ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গুলশান, শোলাকিয়া হামলায় মীর কাশেম কানেকশন- তদন্ত করছে গোয়েন্দারা

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৪ জুলাই ২০১৬

গুলশান, শোলাকিয়া হামলায় মীর কাশেম কানেকশন- তদন্ত করছে গোয়েন্দারা

শংকর কুমার দে ॥ গুলশান ও শোলাকিয়ার জঙ্গী হামলার সঙ্গে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী ধনকুবের মীর কাশেম, জামায়াত ও পাকিস্তানের যোগসূত্র থাকার বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। নেপথ্যের পরিকল্পনা, অর্থদাতা, নির্দেশদাতা হিসেবে কাজ করেছে এমন তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ও শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে গোপন সফরে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর এই ধরনের খবর ফাঁস হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে গোপন সফরে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ও যুদ্ধাপরাধীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাজ্জাক। ব্যারিস্টার রাজ্জাকের সঙ্গে সফরসঙ্গী ও গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটিতে অংশ নেন মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়া মতিউর রহমান নিজামীর এক ছেলে ও মীর কাশেম আলীর ছোট ভাই মীর মাসুম আলী। যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এই বিষয়ে বাংলাদেশকে অবহিত করা হয়েছে। কাউন্টার টেররিজম ইউনিট এ বিষয়ে তদন্ত করছে। কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে গিয়ে একাত্তরে চট্টগ্রামের আলবদরপ্রধান মীর কাশেম আলীর নিয়োগ করা লবিস্ট ফার্মের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন ব্যারিস্টার রাজ্জাকের নেতৃত্বাধীন সফরকারী দলটি। তারা ম্যানহাটানের একটি বিলাসবহুল হোটেলে মীর কাশেম আলীর পরিবার ও মার্কিন আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন গত ১১ জুলাই রাতে। বেশ কয়েকদিন ধরে গোপনে এই ধরনের বৈঠকের খবরটি ফাঁস হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটানের ১২৫ ইস্ট ও ৫০ স্ট্রিটের বেঞ্জামিন হোটেলে ঢুকে লাউঞ্জে বসে ব্যারিস্টার রাজ্জাক প্রকাশ্যে মীর কাশেম আলীর পরিবার ও মার্কিন আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়া মতিউর রহমান নিজামীর এক ছেলে ও মীর কাশেম আলীর ছোট ভাই মীর মাসুম আলী উপস্থিত ছিলেন সেখানে। মুসলিম উম্মাহ ও জামায়াতের সংগঠন ‘কোয়ালিশন অব বাংলাদেশী আমেরিকান এ্যাসোসিয়েশনের বেশ কয়েকজন নেতাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এই খবরটি ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা গোপন বৈঠকের বিষয়টি মনিটর করেন। সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু হওয়ার পর থেকেই যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধে মার্কিন প্রশাসনকে প্রভাবিত করার জন্য একটি লবিং ফার্মকে কয়েক বছরে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়েছেন নিউইয়র্ক প্রবাসী মীর কাশেম আলীর ভাই মীর মাসুম। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বন্ধে মীর কাশেম আলী যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে প্রভাবিত করতে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিলেন এবং ওই লবিস্ট ফার্মকে ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসলেও জামায়াতের যুদ্ধাপরাধীর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে ফাঁসির দড়ি থেকে বাঁচাতে ব্যর্থ হয়। মীর কাশেমের নিজস্ব অর্থায়নে মীর মাসুম নিউইয়র্কে একটি টেলিভিশন চ্যানেলও চালু করে প্রচার মাধ্যম দিয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে প্রভাবিত করা এবং বাংলাদেশের সরকার বিরোধী প্রচারণা চালানোর প্রধান দায়িত্ব ছিল ওই লবিস্ট ফার্ম ও টিভি চ্যানেলটির। কিন্তু লবিস্ট ফার্ম ও টিভি চ্যানেল তার কোন কাজেই আসেনি। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদ- থেকে কোনভাবেই পার না পাওয়ার কারণে এখন জঙ্গীদের মাঠে নামানো হয়েছে। মীর কাশেম আলীর ফাঁসির দ- কার্যকর করার আগে শেষ চেষ্টা হিসেবে বাংলাদেশে আইএস আছে, আইএস জঙ্গীরা সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যম সরকারের পতন ঘটানোর চেষ্টা ও বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার নীল নক্সা করে। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই মীর কাশেম আলী জামায়াতে ইসলামী দলের মধ্যে সবচেয়ে ধনাঢ্য ও জামায়াতের অর্থের যোগানদাতা হিসেবে মুখ্য ভূমিকা পালনকারী হওয়ায় তাকে বাঁচাতে এখন মরিয়া জামায়াত ও তাদের সহযোগী পাকিস্তান। নীল নক্সার ছক কষেই গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলা চালানোর অভিযোগের বিষয় তদন্ত করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর মানবতা বিরোধী অপরাধে আপীল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের ফাঁসির দ-ের রায় প্রকাশ করা হয়। সুপ্রীমকোর্টের ওয়েবসাইটেও এটি আপ করা হয়েছে। মীর কাশেম আলীর মৃত্যু পরোয়ানা এরইমধ্যে পাঠানো হয়েছে কারাগারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এবং ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও পাঠানো হয়েছে এর কপি। এখন তার আপীল বিভাগের রিভিউ শুনানির অপেক্ষায় দিন ধার্য করা আছে। কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্র জানান, গুলশান ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় জঙ্গী নেটওয়ার্কটির সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দারা। গুলশান ও শোলাকিয়া সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনায়, ছক কষাসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত এমন প্রায় এক ডজন জঙ্গী সদস্যের মদদদাতা এখন গোয়েন্দা নজরদারিতে আছে। তাদের গ্রেফতার জঙ্গী হামলার পর জিজ্ঞাসাবাদে ও অনুসন্ধানে গোয়েন্দা সংস্থা ও তদন্তকারীরা যে তথ্য পেয়েছে তাতে জঙ্গী গোষ্ঠীর সঙ্গে রাজনৈতিক দলে কানেকশন থাকার তথ্য স্পষ্ট। এতে যুদ্ধাপরাধী, জামায়াত ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসের কানেকশন থাকার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সরকারের পতন ঘটানোর লক্ষ্য নিয়ে জঙ্গীদের দিয়ে বিদেশীদের জিম্মি করার পর হত্যা করানোর ঘটনাটি ছিল রাজনৈতিক দলের ছক। নেপথ্যে থাকা রাজনৈতিক দলের ছক কষা ফাঁদে ফেলে ধর্মের নামে জিহাদে উদ্বুদ্ধ করে ধর্মপ্রাণ ছাত্র-যুবকদের একাংশকে জঙ্গী গোষ্ঠীতে পরিণত করাটার মধ্যে আছে একটা নীল নক্সা। এসব ছাত্র-যুবকদের মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে উন্মত্ততা সৃষ্টি ও বিভ্রান্ত করে জঙ্গী সদস্য বানানোর পরিকল্পনাটি দীর্ঘদিনের। দীর্ঘদিনের প্রস্তুতিতেই গুলশান, শোলাকিয়াসহ একের পর এক জঙ্গী হামলা ঘটাচ্ছে নেপথ্যে থাকার রাজনৈতিক গোষ্ঠী। গুলশান ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কিংবা পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত আছে এমন জঙ্গী গোষ্ঠীর সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে এই ধরনের তথ্য পাওয়ার পর জঙ্গী নেটওয়ার্কের সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দারা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান বলেছেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ৬ নম্বর সড়কের ব্লক- ই-এর ৩ নম্বর হোল্ডিংয়ের এ/৬ নম্বর ফ্ল্যাটে বালুভর্তি কার্টন এবং জঙ্গীদের কাপড়সহ বিভিন্ন মালামাল পাওয়া গেছে। সেখানে গুলশানে হামলাকারীরা মিলিত হয়েছিলেন। আর বালুভর্তি এসব কার্টনে হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড রাখা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর রাজধানীর মিরপুরের ৪৪১/৮ পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বাসাতেও ‘জঙ্গীদের ব্যবহৃত হাতে তৈরি গ্রেনেড, কালো রঙের পোশাক’ পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছুই বলা যাচ্ছে না। তদন্তের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার মাস্টারমাইন্ডরা চিহ্নিত।
×