথম খেলায় (সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত) কেউ কাউকে হারাতে পারেনি। ১-১ গোলের স্কোরলাইনেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে উভয় দলকে। প্রথমার্ধে আক্রমণাত্মক খেলা ঢাকা আবাহনী খেলার ৩৫ মিনিটে এগিয়ে যায় নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড সানডে চিজোবার গোলে। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা ছিল মামুনুলদেরও। নিজেদের মাঠে দর্শকদের জয়ের স্বাদ এনে দিতে প্রাণপণ চেষ্টাও করেছে জোসেফ প্যাভলিকের শিষ্যরা। অবশেষে তাদের সেই প্রচেষ্টা সফল হয় খেলার ৭৫ মিনিটে। মামুনুলের কর্নারে মাথা ছুঁয়ে বল জালে পাঠান বদলি মিডফিল্ডার রুবেল মিয়া। সমতায় ফেরে স্বাগতিক দল চট্টগ্রাম আবাহনী। যতটা আশা করা হয়েছিল স্বাগতিক দল চট্টগ্রাম আবাহনীর খেলা দেখতে গ্যালারিতে প্রচুর দর্শক সমাগম হবে। কিন্তু গ্যালারি ততটা ভরেনি। অথচ এই ভেন্যুতেই গত বছর শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বে জাহিদ হোসেনের গোলে ঢাকা আবাহনীকে হারিয়েছিল চট্টলার এ দলটি। এছাড়া গত লীগের প্রথম পর্বের খেলায় চট্টগ্রামকে ২-০ গোলে হারায় ঢাকা আবাহনী। দ্বিতীয় পর্বে অবশ্য দুই দলের ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়।
×