ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে আসিয়ান সম্মেলনে তীব্র বিভক্তি

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ২৫ জুলাই ২০১৬

দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে আসিয়ান সম্মেলনে তীব্র বিভক্তি

লাওসের রাজধানী ভিয়েনতিয়েনে ১০ জাতি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সংস্থা (আসিয়ান) এর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলন শুরু হয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের কতৃত্ববাদী ভূমিকা কিভাবে মোকাবেলা করা হবেÑ তা নিয়ে সম্মেলনের শুরুতেই তীব্র বিভক্তি দেখা দিয়েছে। সম্মেলনের এই বিভেদের প্রভাব পড়েছে জোটের কয়েক সদস্য দেশের ওপর এবং এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক অচলাবস্থা। খবর ফক্স নিউজের। লাওস হচ্ছে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনের স্বাগতিক দেশ। স্বাভাবিকভাবে যৌথ বিবৃতি প্রকাশের মধ্য দিয়ে সাধারণত সম্মেলনের ইতি টানা হয়। দক্ষিণ চীন সাগরের প্রসঙ্গে সম্মেলনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কিনাÑ তা নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত। আসিয়ানের মৌলিক নীতি হচ্ছে এর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে। অর্থাৎ যে কোন সদস্য দেশ যে কোন প্রস্তাবে ভেটো দিতে পারে। এবার ধারণা করা হচ্ছে চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র কম্বোডিয়া দক্ষিণ চীন সাগরে ইস্যুতে ভেটো দিতে পারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে স্বাগত বক্তব্য দিতে গিয়ে লাওসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেলিউমজে কোমমাসিথ দক্ষিণ চীন সাগরের বিরোধ নিয়ে কোন কিছু উল্লেখ করেননি। ২০১২ সালেও কম্বোডিয়া এই বিরোধের বিষয় সম্মেলনে উত্থাপন করতে বাধা দিয়েছিল। এর ফলে জোটের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ওই সময় মন্ত্রীরা কোন বিবৃতি প্রকাশ করতে ব্যর্থ হন। কোমমাসিথ তার বক্তৃতায় বলেছেন, সাধারণভাবে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত ও চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হলেও এ সময়ে দেশগুলোর মধ্যে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন সহযোগিতার ধারা বজায় থাকবে। তিনি বলেন, আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকবে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যমান সুযোগসমূহ গ্রহণ করে কার্যকর পন্থার চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলা করা। রবিবারের বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ, অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, নিরাপত্তা এবং ব্রেক্সিট ও অন্যান্য বিষয়ের প্রভাব নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। তবে সবার মনেই প্রাধান্য পাচ্ছে গত জুলাই হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে চীন ও ফিলিপিন্সের মধ্যে বিরোধের রায়। স্থায়ী সালিশ আদালতের ওই রায়ে বলা হয়, ফিলিপিন্সের আশপাশে সমুদ্রসীমার ওপর চীনের দাবির কোন ভিত্তি নেই। ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়াসহ আসিয়ানের অন্যান্য সদস্য দেশের বিরুদ্ধে চীনের একই রকম দাবি রয়েছে এবং হেগভিত্তিক আদালতের রায় বেজিংয়ের সিদ্ধান্ত আরও জোরালোভাবে চ্যালেঞ্জ করতে আসিয়ানকে সাহসী করার কথা। কিন্তু এ সংক্রান্ত উদ্যোগে বাধা দিচ্ছে কম্বোডিয়া। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কূটনীতিকরা একথা জানিয়েছেন। সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে আলোচনার জন্য তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত নন বলেই তারা তাদের নাম প্রকাশ করতে চাননি। তারা বলেন, মঙ্গলবার সম্মেলন শেষে খসড়া বিবৃতির স্থানে প্রকাশিতব্য দক্ষিণ চীন সাগর শিরোনামের জায়গা খালি রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত ওই স্থান খালি থাকবে। চীনের অন্যতম মিত্র স্বাগতিক দেশ লাওসও এ বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে। রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একজন কূটনীতিক জানান, কম্বোডিয়া ২০১২ সালে সম্মেলনে ভিলেনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। দেশটি মূলত বৃহৎ দেশ চীনের অনুগত। ভিয়েতনামের ইনস্টিটিউট অব স্ট্যাটেজিক স্টাডিজের উপ-পরিচালক ত্রাণ ভিয়েত থাই হেগের ট্রাইব্যুনালের রয়েছে অন্তত তাত্ত্বিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, এই রায় এ অঞ্চলের বিরোধ নিষ্পত্তিতে সহায়ক হবে এবং আইনগত বিষয়টি স্পষ্ট করবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর অবস্থানও এতে স্পষ্ট হবে।
×