ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাতিল হয়নি ৪৩৮ জঙ্গীর আইডি কার্ড

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ২৫ জুলাই ২০১৬

বাতিল হয়নি ৪৩৮ জঙ্গীর আইডি কার্ড

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ ছলাহুল, আবু ছালেহসহ ৪৩৮ জঙ্গীর জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিল হয়নি দুই বছরেও। এদের জঙ্গীপনায় সহযোগী স্থানীয় ধান্ধাবাজ কতিপয় জনপ্রতিনিধিসহ রোহিঙ্গাবান্ধব ৫১ ব্যক্তির বিরুদ্ধেও গ্রহণ করা হয়নি আইনানুগ কোন ব্যবস্থা। অথচ রোহিঙ্গাদের ভোটার ও জাতীয় পরিচয়পত্র পাইয়ে দেয়ার পেছনে সগযোগিতা ও তদ্বিরকারী রোহিঙ্গাবান্ধব ওই ৫১ ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উচ্চমহল থেকে ইতোপূর্বে নির্দেশনা দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট দফতরে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কক্সবাজারে পাঠানো ৫১ ব্যক্তির তালিকাটি বর্তমানে লালফিতায় ফাইলবন্দী রয়েছে সংশ্লিষ্ট থানায়। এদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি দেখে ওই জঙ্গীরা জাতীয় পরিচয়পত্র বহন করে নিজেদের স্থানীয় বাসিন্দা বলে দাবি করছে। জেএমবির সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন স্থানে নাশকতায় লিপ্ত হচ্ছে আরএসও ক্যাডাররা। জঙ্গীদের সহযোগিতায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গারা বস্তি তৈরি করে লেদা ও কুতুপালং ক্যাম্পের পাশে বসবাস করছে ১৯৯৪ সাল থেকে। এ রোহিঙ্গা সমস্যাকে জিইয়ে রাখতে আরএসও ক্যাডার ও আন্তর্জাতিক কয়েকটি চিহ্নিত সাহায্য সংস্থার (এনজিও) উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ওসব এনজিওর কর্মকর্তাদের অপতৎপরতার কারণে রোহিঙ্গা আরএসও ক্যাডাররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দেশব্যাপী জঙ্গীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চলছে দেখে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে অনেকে আত্মগোপনে চলে গেছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ কয়েক রাজনৈতিক নেতা নিষিদ্ধ ওই এনজিওর সেমিনারে যোগদান এবং তাদের কাছ থেকে অর্থ ও মালামাল বরাদ্দ নিয়ে স্থানীয়-রোহিঙ্গাদের বিলিবণ্টন করেছে, যা মৌলবাদী গোষ্ঠী ও আরএসও ক্যাডারদের যুদ্ধাংদেহী করে তোলার শামিল বলে মন্তব্য করে সচেতন মহল। রোহিঙ্গাবান্ধব ওই ৫১ এবং ৪৩৮ জঙ্গীর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ভাবিয়ে তুলেছে ওয়াকিফহাল মহলকে। শীঘ্রই তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি উঠেছে। রামুর বৌদ্ধবিহারে অগ্নিসংযোগ ও বড়ুয়া পল্লীতে হামলার আগে আরাকানভিত্তিক জঙ্গী গোষ্ঠী ও সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের দলে যুক্ত করে জঙ্গী সংগঠন (আরএসও) আরও মজবুত করে তুলতে উদ্যোগ নেয় ভয়ঙ্কর জঙ্গী ছলাহুল, আবু ছালেহ ও ওয়ামির রোহিঙ্গা নেতা ইব্রাহিম আতিক। এজন্য জামায়াতে আরাকান, আরএসও, আরইএফ, এআরএনওসহ বিভিন্ন আরাকান বিদ্রোহী সংগঠন একত্রিত করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। সূত্র জানায়, সরকারী সম্পদ বনভূমি দখল ও পরিবেশ প্রতিবেশ ধ্বংস করে লিংকরোড মুহুরি পাড়া, জঙ্গী ছলাহুল বনবিভাগের ৭ একর, রামু খুনিয়াপালং এলাকায় জঙ্গী মৌলভী আয়াছ তিন একর, পিএমখালীর ছনখোলায় ভয়ঙ্কর রোহিঙ্গা জঙ্গী আবু ছালেহ দুই একর জায়গায় নির্বিঘেœ একাধিক স্থাপনা গড়ে তোলার পেছনে ওই ৫১ জনের সহযোগিতা থাকার তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। সংশ্লিষ্ট দফতরের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে ওইসব বনজসম্পদ দখল করে সেসব জায়গায় জঙ্গীপনা সৃষ্টির লক্ষ্যে আরএসওর অর্থায়নে গড়ে তোলা হয়েছে একাধিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। বনবিভাগের রেঞ্জ ও বিট কর্মকর্তারা জানান, এগুলো কয়েক বছর আগের স্থাপনা। এসব উচ্ছেদ করতে ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশ লাগবে। জঙ্গী আবু ছালেহ ॥ মৌলভী আবু ছালেহ মিয়ানমারের বুচিদং থানার উলাফ্যে এলাকার মীর আহমদের পুত্র। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় পালিয়ে আসে এদেশে। আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপ আরএসওর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে ত্যাগ করে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প। জোট সরকার ক্ষমতাসীন থাকার সময় প্রায় তিন বছর ডুলাহাজারা বড় ছনখোলা পাহাড়ে আরএসওর ঘাঁটিতে ট্রেনিং নেয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর গুঁড়িয়ে দেয় আরএসওর ওই ঘাঁটি। পালিয়ে যায় আরএসও ক্যাডাররা। আবু ছালেহ শহরের পাহাড়তলি এলাকায় বসতি গেড়ে বিএনপি-জামায়াতের সহযোগিতায় নিজের নাম লেখায় ভোটার তালিকায়। পরবর্তীতে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে একাধিকবার সফর করে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংস্থার সঙ্গে আঁতাত করে রোহিঙ্গাদের জামায়াতপন্থী বানাতে গড়ে তুলেছে একাধিক স্থাপনা। এ জঙ্গীর সঙ্গে জেএমবির সখ্য আছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
×