ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অভিনব চিকিৎসায় ৫ বছর বাক্সবন্দী শিশু অমৃত

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৫ জুলাই ২০১৬

অভিনব চিকিৎসায় ৫ বছর বাক্সবন্দী শিশু অমৃত

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ প্রায় পাঁচ বছর ধরে দু’পা বেঁধে রেখে বাক্সবন্দী অভিনব চিকিৎসা চলছে শিশু অমৃত রায়ের (৯)। অর্থের অভাবে দুঃসহ কষ্টকর অভিনব পন্থায় চিকিৎসা থেরাপি দেয়া হচ্ছে তাকে। উন্নত চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন, তাই নিরুপায় পরিবারটির এ চিকিৎসার ওপর শেষ ভরসা। মংলা উপজেলার বুডিরডাঙ্গা ইউনিয়নের বানবুনিয়া গ্রামের হতদরিদ্র এক পরিবারে দেখা গেছে এ চিত্র। শিশু অমৃত রায়ের পিতা পীযূষ কান্তি রায় পেশায় একজন দিনমজুর। মা পরিতা রায় গৃহিণী। এ পরিবারে ৪ জনের সংসার বেশ ভালই কাটছিল। পীযূষ কান্তির এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে স্মৃতি রায় স্কুলের গ-ি পেরিয়ে এখন দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ছে। আর অমৃত রায় এ বয়সে স্কুলে যাওয়ার কথা। কিন্তু ভাগ্য বিড়ম্বনায় এখন বন্দিশালায় জীবন কাটছে তার। মা’ পরিতা রায় জানালেন, ৯ বছর আগে তার কোলজুড়ে আসে অমৃত রায়। হাসপাতালে সিজারে স্বাভাবিক শিশু হিসেবে ভূমিষ্ঠ হয় সে। তখন তাকে নিয়ে বেশ উৎসব-আনন্দ ছিল তাদের পরিবারে। দু’বছর বয়স পেরুনোর আগেই আকস্মিক জ্বরে সব কিছু এলোমেলো হয় যায়। প্রথম দিকে পরিবারের কেউ কিছু বুঝে উঠতে না পারলেও অমৃত রায়ের বেড়ে ওঠার চেষ্টায় ধরা পড়ে এক পা আর এক হাতের অক্ষমতা। তারপর তাকে নিয়ে পরিবারের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয় এখান থেকে সেখানে। নানা রকম চিকিৎসা ব্যবস্থায় ছুটতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে পরিবার। দিনমজুর পিতাও এখন আর অবুঝ শিশু পুত্রের চিকিৎসা ব্যয়ের জোগান দিতে পারছেন না। এমনকি মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু নেই এ পরিবারের। গ্রামের কমিউনিটি হাসপাতালের সরকারী জমিতে খড়কুটার ঘরে কোনমতে বসবাস। যখন-তখন এখান থেকেও উচ্ছেদ হতে হবে এমন আশঙ্কা পরিবারের। একমাত্র শিশু পুত্রের দুর্বিষহ জীবনের দুশ্চিন্তায় অবিরাম কান্না আর নিদ্রাহীনতায় রাত কাটছে মা পরিতা রায়ের। এখন যেন চোখের জলও শুকিয়ে গেছে। ছেলের চিকিৎসা ব্যবস্থার কথা বলতে গিয়ে আঁচল দিয়ে নিদ্রাহীন চোখ মুছতে লাগলেন। বললেন, ছেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রায় ৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। এত টাকার জোগান নেই বলেই কবিরাজের দেয়া থেরাপি অনুযায়ী ঘরেই নিজস্ব থেরাপিতে তার চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। যে বয়সে অমৃত রায় পাড়ার অন্য শিশুদের সঙ্গে বই খাতা নিয়ে স্কুলে কিংবা ঘুরে বেড়ানোর কথা সেই বয়সে তাকে নিয়তির জালে বন্দী হতে হয়েছে। সকালে ও রাতে ২ ঘণ্টা করে তাকে দু’পা একত্রে করে দাঁড় করিয়ে বেঁধে রাখা হয় কাঠের তৈরি থেরাপিবক্সে। আর দিনের বাকি সময় কাটে বিছানায়। একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান আর আধুনিকতার এ যুগে নিজস্ব থেরাপির এমন চিকিৎসা ব্যবস্থায় কতটুকু সেরে উঠবে অবুঝ এ শিশুটি তা জানা নেই পরিবারের।
×