ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী ও সন্ত্রাস প্রতিরোধ প্রাধান্য পাবে ॥ ২৭ জুলাই যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল

দিল্লীতে বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক ২৮ জুলাই

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৫ জুলাই ২০১৬

দিল্লীতে বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক ২৮ জুলাই

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ জঙ্গী ও সন্ত্রাস প্রতিরোধকে প্রাধান্য দিয়ে আগামী ২৮ জুলাই দিল্লীতে বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শুরু হবে। এতে দুই দেশের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি ও বন্দী বিনিময় চুক্তি সংশোধনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বৈঠকে যোগ দিতে আগামী ২৭ জুলাই চারদিনের সফরে দিল্লী যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। নয়াদিল্লীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও বৈঠক করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। দিল্লীতে এই বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। অন্যদিকে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন সেদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। বৈঠকে উভয় দেশের গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। দিল্লী সফরের সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক ছাড়া রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সঙ্গেও সাক্ষাত হতে পারে। ঢাকা ও দিল্লীর কূটনৈতিক সূত্র জানায়, দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে জঙ্গী ও সন্ত্রাস প্রতিরোধের ইস্যুটিই প্রাধান্য পাবে। ঢাকার গুলশানে জঙ্গী হামলার পর উভয় দেশই জঙ্গীবাদ প্রতিরোধের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এছাড়া ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামিক স্টেট (আইএস) প্রতিরোধে দুই দেশ কিভাবে কাজ করবে সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে। বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্দী বিনিময় চুক্তির সংশোধনের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সহজে অপরাধী হস্তান্তরের লক্ষ্যে এই সংশোধন করা হতে পারে। এখন অপরাধী হস্তান্তরের ক্ষেত্রে আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তবে বন্দী বিনিময় চুক্তি সংশোধন হলে আদালতের রায়ের জন্য আর অপেক্ষা করতে হবে না। খুব দ্রুত দুই দেশ বন্দী বিনিময় করতে পারবে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বন্দী বিনিময় চুক্তি হওয়ার পর তা বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। ভারতের পক্ষ থেকে চুক্তির এই অংশ সংশোধনের প্রস্তাব দেয়া হলে সম্প্রতি মন্ত্রিসভা বৈঠকে বন্দী বিনিময় চুক্তির সংশোধনী আনা হয়। এছাড়া এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে ভিসা ব্যবস্থা সহজ করা নিয়েও আলোচনা হতে পারে। এছাড়া ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন সহজে ভিসা দেয়ার জন্য যে সাময়িক ব্যবস্থা চালু করেছিল, তা নিয়মিত করা নিয়েও আলোচনা হতে পারে। একই সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় অপরাধের বিষয়টিও আলোচনায় উঠবে। সূত্র জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশের তরফে সন্দেহভাজন জঙ্গীদের একটি তালিকা ভারতের হাতে তুলে দেয়া হতে পারে। সন্দেহভাজন এই জঙ্গীরা দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে লুকিয়ে রয়েছে বলে সন্দেহ করছে বাংলাদেশ। দিল্লীর কূটনৈতিক সূত্র জানায়, দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের আগেই ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে বিশেষ ব্রিফিং দিতে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের ব্যবস্থা করেছে। এতে ভারতের হায়দরাবাদ, নাসিক, বিজনোর, ভটকল, কোঝিকোর বা কাসাদগড়, মুজাফফরনগরের মতো বিভিন্ন শহরে আইএস কিভাবে জাল বিস্তার ও তরুণদের রিক্রুট করছে সেটা তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের জামা’আতুল মুজাহিদীন বা জেএমবি জঙ্গীরা কিভাবে শিকড় বিস্তার করছে সেটাও তুলে ধরবেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। ২৭ জুলাই দিল্লীতে পৌঁছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএর সদর দফতরে যাবেন। এসময় এনআইএর প্রধান শারদ কুমারের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এখানে ভারত ও বাংলাদেশজুড়ে জঙ্গীদের সাম্প্রতিক তৎপরতা নিয়ে দু’জনের মধ্যে আলোচনা হবে। ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র দত্তাওয়ালিয়া জানিয়েছেন, বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব মহর্ষি, উত্তর-পূর্ব ভারতের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব সত্যেন্দ্র গর্গ, বিএসএফের ডিজি এ কে শর্মা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ বিষয়ক যুগ্ম সচিব শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথন এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। বাংলাদেশের ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলে স্বরাষ্ট্র সচিব মোজাম্মেল হক খানও রয়েছেন।
×