ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

আলোচনা গান ও কবিতায় তাজউদ্দীনকে শ্রদ্ধাঞ্জলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৬ জুলাই ২০১৬

আলোচনা গান ও কবিতায় তাজউদ্দীনকে শ্রদ্ধাঞ্জলি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য চরিত্র তাজউদ্দীন আহমদ। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে রেখেছেন অবিস্মরণীয় অবদান। পাকবাহিনীর হাতে বঙ্গবন্ধুর বন্দীদশায় মূলত তার সফল নেতৃত্বেই অর্জিত হয় বাঙালীর বিজয়। শনিবার ছিল এই জননায়কের ৯১তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে সোমবার তাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। বিশিষ্ট বক্তাদের আলোচনায় এবং গানের সুরে ও কবিতার ছন্দে প্রিয় নেতাকে জানানো হয় জন্মদিনের ভালবাসা। পাঠ করা হয় তার লেখা চিঠি এবং তাকে লেখা অন্যদের চিঠি। শ্রাবণের বিকেলে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাজউদ্দীন আহমদকে নিবেদিত আলোচনায় অংশ নেন- প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব এইচটি ইমাম এবং তাজউদ্দীনের মেয়ে সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি। সূচনা বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডাঃ সারওয়ার আলী। সূচনা বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডাঃ সারওয়ার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চমৎকার করে তুলে ধরেন তাজউদ্দীনের ভূমিকা। তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। তার জীবন, কর্ম ও মৃত্যুÑ এ তিনটি অধ্যায়কে বিবেচনায় নিলে স্বাধীন দেশের ট্র্যাজিক হিরো তাজউদ্দীন আহমদ। তার রাজনৈতিক জীবনকে তিনটি পর্যায়ে বিন্যাস করা যায়। মুক্তিযুদ্ধপূর্ব, মুক্তিযুদ্ধকালীন ও স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনÑ এ তিনটি অধ্যায়েই তিনি ভূমিকা রেখেছেন। তাজউদ্দীন আহমদের পর্যায়ের সংগঠক এ অঞ্চলে আর জন্মায়নি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ছিল তার জীবনের উজ্জ্বলতম অংশ। মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের বিশাল কর্মযজ্ঞ তিনি প্রায় একাই সামলেছেন। ভারতে শরণার্থীদের আশ্রয় নিশ্চিত করা, প্রশাসনকে দাঁড় করানো কিংবা সেক্টর কমান্ডারদের সমন্বিত করে যুদ্ধ পরিচালনার মতো গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন নিপুণ দক্ষতায়। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাজউদ্দীনের বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে সারওয়ার আলী বলেন, বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। এই দুই মহান নেতার বিচ্ছেদের ফলে দেশের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। তবে আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন তাজউদ্দীন। নিজের জীবন দিয়েই তিনি সেটা প্রমাণ করেছেন। এইচটি ইমাম বলেন, বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীন আহমদের কথা মনে পড়লে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। তাদের সঙ্গে কাজ করেছি এবং উৎসাহ-প্রেরণা পেয়েছি। দেশের জন্য যদি কিছু করে থাকি তা তাদের প্রেরণাতেই করেছি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর পরেই যে নামটি আসে সেটা হচ্ছে তাজউদ্দীন আহমদ। আর বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে অনুগত সঙ্গী কর্মবীর ব্যক্তিটি হচ্ছেন তাজউদ্দীন আহমদ। সে সময় আরও অনকে নেতা ছিলেন, সবাই ভিন্ন ভিন্নভাবে কাজ করেছেন। তবে তাজউদ্দীনের ভূমিকা ছিল অনন্য। সিমিন হোসেন রিমি বলেন, তিনি দেশকে অন্যরকম মর্যাদায় দেখতে চাইতেন বলেই, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। বর্তমানের জঙ্গীবাদ ও অস্থির সময় থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সবল করতে হবে। এর মাধ্যমেই তাজউদ্দীন আহমদের প্রতি সম্মান জানানো হবে। পিতার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, তিনি ছিলেন অত্যন্ত নিবেদিত, আদর্শবান মানুষ। তিনি ছাত্রজীবনে যে দুরদর্শী চিন্তাভাবনায় বিশ্বাস করতেন, রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পরও তা থেকে বিচ্যুত হননি। তিনি আড়ম্বরহীন মানুষ ছিলেন, ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। সিমিন হোসেন রিমি বলেন, আদর্শবাদ ও নীতিবোধে উজ্জ্বল এক গণমনস্ক মানুষ ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। তিনি দেশকে অন্যরকম মর্যাদায় দেখতে চাইতেন বলেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তাই জঙ্গীবাদ বা বিশৃঙ্খলা থেকে নিস্তার পেতে হলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সবল করতে হবে। এর মাধ্যমেই তাজউদ্দীন আহমদের প্রতি প্রকৃত সম্মান জানানো হবে। সিমিন হোসেন আরও বলেন, তাজউদ্দীন ছাত্রজীবনে যে দুরদর্শী চিন্তাভাবনায় বিশ্বাস করতেন, রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পরও তা থেকে বিচ্যুত হননি। আড়ম্বরহীন এই মানুষটি সব সময় কর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। অনুষ্ঠানে তাজউদ্দীন আহমদের লেখা দুটি চিঠি এবং তাকে লেখা ইন্দিরা গান্ধীর চিঠি পাঠ করেন বাচিকশিল্পী সৈয়দ শহীদুল ইসলাম নাজু। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করেন ঢাকা স্বরকল্পন। সম্মেলক সঙ্গীত পরিবেশন করে ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন উদ্্যাপন ॥ সোমবার ছিল অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ৭৭তম জন্মদিন। আলোকিত মানুষ গড়ার এই কারিগরের জন্মদিন উদ্্যাপনের আয়োজন করে তারই প্রতিষ্ঠিত সংগঠন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। কেক কাটার পাশাপাশি ফুলেল ভালবাসায় জানানো হয় জন্মদিনের শুভেচ্ছা। গাওয়া হয় গান এবং পাঠ করা হয় কবিতা। তাকে নিবেদন করে কথা বলেন বিশিষ্টজনরা। কেন্দ্রের মিলনায়তনে সন্ধ্যায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঘড়ির কাঁটায় তখন পেরিয়েছে সন্ধ্যা ৭টা। শুভাকাক্সক্ষী ও অনুরাগীদের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ মিলনায়তন। সবার প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে মিলনায়তনে প্রবেশ করলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। তার আবির্ভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন সবাই এবং ঝড়ে পড়ল তুমুল করতালি। এভাবেই উষ্ণ অভ্যর্থনার মধ্যেই মিলনায়তনের সুনির্দিষ্ট আসনে গিয়ে বসে তিনি। এ সময় তার সঙ্গে মঞ্চে আসন নেন সহধর্মিণী ছাড়াও অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কেন্দ্রের ট্রাস্টি মনসুর আহমেদ চৌধুরী, সাবেক সচিব শফিক আলম, ড. মাহমুদুল হক প্রমুখ।
×