ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিব্রত পুলিশ প্রশাসন

গাড়িচালককে সার্জেন্টের বুটের আঘাত, তোলপাড়

প্রকাশিত: ০৮:০৩, ২৫ জুলাই ২০১৬

গাড়িচালককে সার্জেন্টের বুটের আঘাত, তোলপাড়

আজাদ সুলায়মান ॥ প্রথমে থাপ্পড়। তারপর মাটিতে ফেলে বুট দিয়ে আঘাত করে চেপে ধরা হয় তার মাথা। এমন পৈশাচিক তাণ্ডব দেখে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন পথচারীরা। তখনও হুঙ্কার থামেনি সার্জেন্ট মেহেদীর। বাধ্য হয়ে জনতাই উদ্ধার করেন চালক ইউসুফ গাজীকে। রাজধানীর ধানমণ্ডিতে শনিবার রাতে ঘটে পুলিশের এ তাণ্ডব। এ ঘটনার ভিডিও মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে। লাখ লাখ বার দেখা হয়েছে এ ভিডিও। বেশি নয়, মাত্র এক মিনিট ২১ সেকেন্ডের এ ভিডিওটি ঘটনার পরপরই আপলোড করে ছড়িয়ে দেয়া হয়। ইন্টারনেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তেই। শেয়ার পড়ে চার হাজারের মতো। এ ঘটনায় পুলিশের শীর্ষ মহলও বিব্রত। অবশ্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে ওই ‘গুণধর’ সার্জেন্টকে ক্লোজ করা হয়েছে। ২০১৫ সালের ব্যাচে যোগ দেয়া সার্জেন্ট মেহেদী এখনও শিক্ষানবিস পর্যায়ে রয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার বিকেলে মালিকের ছেলেকে নিয়ে ধানমণ্ডির ৭/এ সড়কের কেএফসি রেস্টুরেন্টে নামিয়ে দেন চালক ইউসুফ। তখন গাড়িটি রাস্তার এক পাশে পার্ক করেন। এ সময় ৭/এ সড়কের ট্রাফিক বক্সের সার্জেন্ট মেহেদী ইউসুফের কাছে কাগজপত্র দেখতে চান। এ নিয়ে দু’জনের বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে চালককে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন সার্জেন্ট। মারতে মারতে জোর করে মাটিতে শুইয়ে ইউসুফের মাথায় পা চেপে ধরেন মেহেদী। নিচে পড়ে চিৎকার করতে থাকেন চালক। এগিয়ে আসেন জনতা। তারা সার্জেন্টের পৈশাচিক কাণ্ড দেখে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এ নিয়ে সার্জেন্টের সঙ্গেও বাগ্বিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয় জনতার। লোকজন অনেকটা টেনেহিঁচড়েই চালককে উদ্ধার করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে ইউসুফকে পুলিশ বক্সে নিয়ে যান মেহেদী। আর পাশে থাকা তার গাড়িটি রেকারিং করে নিয়ে যাওয়া হয় ধানমণ্ডি থানায়। জনতার হাত থেকে উদ্ধার হওয়া চালককে ঢোকানো হয় থানাহাজতে। এদিকে মুহূর্তেই ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায় এ ঘটনার ভিডিওচিত্র। খবর পেয়ে ইউসুফের মালিক আরিফও ছুটে আসেন গুলশান থেকে। সঙ্গে আরও লোকজন। এ নিয়ে চলে থানায় দেন-দরবার। তখন পুলিশ একতরফা এই অভিযোগ-সেই অভিযোগ করতে থাকে। উল্টো ভিকটিম চালকের ওপরই দায় চাপানো হয়। এতে আরিফ বাধ্য হন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমঝোতার। এ সময় আরিফকে জানানো হয়, তার চালকের আইন অমান্যের জন্যই সার্জেন্টের একটি মোবাইল, একটি চশমা ও একটি ঘড়ি ভেঙ্গে গেছে। এজন্য দিতে হবে ক্ষতিপূরণ। অনন্যোপায় আরিফকে তাই হজম করতে হয়। ক্ষতিপূরণ বাবদ আরিফের কাছ থেকে আদায় করা হয় দশ হাজার টাকা। তোলপাড় করা এ ঘটনায় রাতেই ধানমণ্ডি থানায় একটি জিডি রেকর্ড করা হয় (নম্বর ১০৫০)। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে সার্জেন্টকে ক্লোজ করা হয়েছে। রবিবার সাংবাদিকরা ওই ফাঁড়িতে গেলে সার্জেন্ট মেহেদী আগের রাতের ঘটনার সব দায় চাপান চালক ইউসুফের ওপর। তবে কেন চালকের মাথায় পা চেপে ধরেছিলেন- তার কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি বলেছেন, চালক যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্যই এমনটি করেছিলাম। কিন্তু যারা বিক্ষুব্ধ জনতার পরিচয়ে ইউসুফকে ছিনিয়ে নিতে এসেছিল তারা মনে হয় জামায়াত-শিবিরের লোক। কারণ ওদের মুখে দাড়ি ছিল। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সার্জেন্ট মেহেদীর এক ঘনিষ্ঠ কনস্টেবল দাবি করেন, পুরো ঘটনার ভিডিও দেয়া হয়নি। দেয়া হয়েছে খ-িতাংশ। এতে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। এটি পূর্বপরিকল্পিত বলে মনে করেন তারা। এদিকে ফেসবুকে আপলোড হওয়া ভিডিও নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে পুলিশ প্রশাসনে। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের উপকমিশনার খান মোহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, এ ঘটনা তদন্তে এডিসি সোমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ওই ট্রাফিক সার্জেন্টকে ক্লোজ করা হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে সার্জেন্টের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×