ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নিজেদের সব প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রধারী প্রহরীর অনুমতি চায় জাপান

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২৪ জুলাই ২০১৬

নিজেদের সব প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রধারী প্রহরীর অনুমতি চায় জাপান

তৌহিদুর রহমান ॥ রাজধানীর গুলশান হামলার প্রেক্ষিতে সারাদেশের জাপানী প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। এদেশে জাপান সরকারের সকল প্রকল্প অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নিরাপত্তা ইস্যুকেই এখন প্রাধান্য দিচ্ছে দেশটি। এছাড়া তাদের সকল প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রধারী নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগের অনুমতি দেয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা করছে বাংলাদেশ। এদিকে চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় আসছেন জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিতাওকা। বাংলাদেশে বর্তমানে জাপানের প্রায় ২৪০ প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে জাপান। তবে রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁতে হামলায় ৭ জাপানি নিহত হন। এদের মধ্যে ৬ জনই ছিলেন মেট্রোরেল প্রকল্পের পরামর্শক। রাজধানীর গুলশান হামলার প্রেক্ষিতে জাপান বাংলাদেশে অবস্থিত তাদের সকল প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছে। সূত্র জানায়, রাজধানীর গুলশান হামলার পরে সারাদেশের জাপানি প্রকল্পে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশী প্রহরা বাড়াতে অনুরোধ জানিয়েছে দেশটি। এছাড়া তাদের সকল প্রতিষ্ঠানে বেসরকারী নিরাপত্তা প্রহরীদের অস্ত্রবহনের অনুমতি চেয়েছে জাপান। জাপান দূতাবাস থেকে এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়া হয়েছে। এই চিঠির বিষয়ে সরকার এখন পর্যালোচনা করছে। ঢাকার বিভিন্ন দূতাবাসে নিরাপত্তায় নিয়োজিত বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মীদের অস্ত্রবহনের অনুমতি আগে কখনও দেয়া হয়নি। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (ইউএসএআইডি) কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান নির্মমভাবে খুন হওয়ার প্রেক্ষিতে নিজ দেশের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা জোরদারে একটি বেসরকারী নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যদের অস্ত্রবহনের অনুরোধ জানিয়ে সরকারকে চিঠি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে মার্কিন দূতাবাসের ওই অনুরোধে সাড়া দেয়নি সরকার। এখন গুলশানে হামলার পরে ৭ জন জাপানি নিহতের ঘটনায় আবারও বেসরকারী নিরাপত্তা প্রহরীদের অস্ত্র বহনের অনুমতির বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় থাকলেও এখনও কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। সারাদেশে জাপানি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, সাহায্য সংস্থা ও জাইকা প্রকল্পে ইতোমধ্যেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে অবস্থিত জাপানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করেছে সরকার। বাংলাদেশে জাপানের সহযোগিতার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে সরকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছে। ইতোমধ্যেই সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে জাপানি প্রকল্পে নিñিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্দেশনাও দেয়াও হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তার জন্য নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ জাপান সরকারকে অবহিতও করা হয়েছে। গুলশান হামলার পরে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা- জাইকা প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিতাওকা জানিয়েছেন, অতীতের মতোই বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকা-ে পাশে থাকবে জাইকা। বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে তারা দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। তবে উত্তরাঞ্চলে এক জাপানি নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় জাইকা কর্মীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা সত্ত্বেও গুলশান হামলার ঘটনায় তিনি গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে এ মুহূর্তে জাইকা কর্মীদের নিরাপত্তা প্রদানই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। এদিকে জাইকা প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিতাওকা আগামী ৬-৭ আগস্ট দুই দিনের সফরে ঢাকা আসছেন। রাজধানীর গুলশানে সন্ত্রাসী হামলায় সাত জাপানি নিহতের ঘটনার পর বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন তিনি। এছাড়া ভবিষ্যতে সহায়তা কার্যক্রম বিষয়েও বাংলাদেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন জাইকার প্রেসিডেন্ট। সূত্র জানায়, বাংলাদেশে উন্নয়ন কার্যক্রমে অংশ নেয়া জাইকার বিভিন্ন প্রকল্প পর্যবেক্ষণ করবেন শিনিচি কিতাওকা। তবে জাইকা কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তার সফরের মূল লক্ষ্য বলে জানা গেছে। ভবিষ্যতে যেন বাংলাদেশে কোন জাপানি নিহত না হন, সে বিষয়ে সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপ আশা করছে জাইকা। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন শিনিচি কিতাওকা। এসব আলোচনার মধ্যে শীর্ষে থাকবে নিরাপত্তার বিষয়। বাংলাদেশে অবস্থানরত জাইকার কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট। উল্লেখ্য, গত পহেলা জুলাই ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় জঙ্গী হামলায় নিহতদের মধ্যে ৭ জন ছিলেন জাপানি নাগরিক। হামলায় আরও একজন জাপানি নাগরিক আহত হন। ওই ৮ জাপানি নাগরিক জাইকার বিভিন্ন জরিপ প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে কাজ করতেন। ওই সময় তাঁদের কাজ ছিল ঢাকার মেট্রোরেল প্রকল্প জরিপে সহায়তা করা। এর আগে গত বছর অক্টোবরে রংপুরে সন্ত্রাসী হামলায় হোশি কোনিও নামে এক জাপানি নাগরিক নিহত হন। এরপর থেকেই বাংলাদেশ সরকার নিরাপত্তা জোরদার করে। একই সঙ্গে জাইকার পক্ষ থেকে তাদের সকল কর্মকর্তাকে সতর্কও করা হয়েছিল।
×