ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিখোঁজ ১০

নরসিংদীতে নৌকা ডুবে ৯ শিশুসহ ১২ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৪ জুলাই ২০১৬

নরসিংদীতে নৌকা  ডুবে ৯ শিশুসহ  ১২ জনের মৃত্যু

নিজস্ব সংবাদদাতা, নরসিংদী, ২৩ জুলাই ॥ নরসিংদীর আড়িয়ালখাঁ নদীতে নৌকা ডুবে নয় শিশুসহ ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে আরও ১০ যাত্রী। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে রায়পুরা উপজেলার জংলী শিবপুর ব্রিজের নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া আড়িয়ালখাঁ নদীতে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, রায়পুরা উপজেলার বারৈচা গ্রামের ইউপি সদস্য আবদুল হাইয়ের তত্ত্বাবধানে জংলী শিবপুর বাজারঘাট থেকে রায়পুরা ও বেলাব উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক যাত্রী নিয়ে একটি নৌকা বি’বাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি গ্রামের গনিশাহর মাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই নৌকাটি নদীর মাঝখানে পৌঁছার পর হঠাৎ ডুবে যায়। অধিকাংশ যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও নয় শিশুসহ ১২ যাত্রী নিহত হয়। এদের মধ্যে ১০ জনের পরিচয় মিলেছে। এরা হচ্ছে বেলাব উপজেলার দেওয়ানের চর গ্রামের আবদুল কুদ্দুছের ছেলে ইয়াছিন (৭), কুদ্দুছের মা মাজেদার নেছা (৫০), রায়পুরার বারৈচা গ্রামের সুন্দর আলীর মেয়ে জেরিন (৬) ও ছেলে জিনুক, রফিক মিয়ার ছেলে রাব্বি (৬), রবিউল্লার মেয়ে সুমাইয়া, মিলন মিয়ার মেয়ে মার্জিয়া (৪), তার মা মালেকা খাতুন (৫০), রফিক মিয়ার ছেলে রাকিবুল (৮), আক্তারের ছেলে সম্রাট (৮) ও অজ্ঞাত এক যুবক (২৮)। এছাড়া ১০ যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা। শত শত উৎসুক জনতা ঘটনাস্থলে ভিড় জমায় এবং স্বজনদের চিৎকারে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। নিহতদের লাশ স্বজনরা নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। এদিকে নিখোঁজদের সন্ধানে ছয় সদস্যের ডুবুরি দল এবং ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা সন্ধ্যা পর্যন্ত চেষ্টা চালানোর পর উদ্ধার কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ‘স’ মিল শ্রমিক আওলাদ হোসেন (৪৫) জানান, গনিশাহর মাজারে যাবার উদ্দেশ্যে জংলী শিবপুর বাজারঘাট থেকে ছেড়ে এক শ’ গজ দূরে নদীর মাঝামাঝি পৌঁছলে অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে হঠাৎ নৌকাটি ডুবে যায়। যাত্রীদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং নৌকাটি তীরে আনার চেষ্টা করে। অতিরিক্ত যাত্রী, প্রবল স্রোত ও ঢেউ থাকায় নৌকাটি তখন কিনারে আনা সম্ভব হয়নি । পরে স মিল মালিক খায়ের মাস্টার ডুবন্ত নৌকাটিতে দড়ি বেঁধে দিলে লোকজন দড়ি টেনে নৌকাটি কিনারায় নিয়ে আসে। তিনি জানান, ৫০/৬০ যাত্রী নৌকা থেকে জীবিত বেরিয়ে আসে। আবার অনেকেই নৌকা ডুবে যাবার সঙ্গে সঙ্গে সাঁতরে কিনারায় উঠতে সক্ষম হয়। নৌকাটিতে নারী-পুরুষ-শিশুসহ শতাধিক যাত্রী ছিল। নৌকাটি কিনারায় আনার পর মৃতদেহগুলো বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক হৃদয়বিদারক ঘটনার সৃষ্টি হয়। স্বজনহারাদের কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। লাশগুলো স্বজনরা তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। জংলী শিবপুর বাজারের মিষ্টি দোকানের কারিগর শহীদ মিয়া জানান, নৌকাটি ডুবতে দেখে শত শত মানুষ নদীর তীরে ভিড় জমায়। তাদের অনেকেই উদ্ধার কাজে সহায়তা করে। শিশু ও মহিলা ছাড়া অনেকেই কিনারায় উঠতে সক্ষম হয় । রায়পুরা থানার ওসি আজারুল ইসলাম জানান, নৌকার মালিক ও পৃষ্ঠপোষককে খুঁজে বের করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিহতদের লাশ স্বজনরা নিয়ে গেছে। আরও লাশ নদীতে ডুবে রয়েছে কিনা খুঁজে দেখা হচ্ছে। নিহত অনেকেরই জানাজা বাদ আছর বারৈচা কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
×