ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি

ফেরি চলাচলে অচলাবস্থা

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ২৫ জুলাই ২০১৬

ফেরি চলাচলে অচলাবস্থা

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ প্রচ- স্রোত আর ঘূর্ণাবর্তে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি ফেরি চলাচলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফেরির গতির চেয়ে স্রোতের গতি বেশি হওয়ায় ফেরিগুলো পদ্মা পাড়ি দিতে হিমশিম খাচ্ছে। আট নটিক্যাল মাইল স্রোতের বিপরীতে ঝুঁকি নিয়ে কোনমতে ফেরি চলছে। উজান থেকে স্রোতের সঙ্গে পলি মাটি ধেয়ে আসায় লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে সৃষ্টি হচ্ছে ডুবোচরের। তিন দিনের হাইড্রোগ্রাফি জরিপ শেষে এমনটি আশঙ্কা করা হয়েছে। রবিবার জরিপ প্রতিবেদন বিআইডব্লিউটিএর প্রধান কার্যালয়ে জমা হয়েছে। দুই সদস্যের হাইড্রোগ্রাফি জরিপের প্রধান বিআইডব্লিউটিএর সহকারী পরিচালক মোমরেজ আলম। আর ডুবোচরের সৃষ্টি হলে আসন্ন কোরবানির ঈদের আগে এ নৌরুটে ফেরি পারাপারে অচলাবস্থার আশঙ্কা করছে একাধিক সূত্র। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে। বিআইডব্লিউটিসির এজিএম খালেদ নেওয়াজ জানান, উজানের পানির তোড়ের সঙ্গে সঙ্গে পদ্মায় স্রোতের তীব্রতায় হুমকির মুখে পড়ছে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটের ফেরি। আট নটিক্যাল মাইল বেগে ধেয়ে আসা স্রোতের বিপরীতে ১০ নটিক্যাল মাইল গতির কয়েকটি ফেরিও কুলাতে পারছে না। লৌহজং টার্নিং পয়েন্ট হতে চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে এ অবস্থা। তাছাড়া টার্নিংয়ে ওই পয়েন্টে ভেসে এসে পদ্মার ঘূর্ণাবর্তে আটকা পড়ছে প্রচুর কাশগাছের লতাপাতা। এতে ফেরিগুলো যখন ওই পয়েন্টে যাচ্ছে তখন কাশগাছের লতাপতা ফেরির প্রপেলারে জড়িয়ে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সাধারণত শিমুলিয়া থেকে কাওড়াকান্দি যেতে দেড় ঘণ্টার মতো সময় লাগত। কিন্তু এখন আট নটিক্যাল মাইল গতির উজানে ফেরিগুলোকে পদ্মা পাড়ি দিতে আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে। এক ঘণ্টারও বেশি অতিরিক্ত সময় লাগায় যাত্রীরা চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছে। লৌহজং টার্নিংয়ের মুখে স্রোতের কারণে ফেরি চলাচলে সমস্যা দেখা দিলেও পানির গভীরতা সম্পর্কে ফেরিগুলোর ইকোসাউন্ডার দিয়ে ধারণা নেয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এভাবে সতর্কতার সঙ্গেই ফেরি চরাচল করতে হচ্ছে। তাছাড়া কিছু ফেরি বন্ধ ও পারাপারে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হওয়ায় শিমুলিয়া ঘাটে দুই শতাধিক যানবাহনসহ উভয় ঘাটে আটকা পড়েছে চার শতাধিক যানবাহন। আকস্মিক পানি বেড়ে শনিবার থেকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ ফেরি সার্ভিসকে চ্যালেঞ্জে ফেলে। প্রবল স্রোত মোকাবেলা করতে গিয়ে রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর শনিবার রাতে বিকল হয়ে যায়। এটি শিমুলিয়া ঘাটের ভাসমান ওয়ার্কশপে মেরামত করা হয়েছে। এদিকে সেদিন রাত ৯টায় শিমুলিয়া থেকে যানবাহন ভর্তি করে কাওড়াকান্দি যাওয়ার পথে স্রোতের মধ্যে আরেকটি রো রো ফেরি শাহ পরাণ নোঙর করতে বাধ্য হয় লৌহজং টার্নিংয়ে। স্রোতে ভেসে আসা নানা আগাছা ফেরিটির পাখায় এমনভাবে আটকে যায় যে, ফেরি নোঙর করতে বাধ্য হয়। এ নৌরুটে মোট ১৭টি ফেরি থাকলেও রবিবার চারটি রো রো ফেরি, চারটি কে টাইপ ফেরি ও ফরিদপুর নামে একটি ছোট ফেরি দিয়ে ফেরি পারাপার সচল রাখা হয়েছে। বাকিগুলোর গতি ঘণ্টায় আট নটিক্যাল মাইলের কম হওয়ায় এ ফেরিগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে চেষ্টা করা হচ্ছে ফ্ল্যাট বা টানা ফেরিগুলো চালানো যায় কি-না। কারণ এ ফেরিগুলোতে প্রচুরসংখ্যক গাড়ি একসঙ্গে পারাপার করা যায়। যদি এ ফেরিগুলো চালানো সম্ভব হয় তবে সহজেই যানজট নিরসন করা সম্ভব। প্রকৃতির বৈরিতার কারণে ফেরি চলাচলে যাত্রীসাধারণের ভোগান্তির কারণে দুঃখ প্রকার করে তিনি বলেন, এটি এক ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এতে আমাদের কোন হাত নেই। তাই এ দুর্যোগ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সকলকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীনের সেকেন্ড মাস্টার জগলুল হায়দার, শাহ পরাণের মাস্টার ইনচার্জ আব্দুল করিম ও টাগ আইটি বেলজিয়ামের মাস্টার ইনচার্জ আব্দুর রউফ জানান, বর্তমানে এ চ্যানেলের লৌহজং টার্নিংয়ে ঝুুঁকিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। চ্যানেলের মুখে পানির ঘূর্ণাবর্তে দ্রুত আড়ি (ডুবোচর) নেমে আসছে। তবে এ পয়েন্টে পানির ঘূর্ণাবর্ত ও গভীরতা কম থাকার ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও খুবই সতর্কতার সঙ্গে এখানে ফেরি চালাতে হচ্ছে। বর্তমানে এখানে ডাবল ওয়ে ফেরি চলাচল বন্ধ রেখে ওভারটেকিং করছে না কোন ফেরি। এতে সামান্য এ দূরত্ব অতিক্রম করতে রো রো ফেরির ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ও ফ্ল্যাট (ডাম্প) ফেরির ক্ষেত্রে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় বেশি লেগে যাচ্ছে।
×