ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আরও ২৭ শিশু উদ্ধার

মলদ্বারে বাতাসেই সাগরের মৃত্যু হয়েছে ॥ এক কর্মকর্তা রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৬ জুলাই ২০১৬

মলদ্বারে বাতাসেই সাগরের মৃত্যু হয়েছে ॥ এক কর্মকর্তা রিমান্ডে

বিডিনিউজ ॥ মলদ্বারে বাতাস ঢোকানোয় অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তুলা কারখানার শিশু শ্রমিক সাগর বর্মণের মৃত্যু হয়েছে বলে মরদেহের ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসক জানিয়েছেন। সোমবার ময়নাতদন্তে সাগরের পায়ুপথে এবং ভেতরে জখমের চিহ্ন পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আ খ ম শফিউজ্জামান। পরে চিকিৎসক শফিউজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘তার পায়ুপথে ও পায়ুপথের ভেতরে জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আমরা অনেকটা নিশ্চিত যে, পায়ুপথে বাতাস ঢোকানোর কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। শরীরের ভেতরে আমরা রক্তক্ষরণের আলামত পেয়েছি। ভিসেরা পরীক্ষার জন্য ওই রক্ত সংগ্রহও করা হয়েছে।’ রবিবার রূপগঞ্জ উপজেলার যাত্রামোড়া এলাকায় জোবেদা টেক্সটাইল এ্যান্ড স্পিনিং কারখানায় দশ বছর বয়সী সাগরকে মলদ্বারে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ জাকারিয়া জানিয়েছিলেন, দুপুর ২টার দিকে কারখানার অন্য শ্রমিকরা একটি পাম্প থেকে সাগরের মলদ্বার দিয়ে বাতাস দিলে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে বিকেল ৪টায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ওই কারখানার চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে সাগরের পরিবার। এরা হলেনÑ জোবেদা টেক্সটাইল মিলসের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) নাজমুল হুদা, ব্যবস্থাপক (উৎপাদন) হারুনুর রশীদ, জ্যেষ্ঠ উৎপাদন কর্মকর্তা আজহার ইমাম ওরফে সোহেল এবং সহাকারী উৎপাদন ব্যবস্থাপক রাশেদুল ইসলাম। এদের মধ্যে নাজমুল হুদাকে রবিবার রাতেই আটক করা হয়েছে। সাগরের বাবা রতন বর্মণও ওই কারখানার শ্রমিক আর মা লাবণ্য বর্মণ গৃহিণী। সাগর দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট। পরিবারটি রূপগঞ্জ উপজেলার দীঘি বরাব এলাকার সাত্তার মেম্বারের বাড়ির ভাড়া বাসায় থাকে। রতন বর্মণের পৈত্রিক বাড়ি নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি উপজেলার রাজিবপুর গ্রামে। খুলনায় মলদ্বার দিয়ে বাতাস ঢুকিয়ে শিশু রাকিবকে হত্যার এক বছরের মধ্যে এ ঘটনা ঘটল। গত বছরের ৪ আগস্ট রাকিব হত্যা মামলায় ওই বছরের ৮ নবেম্বর দু’জনের ফাঁসির রায় হয়েছে। এদিকে শিশু শ্রমিক সাগর বর্মণ হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার কারখানা ব্যবস্থাপক নাজমুল হুদাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের হেফাজতে দিয়েছে আদালত। সোমবার বিকেলে জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আশিক ইমাম এ আদেশ দেন। রূপগঞ্জের যাত্রামোড়া এলাকায় জোবেদা টেক্সটাইলে রবিবার দুপুরে মলদ্বারে বাতাস ঢুকিয়ে সাগর বর্মণ (১০) নামে এক শিশুকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় রাতেই কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) নাজমুল হুদাকে আটক করে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, গ্রেফতার নাজমুল হুদাকে বিকেলে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর আগে তুলা কারখানার শিশু শ্রমিককে হত্যার ঘটনায় চার কর্মকর্তার নামে মামলা করে নিহতের পরিবার। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও তিন-চারজনকে আসামি করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রূপগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, মামলায় নিহত সাগরের বাবা অভিযোগ করেছেন, ওই কারখানায় কর্মরত সব শিশু শ্রমিককেই নানা অজুহাতে সময়-অসময় মারধর করা হতো। সাগর এর প্রতিবাদ করত বলে তার প্রতি কর্মকর্তাদের ক্ষোভ ছিল। এ কারণে তাকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। কারখানা থেকে ২৭ শিশু উদ্ধার ॥ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মলদ্বারে বাতাস ঢুকিয়ে শিশু শ্রমিককে ‘হত্যার’ ঘটনার পর জোবেদা টেক্সটাইল থেকে ২৭ শিশু শ্রমিককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে এ অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জাকারিয়া। জোবেদা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ছাড়াও এখলাস স্পিনিং মিলস লিমিটেড ও আজহারুল স্পিনিং মিলস লিমিটেডও একই সীমানা প্রাচীরের ভেতর অবস্থিত। শিশু সাগর ও তার বাবা জোবেদা টেক্সটাইলে কাজ করত। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জাকারিয়া জানান, জোবেদা টেক্সটাইলে অভিযান চালিয়ে ২৭ শিশু শ্রমিককে উদ্ধারের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রাথমিক গোয়েন্দা তথ্যে জানা গেছে, ওই তিন কারখানায় সাড়ে চার হাজার শ্রমিক রয়েছে। এর মধ্যে শিশু শ্রমিক ১২শ’র মতো। এ বিষয়টি অনুসন্ধান করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ওই কারখানার মালিকপক্ষের কিছু লোক সারাদেশ থেকে শিশু শ্রমিক সংগ্রহ করে আনে। তাদের নামমাত্র মজুরি দেয়া হয়। আমরা শিশু সাগর বর্মণ হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। একই সঙ্গে শিশুশ্রমের সঙ্গে জড়িতদেরও শাস্তি দাবি করছি। এ বিষয়ে জোবেদা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, এখলাস স্পিনিং মিলস লিমিটেড ও আজহারুল স্পিনিং মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোজাম্মেল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
×