ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের শামিল

তারেকের দণ্ডের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ আদালত অবমাননা

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৩ জুলাই ২০১৬

তারেকের দণ্ডের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ আদালত অবমাননা

আরাফাত মুন্না ॥ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে হাইকোর্টের দেয়া সাত বছর কারাদ-ের রায়ের বিরুদ্ধে দলটি যে বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে তা আদালত অবমাননার শামিল বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা। আদালতের রায়কে প্রতিহিংসামূলক বলে বিএনপি নেতারা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাও আদালতের চরম অবমাননা বলে মনে করছেন তারা। আদালত অবমাননার এ অভিযোগে বিএনপির ওই নেতাদের গ্রেফতারেরও দাবি জানিয়েছেন অনেক আইনজীবী। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অবশ্যই আদালত অবমাননার শামিল। তিনি বলেন, যে রায় তাদের পক্ষে যায় সেটাকে তারা খুব ভাল রায় বলেন। আর যে রায় বিপক্ষে যায়, সেটাকেই বলেন সরকারের ষড়যন্ত্র, প্রতিহিংসা। আইনমন্ত্রী বলেন, বিএনপি কোনদিনই আইনের শাসনে বিশ্বাসী ছিল না, এখনও নেই। বিএনপির নেতাকর্মীরা নিজেদের আইনের উর্ধে মনে করেন বলেও মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, তারা নিজেদের ভাগে তালগাছ রেখে সব মানতে রাজি আছেন, আসলে তালগাছ তো তাদের নয়, আইনের। রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচী দেয়ার বিষয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বিচারপতিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে বলেও জানান তিনি। ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম জনকণ্ঠকে বলেন, একটি আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি যে বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা দিয়েছে তা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত অবমাননা। তিনি বলেন, বিএনপি নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন, সরকারের ষড়যন্ত্রে এ রায় এসেছে। স্বাধীন বিচার বিভাগে সরকারের কোন হস্তক্ষেপ নেই। তাই এ ধরনের বক্তব্য প্রদানকারীরাও আদালত অবমাননার অপরাধ করেছেন। এসব কর্মকা-ে যারা জড়িত, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যেভাবেই হোক; সকলেই আদালত অবমাননার দায়ে শান্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এ কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িতদের বিচার ও শাস্তির ব্যবস্থা করা না হলে অনেকেই আদালতের আদেশ ও আইন অমান্য করতে উৎসাহিত হবে বলে মন্তব্য করেন এ ফৌজদারি আইন বিশষজ্ঞ। সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক এ্যাডভোকেট রবিউল আলম বুদু জনকণ্ঠকে বলেন, আদালতের আদেশ সকলের মানতে হবে। কেউ না মানলে তা আদালত অবমাননার অপরাধ হবে। বিএনপিও এখানে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচী দিয়ে আদালত অবমাননার অপরাধ করেছে। এজন্য অবশ্যই তাদের শাস্তি পাওয়া উচিত। বিএনপির ওই নেতাদের দ্রুত গ্রেফতারেরও দাবি জানান এ আইনজীবী। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যকরী সদস্য ব্যারিস্টার খান মুহাম্মদ শামিম আজিজ জনকণ্ঠকে বলেন, তারেক রহমানকে যে সাজা হাইকোর্ট দিয়েছে তা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ীই দেয়া হয়েছে। এ রায়কে সরকারের ষড়যন্ত্র বলে বিএনপি নেতারা বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছেন। তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায়ের আগে নিম্ন আদালতে তারেক রহমানের বিচার হয়েছিল। হাইকোর্ট এখানে আপীল কোর্ট। এর পরেও আপীল বিভাগ রয়েছে। তারেক রহমান চাইলে সেখানে যেতে পারে। শামিম আজিজ বলেন, তবে তারা সেটা না করে বিক্ষোভ কর্মসূচী দিয়েছেন, যা আদালত অবমাননার শামিল। তিনি আরও বলেন, এছাড়া বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ততটা ভাল না, তাদের এ বিক্ষোভ কর্মসূচীর মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে বলেও মন্তব্য করেন এ আইনজীবী। উল্লেখ্য, অর্থপাচার মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জেল-জরিমানার প্রতিবাদে শনিবার ঢাকা মহানগরীসহ সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিলের ঘোষণা দিয়েছে দলটি। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শুক্রবার সকালে পূর্বনির্ধারিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ কর্মসূচী ঘোষণা করেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এর আগে বৃহস্পতিবার তারেক রহমানকে সাত বছর কারাদ- দিয়ে হাইকোর্ট রায় দেয়ার পর বিএনপি নেতারা এ রায়কে প্রতিহিংসামূলক বলে মন্তব্য করেন। রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ রায় প্রতিহিংসামূলক। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সরকারের ইচ্ছাপূরণের জন্য প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে দুদকের মাধ্যমে আপীল করে নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাজা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এর পর শুক্রবার বিএনপি নেতা হান্নান শাহ এক অনুষ্ঠানে হাইকোর্টের এ রায়কে সাজানো নাটক বলে মন্তব্য করেছেন।
×