ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মেধাবী ক্রিকেটার

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২৫ জুলাই ২০১৬

মেধাবী ক্রিকেটার

ঠিক এক বছর আগের কথা। ক্রিকেটের ম্যাজিক-বয় মুস্তাফিজের দারুণভাবে ঝলসে ওঠার শুরু। পাকিস্তানের পর ভারতও ধরাশায়ী বাংলার মাটিতে। সীমিত ওভারের ম্যাচে এই উপমহাদেশ, তথা গোটা ক্রিকেটবিশ্বেরই দুই সুপার পাওয়ার পাকিস্তান ও ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের মাধ্যমে দুনিয়াকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল বর্তমানে ক্রিকেটে নতুন পরাশক্তির নাম বাংলাদেশ। সে ছিল এক অনন্য অর্জন। এক অভূতপূর্ব বিজয়। এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস! ওই ইতিহাস সৃষ্টিতে বিশেষ নায়কের মর্যাদা আমরা মুস্তাফিজকেই দিয়েছিলাম। নবাগত বিস্ময় মুস্তাফিজের কৃতিত্বের কথা আমাদের অবশ্যই স্মরণে রাখতে হবে। মূলত বোলিংয়ে তার নতুন কৌশল ও বৈচিত্র্য ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের হতবিহ্বল করে দিয়েছিল। মুস্তাফিজকে ঠিকমতো খেলতে না পারাটাই অন্যতম বড় কারণ হয়ে উঠেছে জয়-পরাজয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে। দুই ম্যাচ মিলিয়ে মুস্তাফিজ উইকেট শিকার করেছিলেন এগারোটি। এর ফলে বিশ্বরেকর্ডের মতো বিশাল কৃতিত্ব অর্জিত হয়েছিল তার। মাত্র ১৯ বছর বয়সী এমন রতনটি দেশের কোটি মানুষকে আনন্দ আর তৃপ্তি দিয়েছে। মনে রাখতে হবে ক্রিকেট হলো ধারাবাহিকতার খেলা। দেশের মাটিতে স্বদেশের সতীর্থ খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলা আর বিদেশের মাটিতে সেখানকার কোন ক্রিকেট টিমে অন্তর্ভুক্ত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন দেশের খেলোয়াড়দের টিমমেট হয়ে প্রতিভা প্রদর্শন ভিন্ন কথা। তাও ম্যাচটি যদি হয় কুড়ি ওভারের। ভারতের মাটিতে আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে মুস্তাফিজ খেলেছিলেন। সেখানে প্রথম তার খেলতে যাওয়া। মাঠে নেমেই তাকে ভারতের কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর মন জয় করে নিতে দেখেছি আমরা। টিভির বাঘা বাঘা সব ক্রিকেটভাষ্যকার প্রশংসার ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন মুস্তাফিজের পারফর্মেন্সের কথা বলতে গিয়ে। আইপিএলে মুস্তাফিজের টিম চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় মুস্তাফিজের সুনামও আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপর বাংলাদেশের এই কাটার মাস্টার খেলতে গেছেন ক্রিকেটের বনেদি ভূমি ইংল্যান্ডে। কী অবাক কা-! এলেন দেখলেন জয় করলেনÑ এই আপ্তবাক্যটি আবারও সত্য হলো মুস্তাফিজের বেলায়। বৃহস্পতিবার রাতে ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে সাসেক্স শার্কের হয়ে অভিষেক ম্যাচটিতে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স দেখিয়েছেন বাংলাদেশের এই মেধাবী ক্রিকেটার। চার ওভার বল করে মাত্র ২৩ রানের বিনিময়ে তুলে নিয়েছেন চার-চারটি উইকেট। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার উঠেছে তার হাতেই। বাইরের দুনিয়া বাংলাদেশকে যে কয়টি ইতিবাচক অর্জনের জন্য চিনছে তার ভেতর প্রথম সারিতে রয়েছে ক্রিকেট। মেধা ও প্রতিভা যদি ঈশ্বর প্রদত্ত বলে মেনেও নিই, তারপরও থাকে তার চর্চা, অনুশীলন ও সাধনার বিষয়টি। আমরা আগেও বলেছি বাঙালীর ক্রিকেটমেধা চাপা পড়ে ছিল পাকিস্তান নামক অভব্য, বাঙালীবিদ্বেষী রাষ্ট্রের কাছে। স্বাধীনতার সুন্দরতম ফসলের একটি আমাদের ক্রিকেট। আমাদের ছেলেরা বিশ্বক্রিকেটে নিজেদের জাদু দেখানোর সুযোগ পেয়েছে। ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা এমন কথা বরাবরই বলা হয়ে থাকে। হ্যাঁ, অনিশ্চয়তা আছে বটে। সেটি ব্যতিক্রম হিসেবেই চিহ্নিত। অঘটন বার বার ঘটে না। ক্রিকেটশক্তির ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে এই অঘটনের মাত্রা শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসে। বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রতিভা মুস্তাফিজের কল্যাণে বাংলাদেশের সুনাম নতুন করে উচ্চারিত হচ্ছে বহির্বিশ্বে। ইংল্যান্ডে টিমমেটরা মুস্তাফিজকে স্পেশাল প্রতিভা হিসেবে সমীহ দেখাচ্ছেন। কাউন্টিতে মুস্তাফিজ তার সাফল্য ধরে রাখতে সমর্থ হলে তাকে গোটা ক্রিকেট-বিশ্বই যে প্রশংসা করবেÑ এতে কোন সংশয় নেই। এভাবে তিনি আগামীতে হয়ে উঠতে পারেন ইউরোপে বাংলাদেশের অনানুষ্ঠানিক এক শুভেচ্ছা-দূত।
×