ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এখান থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইফলাইন বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করেন বিশেষজ্ঞরা

সীতাকুণ্ডের জামায়াতী ঘরানার ভার্সিটিতে কারা পড়ছে!

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৪ জুলাই ২০১৬

সীতাকুণ্ডের জামায়াতী ঘরানার ভার্সিটিতে কারা পড়ছে!

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থান সীতাকু-ের ছোট কুমিরায় সড়কসংলগ্ন বিশাল এলাকাজুড়ে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠা হয়েছে জামায়াতের দেশী-বিদেশী চাঁদা ও অনুদানের আইআইইউসি (আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)। পৌনে এক শ’ বিদেশী শিক্ষার্থীসহ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংখ্যা এখন ১২ হাজার। এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে জামায়াতী সংগঠন ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের ব্যাপক তৎপরতা রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইসলামের ব্যানারে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগার দিন দিন হয়েছে বটবৃক্ষের মতো বিশালকায়। আর এ কারণে এটি চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের কাঁটা হিসেবেও চিহ্নিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে আগাম হুঁশিয়ারির পাশাপাশি বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের সরকারকে ব্যাপকভাবে সজাগ হতে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত চকবাজারের প্যারেড ময়দানসংলগ্ন ভাড়াটে ভবন থেকে এর যাত্রা শুরু হলেও পরবর্তীতে এটির মূল ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সীতাকু-ের ছোট কুমিরার বিশাল এলাকাজুড়ে। ইতোমধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করার ঘটনা ঘটিয়েছে। ভবিষ্যতে এরা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এ মহাসড়ক জিম্মি করার সমূহ আশঙ্কা যে রয়েছে তা বহু আগেই সরকারের উচ্চপর্যায়কে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু যে কারণেই হোক শুরুতে বিএনপি ও পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ধীরে ধীরে বটবৃক্ষসম হয়েছে। জামায়াত-শিবিরের আদর্শের মনোভাবাপন্ন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যের স্থান হয় না। তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জামায়াতী আদর্শে বিশ্বাস করে না এমন শিক্ষার্থীও আছে। এরা ও এদের অভিভাবকরা বুঝে না বুঝে তাদের সন্তানদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত কৌশলে নানা কায়দায় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে তৎপর থাকে। আর জামায়াত ও শিবির মনোভাবাপন্ন শিক্ষার্থীরা তাদের উচ্চতর শিক্ষাজীবনে এজন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়কে পছন্দের তালিকায় রাখে সর্বাগ্রে। বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রয়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বেশকিছু দেশ থেকে এরা মোটা অঙ্কের অনুদান পেয়ে থাকে, যে কারণে অর্থের অভাব নেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের। আর সে কারণেই জামায়াত-শিবির মনোভাবাপন্ন শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি খাতে বিভিন্নভাবে রেয়াত দেয়া হয়। শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ লেখাপড়ার ফাঁকে জামায়াতী আদর্শ বাস্তবায়নে সরকারবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত থাকে। এমনকি এমন অভিযোগও রয়েছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অনেকের সঙ্গে জঙ্গী কানেকশনও রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস ছাড়াও নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় রয়েছে একটি মহিলা ক্যাম্পাসও। ছোট কুমিরার মূল ক্যাম্পাস পুরুষ শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত। এসবের পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের উদ্যোগে চট্টগ্রামে রাজনৈতিক সক্রিয় ভূমিকার পাশাপাশি রয়েছে বেশকিছু কোচিং সেন্টার। এসব কোচিং সেন্টারে ইতোমধ্যে অভিযান চালিয়ে মওদুদীবাদী আদর্শের বইপুস্তকসহ সরকারবিরোধী প্রচারের বই, পুস্তক, লিফলেটসহ নানা আপত্তিকর তথ্যউপাত্ত জব্দ করার ঘটনা রয়েছে। এ কারণে এসব কোচিং সেন্টার একবার একযোগে বন্ধ করে দেয় পুলিশ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রহস্যজনক কারণে পরবর্তীতে এসব কোচিং সেন্টার খুলে যায়। এরা অত্যন্ত কৌশলে প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে নিজস্ব কর্মী বাহিনীর কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে তৎপর থাকে। ইউজিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, এ ভার্সিটিসহ আরও বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিট নিয়ে সরকারী পর্যায়ে যথাযথ তৎপরতার অভাব রয়েছে, যে কারণে আইআইইউসির জন্য কারা চাঁদা ও অনুদান প্রদান করেন এবং তা কী কী খাতে ব্যয় করা হয় এর কোন সুষ্ঠু রিপোর্ট সরকারের কাছে থাকে না। বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করে সূত্র জানায়, যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী যুদ্ধাপরাধীদের পূর্ণাঙ্গ সমর্থন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি রয়েছে এবং স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, সেক্ষেত্রে এ শিক্ষাঙ্গন থেকে কারা বেরিয়ে কী করছে, তাদের কানেকশন কাদের সঙ্গেÑ এসব নিয়ে বাস্তবভিত্তিক তদারকি প্রয়োজন। চট্টগ্রামে ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ নামে জামায়াতীদের যে একটি সংগঠন রয়েছে এটির অধীনে আইআইইউসি পরিচালিত হচ্ছে। আর ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ মূলত জামায়াতী মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
×