ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এইচএম খান রাফি

দাম্পত্য জীবনের মান অভিমান

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ২৫ জুলাই ২০১৬

দাম্পত্য জীবনের  মান অভিমান

দাম্পত্য জীবনে মান অভিমান থাকবেই। কালো মেঘ আর দাম্পত্য কলহ যেন একই রকম। হাসি, খুশি, মান-অভিমান নিয়েই এ সম্পর্ক। মাঝে মধ্যে অনেক পরিবারে ছোটখাটো ঝগড়াঝাটি থেকেই ঘটে বড় রকমের বিপর্যয়। তিক্ততায় ভরে যায় মধুর ও ভালবাসার সম্পর্কটি। সন্তান ও পরিবারের অন্য সদস্যরা হন মানসিক চাপের শিকার। এসব কলহ থেকে বেরিয়ে এসে স্বামী-স্ত্রী দুজন যদি একটু সচেতন হয় তবে বিনা কষ্টে দাম্পত্যজীবন সুখের হয়। একটু মানিয়ে চলা, দুজন দুজনকে বোঝা ও দুজন দুজনকে ভালবাসাÑ এইটুকুই দিতে পারে সুখময় দাম্পত্য জীবন। দাম্পত্য সম্পর্কের ধরনটাই যেন এ রকমÑ কখনও আলো, কখনও আঁধার। তবে আজকের দম্পতিরা সত্যিই দিশেহারা। ঘরে-বাইরে জীবন ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতার মধ্যে চলে যাচ্ছে। ঘরের কাজকর্ম থেকে শুরু করে বাচ্চাদের লেখাপড়া পর্যন্ত। সবকিছুই যেন কঠিন ও অনিশ্চিত জীবনযাপন। স্বামী-স্ত্রী দুজনই নিজেদের কর্মস্থলে সমস্যার পর সমস্যা মোকাবেলা করে ক্লান্ত। ঘরে ফিরেও একটুও শান্তির অবকাশ নেই। ব্যক্তিত্ব আর আত্মমর্যাদার সঙ্কট প্রবল আকার ধারণ করে। তবে দুজনই পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও আন্তরিকতা নিয়ে চললে সম্পর্কটা সহজ হয়। জীবনসঙ্গী যদি সংসারের প্রতি ইতিবাচক থাকেন, তবে ত্যাগ-তিতিক্ষা, খিটিমিটি জড়িয়ে দাম্পত্য জীবন সুন্দর হয়। সবকিছুর মধ্যে ভুল ধরতে না যাওয়া, সব ব্যাপার নিয়ে কলহের ভাবনা থেকে দূরে থাকলে সম্পর্কটা সমস্যা হয় না, সন্তানরাও বেড়ে ওঠে সুন্দর মনোরম পরিবেশে। দাম্পত্য জীবনে কলহ অত্যন্ত স্বাভাবিক একটা বিষয়। ভালবাসা সমঝোতা-মমতার মতোই মতবিরোধ, মতপার্থক্য দাম্পত্য জীবনের একটি অঙ্গ। কিন্তু দাম্পত্য জীবনে সম্পর্ক তখনই অস্বাভাবিক রূপ ধারণ করে, যখন স্বামী তার স্ত্রীকে সন্দেহ করা ও স্ত্রী তার স্বামীকে সন্দেহ করা, বোঝাবুঝি তিক্ততা, পরস্পরকে হেয়প্রতিপন্ন করার প্রবণতা, অবিশ্বাস ইত্যাদি। বিবাহিত জীবন কেবল স্বামী স্ত্রীর মধ্যেই সীমাবদ্ধতা থাকে না। এতে জড়িত পরিবারের অন্যান্য সদস্য, সমাজ-সংস্কৃতি। স্বামী-স্ত্রী দুজন স্বতন্ত্র মানসিকতার ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠা আলাদা মানুষ দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয় সাধন করে একটা সমঝেতায় পৌঁছে জীবনযাপন করতে চেষ্টা করেন। ওইখানে মানিয়ে চলাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভালবাসা ও সম্পর্কে কোন সমস্যা সৃষ্টি হলে তর্কে জিততে যাওয়ার একটা প্রবণতা বা নিজের মতকে প্রাধান্য দেয়াটা দাম্পত্য জীবনের কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয়। দাম্পত্য জীবন সম্পর্ক যেসব কারণে তিক্ত হতে পারে তার মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ব্যস্ততা ও একে অপরকে পর্যাপ্ত সময় দিতে না পারা, সাংসারিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা, মানসিকতার পার্থক্য, তৃতীয় ব্যক্তিকে জড়িয়ে সন্দেহ। মন-মেজাজ তিক্ত থাকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি। দাম্পত্য জীবনে দুজনের একটু মানিয়ে চলাটাই সম্পর্ক সুন্দর করে তোলে ও সুখী হয়। আবার মানিয়ে চলা শুধু দাম্পত্য সম্পর্ক নয়, সব সম্পর্ক সহজ সুন্দর করে নিতে হয়। স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে বলা যায়, মেনে নেয়াটা যেন একতরফা না হয়। কারণ আমরা দেখি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েরাই বেশি ত্যাগ করে। ভুল ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কেননা আজকের শিক্ষিত ও কর্মজীবী মেয়েদের জন্য দাম্পত্য জীবন একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এখানে তাকে একই সঙ্গে সুদক্ষ অফিসকর্মী, স্ত্রী, বন্ধু, সুচারু গৃহিণী, মা ইত্যাদি ভূমিকা পালন করতে হয়। একই সঙ্গে সংসারের সব ঝামেলাও অনেক সময় এক হাতেই সামলাতে হয়। তাই ত্যাগের ক্ষেত্রে মানিয়ে চলার ক্ষেত্রটা যেন একজনের ঘাড়ে না চেপে যায় সেদিকটায় সচেতন হতে হবে। ছোটখাটো ও বড় সমস্যায় সমঝোতার মধ্য দিয়ে যদি দুজন সুন্দর মানিয়ে চলেন তবে সম্পর্কটা অনেক ক্ষেত্রে সহজ হয়। মধুর হয় দাম্পত্য জীবন। সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ
×