ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শোভনের চিত্রভাষ্যে উদ্ভাসিত জীবনের অপূর্ণতা

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৩ জুলাই ২০১৬

শোভনের চিত্রভাষ্যে উদ্ভাসিত জীবনের অপূর্ণতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোন এক গ্রামের অখ্যাত এক বাউল। কাঁধে তার জড়ানো গামছা আর গলায় ঝুলছে দোতারা। প্রাণ খুলে সুরে তুলেছে মিষ্টিমধুর শব্দ তোলা বাদ্যযন্ত্রটিতে। সুরের আনন্দ উপভোগে মনোযোগী শ্রোতা হয়ে বাউলের পাশে বসে গেছে দুই শিশু। আরেক ছবিতে দেখা মেলে ছিন্নমূল একঝাঁক পথশিশু। কাজের অবসরে চায়ের কাপে চুমুক দিয়েছে দুই শিশু। আরেকটি চিত্রকর্মে কোন দুর্যোগের পূর্বে শিশু সন্তানকে পরম মমতায় কোলে নিয়ে বসে আছেন এক মা। জীবনের কথা বলা এমন সব চিত্রকর্ম এখন শোভা পাচ্ছে ধানম-ির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে। ছবিগুলো এঁকেছেন বিটপ শোভন। তরুণ এই চিত্রশিল্পীর যাপিত জীবনের নানা বিষয়ভিত্তিক শিল্পকর্মগুলো নিয়ে শুক্রবার থেকে শুরু হলো প্রদর্শনী। শিরোনাম ‘জীবনে যা চাই, আর যা পাই’। শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. অসীম সরকার। দীর্ঘ সময় ধরে শোভন সমাজের মানুষের মন ও মনন নিয়ে কাজ করে আসছেন। শিল্পী দেখেছেন যে মানুষ চায় এক আর পায় আর এক, যা তাকে অসুখী করে তোলে। ব্যক্তি মানুষের এই অপূর্ণতা একটি অসুখী সমাজের কারণ। এই কারণটিই শিল্পীর ছবির মূল ভাবনা। শোভন বাছাড় আরও দেখেছেন যে সামাজিক প্রথা, রীতি এবং আচার কখনও কখনও মানুষের মনে এক স্থবিরতার জন্ম দেয়। কখনও বা মানব মনে প্রথা বিরুদ্ধ ইচ্ছার উন্মেষ ঘটে বাস্তবিকী যা অর্জন করা সম্ভব নয়। যদিও শ্বাশত মানবাত্মা তার গন্তব্যের সঙ্গে সমঝোতা করার জন্য তৈরি নয়। সামাজিকভাবে বহুল প্রতিষ্ঠিত সম্পর্কগুলো যেমন, মা-শিশু, স্বামী-স্ত্রী, শিল্পী ভিন্ন আঙ্গিকে দেখাতে চেয়েছেন যেখানে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একজন আরেকজনের বাধা হয়ে ওঠে, কখনও বা প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে। এছাড়া শোভন তরুণীর সহজাত সৌন্দর্যকেও উপজিব্য করেছেন তার চিত্রকলায়। প্রদর্শনীতে মোট ১৮টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে। মাধ্যম হিসেবে শিল্পী তেল রং বেছে নিয়েছেন। শিল্পী সমাজে ব্যক্তি মানুষের অপূর্ণতার পাশাপাশি অনুভূতিকে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন যা তার আবেগকে অনুপ্রাণিত করেছে। প্রদর্শনীটি চলবে ২ আগস্ট পর্যন্ত। সোম থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত। মাজহার ইসলামের ‘রাজনীতি’ উপন্যাসের প্রকাশনা ॥ প্রকাশিত হলো রাজনীতি শীর্ষক মাজহার ইসলামের প্রথম উপন্যাস। এ উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার মিলনায়তনে বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। অধ্যাপক আবুল বারকাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনা করে প্রখ্যাত কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন, অধ্যাপক এমএম আকাশ, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক অজয় দাশগুপ্ত, সাবেক ছাত্র নেতা মানবেন্দ্র দেব ও বইটির প্রকাশনা সংস্থা প্লাটফর্মের উপদেষ্টা মহসীন হাবীব। সভাপতির বক্তব্যে আবুল বারকাত বলেন, চলমান রাজনীতি অসুস্থ। সে কারণে গহীনে অন্ধকার, গভীর উদ্বেগ ও চরম অনিশ্চিয়তার মধ্যে বাংলাদেশ। কর্তৃত্বপরায়ন রাজনীতি কিংবা কতিপয় তান্ত্রিক রাজনীতিÑ এভাবে রাজনীতির যত নেতিবাচক দিক আছে এদেশে তার সবই বিদ্যমান। সেই সঙ্গে বিদ্যমান আছে অর্থনীতির অসম স্ট্রাকচারে শ্রেণীবিভক্ত সমাজ। ক্রমবর্ধমান এই বৈষম্য চলতে থাকলে দেশের পরিণতি কী হবে তা কী আর বুঝবার বাকি আছে কারো? সেলিনা হোসেন বলেন, উপন্যাসটির শুরুতেই মাজহার চমক দিয়েছেন। বলা যায় উপন্যাসে এটা নতুনরকম শুরু। তাঁর লেখার সক্ষমতা সম্পর্কে আমি অন্যভাবে জানতাম। আমি তার লেখা কাব্যগ্রন্থ ‘গণপ্রজাতন্ত্রী নিঃসঙ্গতা’ পড়ে মুগ্ধ হয়েছে। তখন অবাক হয়েছিলাম যে এভাবেও ভাবনার প্রকাশ করা যায়। উপন্যাসটির সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই উপন্যাসের ভাল অনেক দিক আছে। অনেকেও বলেছেনও। আমি বলব এই উপন্যাসে জীবনঘনিষ্ট কাহিনী বা জীবনের যাতনা, আনন্দ এসবের বর্ণনা থাকলে উপন্যাসটি আরও সুন্দর হতে পারত। অজয় দাশগুপ্ত বলেন, রাজনীতির একটা সুসময় ছিল। আমরা সে সময় রাজনীতি করেছি। পঁচাত্তর পূর্ববর্তী সময়ে রাজনীতিতে আদর্শ ছিল। মাজহার সে প্রজন্মের নয়, সে যে উপন্যাসটি লিখেছে তাঁর সমকালের রাজনীতির কথা তুলে অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যবোধ থেকে তুলে ধরেছেন। অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, মাজহারকে আমি কবি হিসেবে জানি। আমি বলব সে মূলত কবি এবং উপন্যাসেও তার কাব্যিক উপস্থাপনের ছাপ রেখেছেন। অনুভূতি প্রকাশ করে মাজহার ইসলাম বলেন, লেখক হিসেবে আমার যা বলার তা বইয়ের মাধ্যমে তুলে ধরেছি। নতুন করে কিছু বলার নেই। যেহেতু আমাকে বলতে বলা হয়েছে সে কারণে আমি বলব আমার সমকালের রাজনীতির দহনকে আমি স্থান দিয়েছি। এ সময় তিনি তাঁর লেখা ‘প্রজাতন্ত্রের গান’ শীর্ষক কবিতাটি পাঠ করেন। বইটি প্রকাশ করেছে প্লাটফর্ম প্রকাশনী। চারু পিন্টুর প্রচ্ছদে বিন্যাসিত গ্রন্থটির মূল্য রাখা হয়েছে ৪০০ টাকা। আবৃত্তিসন্ধ্যা ‘বিনম্র রোদের ছায়া’ ॥ শুক্রবার সন্ধ্যায় সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হলো বিনম্র রোদের ছায়া শীর্ষক আবৃত্তিসন্ধ্যা। নবীন আবৃত্তিশিল্পীদের বাচিক, উপস্থাপনা ও আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস হিসেবে নিয়মিত এ অনুষ্ঠানের বিশতম পর্বের আয়োজন করে চারুকণ্ঠ আবৃত্তি সংসদ। এদিনের পর্বটি সাজানো হয় কবি মজিদ মাহমুদের কবিতা থেকে। অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করেন চারুকণ্ঠের এম মোর্শেদ, আনোয়ার পারভেজ, গুলশান আরা লুনা, পদ্মাবতী দেবী, সাইফুল ইসলাম, মোঃ ইস্তাকুর রহমান, মিজানুর রহমান মিঠুন, মোঃ মাঈন উদ্দীন, এসএম সজীব, আমেনা আক্তার জাকিয়া, মোঃ ফরিদ আলম ও মোঃ মুরাদ হোসেন। বিশেষ পর্বে আবৃত্তি করেন স্রোত আবৃত্তি সংসদের আজিম রানা, মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের আবু তাহের আকাশ, স্বনন ঢাকার হাসান মেহেদী লাল্টু এবং চারুকণ্ঠ আবৃত্তি সংসদের তাবাস্সুম মুন্নী । সাধনার ‘নূপুর বেজে যায়’ ॥ শুক্রবার বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হলো নৃত্যদল সাধনার মাসিক নৃত্যানুষ্ঠান ‘নূপুর বেজে যায়’। জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে ৫২তম পর্বটি সাজানো কবি নজরুলের সৃষ্টির আশ্রয়ে। মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির সমন্বয়ে পরিবেশিত হয় বাবুলাল চৌধুরী পরিচালিত ‘চিন্তক’ গোষ্ঠীর পরিবেশনা।
×