ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভেঙ্গে দেয়া হলো গার্ড রেজিমেন্ট

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ২৫ জুলাই ২০১৬

ভেঙ্গে দেয়া হলো গার্ড রেজিমেন্ট

তুরস্কে গত সপ্তাহে সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর শনিবার রাতে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের গার্ড রেজিমেন্ট ভেঙ্গে দেয়া হয়ে হয়েছে। এর আগে শুক্রবার ওই বাহিনীর প্রায় শ’তিনেক সদস্যকে আটক করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম বলেছেন, প্রেসিডেন্টের বিশেষ গার্ড বাহিনীর প্রয়োজন নেই। খবর বিবিসি ও এএফপির। ইলদিরিম এহাবের টিভি চ্যানেলকে বলেন, প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড রেজিমেন্টের কোন প্রয়োজন নেই। এ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা দুই হাজারের উপরে। কর্তৃপক্ষ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা তুর্কী ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হালিস হানসিকেও আটক করা হয়েছে। ১৫ জুলাইয়ের ওই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের জন্য এরদোগান তার এক সময়কার ঘনিষ্ঠ গুলেনকে অভিযুক্ত করেছেন। তবে অভ্যুত্থান চেষ্টার সঙ্গে কোন ধরনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গুলেন। এরদোগান সরকার গুলেনকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দাবিও জানিয়েছে। হানসি গুলেনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। অভ্যুত্থানের দু’দিন আগে তিনি তুরস্কে আসেন বলে জানা গেছে। অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর থেকেই দেশজুড়ে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়। ইতোমধ্যেই ৬০ হাজারের বেশি সরকারী চাকরিজীবী আটক বা বরখাস্ত হয়েছেন। সরকারী কর্মকর্তা, স্কুলশিক্ষক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানসহ আরও বহু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আরও বহু লোক গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। তুরস্কে বুধবার জরুরী অবস্থা জারি করা হয়। এরদোগান এখন পার্লামেন্ট ও মন্ত্রিসভাকে পাশ কাটিয়ে এককভাবে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ পেয়ে গেছেন। যেমন তিনি কোন অভিযোগ ছাড়াই কাউকে আটক রাখার মেয়াদ বাড়িয়ে ৩০ দিন করেছেন। প্রেসিডেন্টের নির্দেশে এক হাজারের ওপরে স্কুল এবং ১২শ’র বেশি সংগঠন বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে অভ্যুত্থানপরবর্তী পরিস্থিতি সরকার যেভাবে সামাল দিচ্ছে তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশটির অর্থনীতির ওপর। মার্কিন ডলারের বিপরীতে তুরস্কের মুদ্রা লিরার দাম ৬ শতাংশ পড়ে গেছে। অভ্যুত্থান চেষ্টার নয় দিনে তুরস্কের শেয়ারবাজারে দর ১০ শতাংশ পড়ে গেছে। লন্ডনভিত্তিক আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিনাইসা ক্যাপিটালের তুরস্কবিষয়ক স্ট্র্যাটেজিস্ট মাইকেল হ্যারিস বলছেন, রাজনৈতিকভাবে তুরস্ক যে বিশৃঙ্খলার কবলে পড়েছে তার ফলে দেশটির মুদ্রার কতটা পতন ঘটতে পারে তা এখনই অনুমান করা সম্ভব নয়। তিনি বলছেন, ব্রিটেন থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত বহু দেশেই মুদ্রামানের পতন ঘটে থাকে কিন্তু অর্থনীতির অন্য খাতগুলো সচল থাকলে জনগণকে এর জন্য খুব বেশি ভুক্তভোগী হতে হয় না। কিন্তু তুরস্কের পরিস্থিতি ভিন্ন। এখানে অনেক দিন ধরেই মুদ্রাস্ফীতির উচ্চহার বিরাজ করছে। বিনিময় হারও খুব দুর্বল। এর ফলে মুদ্রার মান পড়ে গেলে ভোক্তাসাধারণকে তার জন্য মাসুল গুনতে হতে পারে। বিষয়টি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও বাড়তি চাপ তৈরি করবে। তিনি আশঙ্কা করছেন, তুরস্ক দীর্ঘমেয়াদী মন্দার কবলে পড়তে পারে। ১৯৯০-এর দশকে দেশটির ব্যাংকিং খাতে সমস্যা দেখা দেয়। ২০০০-২০০১ সালে দেখা দিয়েছিল প্রবল মুদ্রাস্ফীতি। ২০০২ সালে জাস্টিস এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) বিপুল জয়ের পেছনে অর্থনীতি একটি বড় ইস্যু ছিল। এরদোগান এ দলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। গত ১৪ বছরে একেপির শাসনামলে তুরস্কের জিডিপি মোটামুটি সন্তোষজনক পর্যায়ে ছিল, যে কারণে দলটি নির্বাচনে জিতে বারবার ক্ষমতায় আসতে পেরেছে। দেশ এখন নতুন করে অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে পড়লে একেপির ক্ষমতার ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন।
×