ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সমন্বিত চেকপোস্ট

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ২৪ জুলাই ২০১৬

সমন্বিত চেকপোস্ট

বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দরের সমন্বিত চেকপোস্টের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলো বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিল্লী থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এটির উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে প্রতিবেশী দুটি রাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক আরও সুসংহত হলো। দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় ৪২ হেক্টর জমির ওপর তৈরি এই আধুনিক চেকপোস্টের রয়েছে নানা সুযোগ-সুবিধা। এর মধ্যে ট্রাক টার্মিনাল, এয়ারকন্ডিশন ওয়্যার হাউস, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট জোন ও স্ক্যানিং মেশিনসহ বিশ্বের আধুনিক বন্দরের সব সুযোগ-সুবিধা বহাল থাকছে। ইতোপূর্বে এ পথে শুধু রফতানি বাণিজ্য শুরু হলেও এখন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমদানি-রফতানি দুটোই শুরু হতে যাচ্ছে, যা উভয় দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কে গতি আনবে। বাংলাদেশ ও ভারত দক্ষিণ এশিয়ার দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র। দুটি দেশ একই সঙ্গে সার্ক, বিমসটেক, আইওরা এবং কমনওয়েলথের সাধারণ সদস্য। বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও ত্রিপুরা রাজ্যে বাংলা ভাষা ব্যবহার হয়ে থাকে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী জোটের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের এক কোটি উদ্বাস্তুকে আশ্রয়দান ও স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ ২৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তি, ১৯৭৪ সালের ১৬ মে মুজিব-ইন্দিরা সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক উদারীকরণের সূত্রপাতের সঙ্গে তা বৃহত্তর প্রবৃদ্ধি ও বাণিজ্যের উদ্ভব ঘটায়। বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশই সন্ত্রাসবাদবিরোধী কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ভূমিকা রাখছে। তারা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে নব দিগন্তের সূচনা হয়। বন্ধুদেশ হিসেবে ব্যবসায়িক সুযোগ সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক যোগাযোগ বাড়াতে সক্ষম হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর নয়াদিল্লীর হায়দরাবাদ হাউসে দেশ দুটির মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের বর্তমান সম্পর্ককে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করা চলে। ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় প্রতিশ্রুত ১১টি উন্নয়ন সহযোগী উদ্যোগের ৮টি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বাকি চারটিতেও হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। নরেন্দ্র মোদির ঐতিহাসিক সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে মত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই তো সেদিন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে ঐতিহাসিক হিসেবে অভিহিত করে আমাদের রাষ্ট্রপতি বলেছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল ও ভারত (বিবিআইএন) উদ্যোগসহ দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক বহুমাত্রিক হচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যের বিকাশ বিষয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর অভিমতÑ ‘পুরো দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশ হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর কা-ারী। ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও ওপরে যাবে। আর্থিক বিকাশ ও কানেক্টিভিটি একে অন্যের সঙ্গে জড়িত। এ বন্দর শুধু বাণিজ্যকে না বরং আমাদের দুই দেশের মানুষের মধ্যেও সম্পর্কের বিকাশ ঘটাবে।’ পক্ষান্তরে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেনÑ ‘কথায় আছে বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী, বাণিজ্য যত বাড়বে দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার তত উন্নতি হবে।’ উভয় নেতার বিচক্ষণতা, আন্তরিকতা এবং পারস্পরিক বন্ধুত্বের ফলে উভয় দেশ লাভবান হবেÑ এতে কোন সংশয় নেই।
×