ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চিনির দাম কমান

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২৫ জুলাই ২০১৬

চিনির দাম কমান

সপ্তাহের ব্যবধানে চিনির দাম প্রতিকেজিতে বেড়েছে পাঁচ টাকা। বর্তমানে বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে। প্যাকেট চিনি ক্রমশ দুর্লভ হয়ে উঠেছে। বর্ষার ভরা মৌসুমে এমনিতেই অবশ্য নিত্যপণ্যের বাজারে একটা তেজিভাব পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। চাল-ডাল-তেল-নুন-মাছ-মাংস-ডিমের বাজারে চড়াভাব। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে চিনির দাম। সত্যি বলতে কি, চিনি নিয়ে রীতিমতো ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে একশ্রেণীর উৎপাদক, আমদানিকারক, সরবরাহকারী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীর মধ্যে। দুঃখজনক হলো, গত কয়েক মাস ধরে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে কারসাজিটা শুরু হলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও টিসিবি সমস্যাটির গুরুত্ব অনুধাবন এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। এবারে ঈদ-উল-ফিতরের প্রাক্কালে বিশেষ করে চিনি, ছোলা, ডাল ও উন্নতমানের পোলাও চালের দামে উচাটন ছিল লক্ষণীয়। তবে এসবের মধ্যে সর্বাধিক চিনির দামের অস্থিরতা অস্বস্তিতে ফেলেছে ভোক্তাসাধারণকে। রমজানে স্বভাবতই সরবত, সেমাই, ফিরনি, লাচ্ছাসহ প্রায় সব রকম মিষ্টদ্রব্যের চাহিদা বেড়ে যায় ব্যাপকভাবে। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বাজারের এহেন দুর্বলতা তথা সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দফায় দফায় বাড়াতে থাকে চিনির দাম। এ সময়ে টিসিবি অবশ্য রাজধানীসহ কয়েকটি বড় শহরে ট্রাকে করে কয়েকটি নিত্যপণ্যের সঙ্গে ন্যায্যমূল্যে চিনি বিক্রি করে বাজার পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছে। তবে সেটা সীমিত সময়ের জন্য এবং সার্বিকভাবে বাজারে তার তেমন প্রভাব পড়েনি বললেই চলে। সীমিত পরিমাণে দেশীয় চিনিকলের প্রস্তুত চিনি অবশ্য ৫০-৬০ টাকা প্রতি কেজি দরেই পাওয়া গেছে। তবে সাধারণভাবে বাজারে চিনির দাম কখনই ৬৫-৭০ টাকার নিচে নামেনি। চিনির দাম নিয়ন্ত্রণ তথা সহনশীল রাখার সদিচ্ছায় বাণিজ্যমন্ত্রী অবশ্য কয়েক দফা বৈঠক করেছেন চিনি উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। দু’একটি কোম্পানিকে বেশি দামে চিনি বিক্রির জন্য জরিমানার খবরও আছে। ব্যবসায়ীরাও আশ্বাস দিয়েছেন চিনির দাম স্থিতিশীল রাখার। তবে সকলই গরল ভেল। চিনির স্বাদ আর ‘মিষ্ট’ হতে পারেনি ভোক্তাদের কাছে; বরং মূল্য বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় পড়ে ক্রমশই যেন ‘তেতো’ হয়ে উঠছে। পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, মিল মালিকদের কারসাজির কারণে চিনির দাম বাড়ছে। মিল মালিকরা মূলত আমদানিকারক। তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিযোগিতামূলক দামে ‘র-সুগার’ এনে পরিশোধন করে বাজারজাত করে থাকে সরবরাহকারীদের মাধ্যমে। হাতেগোনা কয়েকজন মিলে গড়ে উঠেছে এই সিন্ডিকেট। মূলত এরাই চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এবং ইচ্ছামতো উৎপাদন ও বাজারজাত করে চিনি। অন্যদিকে সরকারী মালিকানাধীন কয়েকটি চিনিকলে প্রচুর চিনি অবিক্রীত থেকে যায় প্রতিবছর। ফলে কারখানাগুলো লোকসান গোনে বছরের পর বছর ধরে। চলতি বছরের বাজেট ঘোষণার আগে পরে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, লোকসানের অজুহাতে দেশীয় চিনিকলগুলো বন্ধ করে দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। সে অবস্থায় দেশীয় অবিক্রীত চিনি খোলাবাজারে বিক্রির মাধ্যমে বর্তমানে অস্থির বাজার সামাল দেয়া যেতে পারে। তাতে সরকারী মিলগুলোর লোকসানও কিছুটা পুষিয়ে যেতে পারে। তদুপরি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও টিসিবির উচিত হবে জরুরীভিত্তিতে চিনি সিন্ডিকেটের জড়িতদের সঙ্গে বৈঠক করা। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনির শুল্কহার সমান করা হলে যদি চিনির দাম কমে, তাহলে আপাতত তাও করা যেতে পারে।
×