ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জনপ্রশাসন পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

জঙ্গী-সন্ত্রাস প্রতিরোধ করে জনজীবনে শান্তি আনবই

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৪ জুলাই ২০১৬

জঙ্গী-সন্ত্রাস প্রতিরোধ করে জনজীবনে শান্তি আনবই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি মাথায় রেখে কাজ করতে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, যে কোন মূল্যে জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ করে জনজীবনে শান্তি-নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনা হবে। কোন ধরনের জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসী কর্মকা- আমরা বাংলাদেশের মাটিতে হতে দেব না। জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদ যে নামে, যেভাবেই আসুক না কেন, তাদের আমাদের দমন করতেই হবে, আর সেটা আমরা করবই। এক্ষেত্রে প্রত্যেককে স্ব স্ব স্থানে এবং মাঠ পর্যায়ে যারা আছেন তাদের ধর্মের প্রকৃত শিক্ষাটা যেন মানুষ পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করব- এটা মাথায় রেখেই আমাদের কাজ করতে হবে। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদও দেন প্রধানমন্ত্রী। শনিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে উৎসাহ প্রদানের নিমিত্তে দেশে প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত ‘জনপ্রশাসন পদক ২০১৬’ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। জনজীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকারের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী সরকারী কর্মকর্তাদের প্রভু হিসেবে নয়, জনগণের সেবক হিসেবে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন এবং সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুত নিষ্পত্তিতে আন্তরিক হওয়ার জন্য প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। ধর্মের নামে জঙ্গীবাদী তৎপরতার নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ খুন করে (কেউ যদি মনে করে থাকে) বেহেশতে গিয়ে হুর পরি পাবে, তা কখনও হবে না। এটা মোটেই ইসলামের শিক্ষা না। প্রধানমন্ত্রী স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৩০ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই পদক বিতরণ করেন। পদকপ্রাপ্তরা কেউ অবদান রেখেছেন কৃষি খাতে, কেউ তথ্যপ্রযুক্তি, আবার কেউবা ভোগান্তি কমিয়েছেন সরকারী সেবা নিতে আসা সাধারণ নাগরিকদের। দেশের জন্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে প্রথমবারের মতো জাতীয় পর্যায়ে ১৩ এবং জেলা বা মাঠ পর্যায়ে ১৭ জন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেয়া হলো জনপ্রশাসন পদক। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বিভিন্নমুখী কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এই পদক সেসব কর্মসূচীর কর্মীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়াবে, উৎসাহ-উদ্দীপনাও বাড়বে। যারা পুরস্কৃত হলেন তাদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এই পদক। আগামীতে আরও পুরস্কার দেয়া হবে। মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, অবশ্যই আমরা তা পারব। তা যে পারি, সেটা বিশ্বকে আমরা দেখিয়েছি। আমরা বিজয়ী জাতি, আমরা নিম্নে থাকব না, উর্ধে উঠব। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বিশ্ব প্রতিযোগিতামূলক। এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে আমাদেরও সেই প্রতিযোগিতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশকে পৌঁছে দিতে সবাইকে সেবার মনোভাব নিয়ে কর্মস্পৃহা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। সবাইকে সেবার মনোভাব নিয়ে দায়িত্ব পালন করার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি দিয়েছি। ১২৩ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করেছি। আমরা যে বাজেট বা কর্মসূচী হাতে নেই তা যেন দ্রুত বাস্তবায়ন হয়, এটিই চাই। এজন্য কর্মীদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। শুধু চাকরির স্বার্থে চাকরি নয়, জনগণের জন্য কাজ করা পবিত্র দায়িত্ব, সে হিসেবে কর্মসম্পাদন করতে হবে। তিনি বলেন, প্রশাসনের কর্মচারীদের সম্মানজনক পদবি ছিল না, কর্মচারীদের পদবি পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রত্যেকটি পদের নাম পরিবর্তন করে সম্মানজনক পদবি আমরা দিয়েছি। আমরা প্রায় সর্বক্ষেত্রে এটি করেছি, সরকারী এবং বেসরকারী উভয় ক্ষেত্রেই। সরকারী কর্মীদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নানামাত্রিক প্রশিক্ষণে জোর দিয়েছি। বিশ্ব প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে এবং তার সঙ্গে তাল মিলিয়েই আমাদের চলতে হবে। আজকের বিশ্ব প্রতিযোগিতামূলক। প্রতিযোগিতামূলক এই বিশ্বে টিকে থাকতে হলে আমাদেরও তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আর এতে প্রশিক্ষণের ওপর আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মাত্র ১০ ঘণ্টার মধ্যে গুলশানে জঙ্গী হামলার ঘটনার সমাপ্তি টেনে বিদেশী নাগরিকসহ অনেক জিম্মিকে জীবন্ত উদ্ধার তাঁর সরকারের সাফল্য হিসেবে তুলে ধরে বলেন, আমি মনে করি, বাংলাদেশ বোধহয় পৃথিবীতে একমাত্র দেশ যেখানে ১০ ঘণ্টার মধ্যে সেই জঙ্গী দমন করে অনেক জিম্মির জীবনকে রক্ষা করতে পেরেছি। এ ধরনের ঝামেলা মোকাবেলায় সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি। জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদ দমনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে জনজীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকারের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী সরকারী কর্মকর্তাদের প্রভু হিসেবে নয়, জনগণের সেবক হিসেবে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন এবং সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুত নিষ্পত্তিতে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান। জনপ্রশাসনমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমান এমপি, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোঃ শফিউল আলম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। জনপ্রশাসন পুরস্কার হিসেবে ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের পদক, এক লাখ টাকা (জাতীয় পর্যায়ে দলগত ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত), ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জনপ্রশাসন পদক পেলেন যাঁরা ॥ ব্যক্তিগত শ্রেণীতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল কার্যক্রমে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে জনপ্রশাসন পদক পেয়েছেন বিসিএস (প্রশাসন) একাডেমির উপ-পরিচালক রহিমা খাতুন (সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সোনাইমুড়ী, নোয়াখালী)। একই শ্রেণীতে ‘কৃষকের ডিজিটাল ঠিকানা’ সফ্টওয়ার উদ্ভাবন ও পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জনপ্রশাসন পদক পেয়েছেন সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা কৃষি অফিসার শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী (সাবেক কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ)। দলগত শ্রেণীতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সেবাসমূহ কম খরচে, কম সময়ে ভোগান্তিহীনভাবে জনগণকে প্রদানের উদ্দেশ্যে সফ্টওয়ার তৈরি এবং ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ ও যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বাস্তবায়নের জন্য ৫ জনকে জনপ্রশাসন পদক প্রদান করা হয়েছে। দলনেতা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রামের (এটুআই) পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান (সাবেক জেলা প্রশাসক, যশোর), সদস্য হিসেবে পদক পেয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জাহিদ হোসেন পনির (সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, শিক্ষা ও আইসিটি, যশোর), বিসিএস প্রশাসন একাডেমির সহকারী পরিচালক জি এম সরফরাজ (সাবেক সহকারী কমিশনার, আইসিটি, যশোর), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব তন্ময় মজুমদার (সাবেক সহকারী কমিশনার, আইসিটি, যশোর), যশোর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী প্রোগ্রামার মোতাহার হোসেন। উদ্ভাবনী প্রয়াসে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে ‘রেডিও নারায়ণগঞ্জ’ প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য দলগতভাবে জনপ্রশাসন পদক পেয়েছেন ৪ জন। দলনেতা নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান মিঞা, সদস্য হিসেবে পদক পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শাহীন আরা বেগম, সহকারী কমিশনার জয়া মারীয়া পেরেরা ও সহকারী কমিশনার ফারহানা আফসানা চৌধুরী। প্রাতিষ্ঠানিক শ্রেণীতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রসারে অবদান রাখায় এ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম এবং বার্ষিক কর্মসম্পাদক চুক্তি প্রবর্তনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়াধীন গবর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিট জনপ্রশাসন পদক পেয়েছে। ব্যক্তিগত শ্রেণীতে জেলা পর্যায়ে জনপ্রশাসন পদক পেয়েছেন পঞ্চগড় সদর উপজেলা সমবায় অফিসার মামুন কবীর, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজীব কুমার সরকার, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদুর রহমান, সওজ’র যুগ্ম সচিব এবং ফেনীর সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবির খন্দকার, ‘ম্যাস রাপিড ট্রানজিট’ প্রকল্পের সমন্বয়ক এবং ফেনীর সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ এনামুল হক, ফেনী ফ্যামিলি প্লানিং অধিদফতরের উপ-পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী, ফেনী সদরের ইউএনও পিকেএম এনামুল করিম, ফেনী সদরের লেমুয়া ইউনিয়নের সাব এসিট্যান্ট কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ রবীন্দ্রনাথ দত্ত, ফেনী চুনুয়া ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক পরিদর্শক মীর আজম হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক এবং রংপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক ফরিদ আহমেদ, এডিসি রেভেনিউ রংপুর মোস্তাইন বিল্লাহ, এডিসি রেভেনিউ শেরপুর এবং রংপুর পীরগঞ্জের সাবেক ইএনও এটিএম জিয়াউল ইসলাম, দিনাজপুরের বোচাগঞ্জের ইউএনও এবং সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ রাশেদুল ইসলাম ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম গোলাম কিবরিয়া। টেকনিক্যাল ফিল্ডের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক্সেস টু ইনফর্মেশন (এটুআই) প্রকল্পকে পুরস্কৃত করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক পিএমও কবির বিন আনোয়ার প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। সাধারণ ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠান হিসেবে চট্টগ্রাম কর কমিশনারের কার্যালয়ের কর অঞ্চল-২ এবং জয়পুরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পুরস্কার লাভ করে। এছাড়া খাগড়াছড়ি মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বি এম মশিউর রহমান ব্যক্তি পর্যায়ে টেকিনিক্যাল ক্ষেত্রে অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে জনপ্রশাসন পদক গ্রহণ করেন। পদক প্রদান শেষে পুরস্কারপ্রাপ্তরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফটোসেশনও করেন।
×