ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রিমান্ডে অর্থ যোগানদাতাদের কয়েকজনের নাম প্রকাশ

ঢাকায় ফের সংগঠিত হচ্ছে হুজি, এক নেতাসহ গ্রেফতার ৩ জঙ্গী

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৪ জুলাই ২০১৬

ঢাকায় ফের সংগঠিত হচ্ছে হুজি, এক নেতাসহ গ্রেফতার ৩ জঙ্গী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবারও ঢাকায় সংগঠিত হচ্ছে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি)। দীর্ঘদিন ধরেই রাজধানীতে জঙ্গী সংগঠনটি গোপনে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। হালে তারা তৎপরতা জোরদার করেছে। ঢাকা থেকে জঙ্গী সংগঠনটির এক নেতাসহ তিন সদস্য গ্রেফতারের পর এমন তথ্যই জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের চার দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন ঢাকার সিএমএম আদালত। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোঃ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে রাজধানীর কোতোয়ালি থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে গ্রেফতার হয় হুজির ঢাকা উত্তর বিভাগের সভাপতি মাওলানা নাজিম উদ্দিন (৪০), দাওয়াতী বিভাগের সদস্য আনাস (২১) ও সহযোগী সদস্য প্রকৌশলী সাইদুজ্জামান (২৪)। শুক্রবার গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় ২০০৯ সালের সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে শুক্রবারই তিন জনকে ঢাকার সিএমএম আদালতে সোর্পদ করে দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। শনিবার আদালত শুনানি শেষে তাদের চার দিনের রিমান্ডে পাঠান। ডিবির দক্ষিণ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোঃ শহীদুল্লাহ জানিয়েছেন, নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনটি বহু দিন ধরেই ঢাকায় নিষ্ক্রিয় ছিল। সম্প্রতি জঙ্গী সংগঠনটি ঢাকায় গোপনে তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছিল। গ্রেফতারকৃতরা টার্গেটকৃতদের দাওয়াত দেয়ার পাশাপাশি মোটিভেট করার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। রিমান্ডে গ্রেফতারকৃতরা কয়েক জনের নামও প্রকাশ করেছে। যারা জঙ্গী সংগঠনটিকে ফের শক্তিশালী ও সংগঠিত করতে অর্থের যোগান দিচ্ছে। গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে হুজির কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮৯ সালে। সর্বশেষ আফগান ফেরত যোদ্ধা এসকে আব্দুস সালাম আইডিপি (ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি) নামে দেশের জঙ্গীদের একটি রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে আনার চেষ্টা করেছিলেন। রাজনৈতিক দল হিসেবে আইডিপিকে নিবন্ধিত করতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছিলেন তিনি। যদিও শেষ পর্যন্ত সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। সূত্র বলছে, এসকে সালামের তথ্য মোতাবেক ১৯৮৯ সালে আফগান যুদ্ধ থেকে যশোরের বাসিন্দা আব্দুর রহমান ফারুকী দেশে ফেরার পরই শুরু হয় বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের সাংগঠনিক গোড়াপত্তন। ফারুকী দেশে ফিরেই হরকাতুল জিহাদিল ইসলামী নামের দল গঠন করেন। পরবর্তীতে দলটি হরকত-উল-জিহাদ অব বাংলাদেশ সংক্ষেপে হুজিবি নাম ধারণ করে। পরে হুজিবিই হুজি নাম ধারণ করে। আফগান যুদ্ধে কত বাংলাদেশী অংশ নিয়েছিলেন তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১২ হাজার আফগান যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ছাত্রশিবিরের ১ হাজার ৮০ জন। ১৯৯২ সালে আফগান যুদ্ধে অংশ নেয়া একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় কারাবন্দী মুফতি হান্নান দেশে ফিরেন। তিনি ১৯৯৩ সালে প্রায় ৩ হাজার আফগান ফেরত যোদ্ধাকে নিয়ে ঢাকার খিলগাঁওয়ের তালতলায় জাগো মুজাহিদ নামের একটি সংগঠন করেন। ওই বছরই মুফতি আব্দুস সালামকে হুজির আমির নিযুক্ত করা হয়। হুজি আগাগোড়াই জঙ্গী কার্যক্রমে জড়িত। ১৯৯৮ সাল থেকে হুজির বিরুদ্ধে জঙ্গী কার্যক্রমে জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশ পেতে থাকে। এ সময় সরকারের চোখ ফাঁকি দিতে হুজিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে এর নেতারা। নাম পাল্টিয়ে ইসলামী দাওয়াতে কাফেলা ও সর্বশেষ ইসলামী গণআন্দোলন নাম দেয়া হয়েছিল। দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের পক্ষে হুজি চোরাগোপ্তা হামলা শুরু করে। যশোরের উদীচীতে বোমা হামলা, রমনা বটমূলে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ অসংখ্য হামলায় জড়িত নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনটি। হুজির সঙ্গে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ভারতের বিভিন্ন জঙ্গী ও উগ্র মৌলবাদী সংগঠনের যোগাযোগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনগুলোর মধ্যে হুজিও অন্যতম। বিভিন্ন দেশে নানা নামে হুজির কার্যক্রম রয়েছে। বাংলাদেশে পাকিস্তানের তৈরি অত্যাধুনিক আর্জেস গ্রেনেড ব্যবহারের নজির একমাত্র হুজিরই রয়েছে। হুজির কাছ থেকে প্রায় শ’খানেক আর্জেস গ্রেনেড উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। সাতক্ষীরা থেকে হুজি নেতা নজরুল ইসলাম ঘরামীর বাড়ি থেকেই একসঙ্গে ৪৫টির বেশি আর্জেস গ্রেনেড উদ্ধার করে র‌্যাব। বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্রের ট্রেনিং ও উচ্চমাত্রার বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণ একমাত্র হুজি ও জেএমবি জঙ্গীদেরই রয়েছে। পরবর্তীতে এ দুইটি জঙ্গী সংগঠনের মাধ্যমেই অন্যান্য জঙ্গী সংগঠন আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরির ফর্মূলা পায়।
×