ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বড় সমস্যা পাকিস্তান ॥ আল কায়েদা তালেবানের চাইতে

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২৬ জুলাই ২০১৬

বড় সমস্যা পাকিস্তান ॥ আল কায়েদা তালেবানের চাইতে

পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ককে আল কায়েদা বা তালেবানের মতো জঙ্গী সংগঠনের চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ মনে করেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। শনিবার পাকিস্তানের জিও নিউজ সাক্ষাতকার প্রদানকালে প্রসঙ্গে তিনি এই মন্তব্য করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন পাকিস্তান এখনও সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে নিজেদের ভূখ- ব্যবহার করতে দিচ্ছে। খবর ডন ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের। জিও নিউজকে গনি বলেন, ‘পাকিস্তান একদিকে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপকে উদ্দেশ্য করে সংবিধান ও আর্মি এ্যাক্ট সংশোধন করছে, ন্যাশনাল এ্যাকশন প্ল্যান (এনএপি) প্রণয়ন করছে অন্যদিকে আরেকটি সন্ত্রাসী গ্রুপকে আফগানিস্তানে আতঙ্ক ছড়ানো ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালানোর সুযোগ করে দিচ্ছে। দেশটি কেন এমন দ্বৈত আচরণ করছে তা আমরা বুঝি না।’ পাকিস্তানের কোয়েটায় তালেবান যে অবাধে তৎপরতা চালানোর সুযোগ পাচ্ছে সেকথা উল্লেখ করে আফগান প্রেসিডেন্ট বলেন, সেখানকার তালেবান নেতাদের ঠিকানাও তিনি দিতে পারবেন। গনি বলেন, জোট বাহিনীর সহযোগিতায় আফগান নিরাপত্তা বাহিনী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) নেতা ফজলুল্লাহর বিরুদ্ধে ১১বার আক্রমণ চালিয়েছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘পাকিস্তান হাক্কানি নেটওয়ার্ক, মোল্লা ওমর অথবা মোল্লা মনসুরের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে এ রকম একটি উদাহরণও কি আপনি কি আমাকে দেখাতে পারবেন? মোল্লা মনুসর তো পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে করাচীর বাইরে সফর করেছেন। ফজলুল্লাহ কি একটিবারের জন্য আফগান পাসপোর্ট ব্যবহার করে কাবুলের বাইরে যেতে পেরেছেন’ প্রশ্ন রাখেন গনি। তিনি আরও অভিযোগ করেন, আফগানিস্তান যাদের সন্ত্রাসী গ্রুপ হিসেবে চিহ্নিত করেছে তাদের তারা ইসলামাবাদে তারা সরকারের সঙ্গে প্রকাশ্যে বৈঠক করছে। চলতি মাসের গোড়ার দিকেও গনির দফতর থেকে এরকম একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছিল। এতে উপজাতীয় এলাকায় পাকিস্তান সরকারের চালানো সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানের প্রশংসার পাশাপাশি হাক্কানি নেটওয়ার্ককে ওই অভিয়ানের বাইরে রাখায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। হাক্কানি নেটওয়ার্ককে আফগানিস্তান অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকি বিবেচনা করে থাকে। গনি পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো ১. ঘোষিত সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। এটি করা না হলে আফগানিস্তান পাকিস্তানের ওপর আস্থা রাখতে পারবে না। ২. শান্তি আলোচনা প্রত্যাখানকারীদের পাকিস্তান থেকে বের করে দেয়া হোক। ৩. শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কোয়াড্রিল্যাটারাল কোঅর্ডিনেশন গ্রুপের (কিউসিজি) সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হোক। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সমম্বয়ে চলতি বছর জানুয়ারিতে গ্রুপটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর মার্চে গ্রুপের প্রথম সম্মেলনটি হয়। পাকিস্তানের একান্ত আগ্রহ সত্ত্বেও তালেবান ওই সম্মেলনে যোগ দেয়নি। তোরখাম (খাইবার পাস) সীমান্তে সাঁজোয়া বহর ও সশস্ত্র সৈন্য মোতায়েনের পর গত মাস থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। ডুরান্ড লাইন নামে পরিচিত এই সীমানা আফগানিস্তান কখনও মেনে নেয়নি। বিষয়টি নিয়ে অতীতেও দুই দেশের মধ্যে সময় সময় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের জন্য আফগানিস্তান গর্ববোধ করে বলে গনি জানিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, গণতন্ত্রের প্রতি আফগানিস্তানের আগ্রহকে ভারত গুরুত্ব দেয়। এক প্রশ্লের উত্তরে গনি বলেন, ভারত আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক বন্ধু। এটি একটি গণতান্ত্রিক দেশ। তাদের সঙ্গে আমাদের অভিন্ন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রয়েছে। তিনি বলেন, একটি দেশ অপর আরেকটি দেশের সঙ্গে স্বাধীনভাবে সম্পর্ক গড়তে পারাটাই হলো স্বার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার মূলকথা।
×