ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৩০ আইডি ও ফ্যান পেজ বন্ধে বিটিআরসিকে চিঠি

জঙ্গীরা ইন্টারনেটে এখনও সক্রিয়, চলছে অনলাইন সম্মেলন

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৬ জুলাই ২০১৬

জঙ্গীরা ইন্টারনেটে এখনও সক্রিয়, চলছে অনলাইন সম্মেলন

আরাফাত মুন্না ॥ ‘যেসব ভাই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন এবং আপনারা যদি ধারণা করতে পারেন তিনি জিহাদের জন্য গেছেন, তবে তার ব্যাপারে নীরব থাকুন।’ এভাবেই ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিখোঁজ তরুণদের বিষয়ে কোন কথা না বলার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে পেজগুলো জঙ্গীরাই চালাচ্ছে। এদিকে জঙ্গী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ফেসবুকের ৩০টি আইডি ও ফ্যান পেজ বন্ধ করতে বিটিআরসিকে চিঠি দিয়েছে পুলিশ। গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তরাঁ ও শোলাকিয়ায় হামলার পর জড়িত তরুণদের নিখোঁজ থাকার বিষয়টি সামনে আসে। এরপরই যখন নানাভাবে নিখোঁজ তরুণদের নাম ও ছবি প্রকাশ করা হচ্ছে, ঠিক তখনই ফেসবুকে জঙ্গীপাতাগুলোয় এদের নিয়ে কোন কথা না বলার পরামর্শ প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া ব্লগ, অনলাইন ব্যবহারে সতর্ক থাকার পরামর্শও দিচ্ছে আনসার আল ইসলাম। পাশাপাশি তাদের ফেসবুক পেজে ঘোষণা দিয়ে অনলাইন সম্মেলন করে নানা বিষয়ে প্রশ্ন-উত্তর পর্বও পরিচালনা করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা মনিটরিংয়ের কথা বললেও এ ধরনের কোন কার্যক্রমই থামানো সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। সালাউদ্দিনের ঘোড়া, তোহফা মিডিয়া তাদের ওয়ার্ডপ্রেসের ব্লগে, ফেসবুকের পেজে হাজির করছে তাদের প্রতিদিনের কার্যক্রম। জঙ্গীদের ফ্যান পেজগুলোতে আওয়ামী লীগ বিরোধী প্রচারণাও চলছে দেদার। একটি পোস্টে লেখা, ‘তাগুত যত বেশি জনগণকে চেপে ধরবে আমাদের দাওয়াহ তত সহজে জনগণের কাছে তুলে ধরা যাবে... কেননা এদেশের জনগণের ৯৫ শতাংশ যে কোন মূল্যে আওয়ামী লীগের পতন চায়... তাই, আবারও বলছি, হাসিনার জঙ্গীবিরোধী কার্যক্রমকে নস্যাৎ করতে চূড়ান্ত নিরাপত্তা নেয়ার পাশাপাশি আম-ভাবে এই কার্যক্রমের ফলে সাধারণের ওপর আসন্ন জুলুম ও নিপীড়নের বাস্তবতা সহজ ও বিশদাকারে তুলে ধরা জরুরী... যার যার অবস্থান থেকে... এবং এর জন্য এখনই সর্বোৎকৃষ্ট সময়।’ ঘোষণা দিয়ে চলছে অনলাইন সম্মেলন ॥ অনলাইনে ঘোষণা দিয়ে সম্মেলনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সম্প্রতি ‘সালাউদ্দিনের ঘোড়া’ পেজ থেকে সরাসরি আইএসের বিষয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব আয়োজন করা হয়। মোহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ সেখানে পাকিস্তান বা আফগানিস্তানে যাওয়ার পথ জানতে চায়। কেউ কেউ ‘মুজাহিদ ভাই এবং জিহাদী কাজের জন্য সাহায্য করতে চাই’ বলে উল্লেখ করলে এগুলো ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’, ‘পরে জানানো হবে’ উত্তর দেয়া হয়। অনলাইন ব্যবহারে কেন সতর্ক হতে হবে তাদের, কীভাবে তাদের নিজেদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে হবে তা নিয়ে নানা পোস্টে ছেয়ে গেছে পেজগুলো। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গুলশান হামলার পর পেজটিতে বেশি পোস্ট দেয়া হয়েছে। তারা এত নিরাপদে দেশবিরোধী পোস্ট কিভাবে দিয়ে যাচ্ছে এবং এগুলো ঠেকাতে করণীয় জানতে চাইলে জঙ্গীবাদ নিয়ে গবেষণা করা নির্ঝর মজুমদার বলেন, ‘এ ধরনের প্রচারণা বন্ধ করার প্রথম পদক্ষেপ হলো- এ ধরনের সব পেজ, প্রোফাইল এবং সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটগুলো সুনির্দিষ্ট মনিটরিং মেকানিজমের আওতায় আনা। এগুলো নিয়মিত বন্ধ করা হলেও আবার চালু হয়ে যায় এবং অনেক সাধারণ মানুষ, যারা জঙ্গীবাদের দিকে ঝুঁকেছে, তারা লাইক, কমেন্ট বা শেয়ার করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় নিয়ে শাস্তি প্রদান জরুরী। জঙ্গীদের নির্দিষ্ট কিছু ট্যাগ এবং কি-ওয়ার্ড আছে। সেগুলো কোথায় ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটা নজরদারি করা গেলে এই কাজটা অনেকাংশে সহজ হয়ে যাবে।’ ৩০ পেজ-আইডি বন্ধে বিটিআরসিকে চিঠি ॥ ধর্মীয় উগ্র মতবাদ প্রচারের অভিযোগে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের ৩০টি পেজ ও আইডিকে চিহ্নিত করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। এসব পেজ বন্ধের জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনকে (বিটিআরসি) ডিএমপির পক্ষ থেকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এসব ফেসবুক পেজের মাধ্যমে নানারকম ধর্মীয় উগ্র মতবাদ প্রচার, জঙ্গী কার্যক্রম পরিচালনা, কথিত জিহাদের ডাকসহ রাষ্ট্রবিরোধী নানারকম অপকর্ম করা হচ্ছে। এ কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি করার পর এসব পেজকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চিহ্নিত করা ফেসবুক পেজগুলোতে নিয়মিত ধর্মীয় উগ্র মতামত প্রচার করা হয়। ধর্মীয় নানারকম অপব্যাখ্যা বা সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিয়ে কথিত জিহাদের প্রতি আকৃষ্ট করা হয়। এগুলো দেখে অনেকেই ভুল করে এসব পথে পা বাড়াচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে চিহ্নিত করা ফেসবুক পেজগুলো হলো-‘হিজবুল ইসলাম বাংলাদেশ, সালাউদ্দিনের তলোয়ার, বাংলার সৈনিক, গাজওয়া ই হিন্দ বা হিন্দুস্থানের চূড়ান্ত যুদ্ধ, শাইখ মুফতি মুহাম্মদ জসীম উদ্দিন রাহমানি, আবু উবাইদা আল মুজাহির, অনিমেষ রায় ফরইভার, মুফতি জসীমউদ্দিন রাহমানি হাফিজাহুল্লাহ বা এসো আল্লাহর পথে, রাসুল্লাহ (সা.) এর দেখানো পথে, আবাবিল মিডিয়া, আমি সেই, নির্ভীক মুজাহিদ, সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবি, কাকা আমুর, সামস বিন সাবাজ, জংগীর সঙ্গে কথোপকথন, গাজী মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, আবু হুজাইফা হুজাইফা, আল্লাহর পথের ঠিকানা, আশিদ্দাও আলাল কুফ্্ফার, নয়ন চ্যাটার্জি, জীবনের হিসাব, বার্বীপ্রিন্স, বাঁশের কেল্লা, রাফি বিন ওয়ালিদ, জঙ্গীনিউজ ২৪, আত-তামাকিন, কাঠ মোল্লা, অর্থহীন রাকিব ও বেহুলার ভেলা। ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, এই ৩০টি ফেসবুক আইডি বা পেজের বাইরেও আরও অনেক আইডিতে জঙ্গীরা সক্রিয় রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সেসব পেজ বা আইডি চিহ্নিত করে বিটিআরসিতে চিঠি পাঠিয়ে বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। ওই সূত্রটি আরও জানায়, জঙ্গীরা এখন অনলাইন বা ইন্টারনেটকে তাদের যোগাযোগ ও সাংগঠনিক কার্যক্রম বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। পারস্পারিক যোগাযোগ থেকে শুরু করে ধর্মীয় মতবাদ প্রচার করছে অনলাইনে। এসব পেজের এ্যাডমিন বা ব্যবহারকারীর বেশিরভাগই বিদেশে অবস্থান করে। ফলে তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা সম্ভব হয় না। সূত্রটি জানান, ফেসবুকের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্লগ ও ওয়েবসাইটেও চলছে ধর্মীয় উগ্র-মতবাদের প্রচারণা। এর আগেও বেশকিছু ফেসবুক পেজ, আইডি, ব্লগ ও ওয়েবসাইট বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু একটি বন্ধ করা হলে জঙ্গীরা নতুন নামে আরেকটি পেজ বা আইডি খুলে একই কাজ শুরু করে। ওই কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গীরা অনলাইনের মাধ্যমে সদস্যও সংগ্রহ করছে।
×