ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খনিজ বালু আহরণের কাজ পেতে তৎপর প্রিমিয়ার মিনারেলস

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৩ জুলাই ২০১৬

খনিজ বালু আহরণের কাজ পেতে তৎপর প্রিমিয়ার মিনারেলস

রশিদ মামুন ॥ অনুসন্ধান লাইসেন্সের আবেদন বাতিল করে দেয়ার পর আবারও খনিজ বালু আহরণে সরকারের অনুমতি পেতে তৎপরতা শুরু করেছে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক অস্ট্রেলীয় কোম্পানি প্রিমিয়ার মিনারেলস লিমিটেড। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় খনিজ বালুর মজুদ রয়েছে দেশের উপকূলীয় এলাকায়। প্রিমিয়ার মিনারেলস বালু প্রক্রিয়া করে খনিজ আহরণের জন্য সরকারকে প্রস্তাব দেয়। তবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আপত্তির প্রেক্ষিতে ব্যুরো অব মিনারেল ডেভেলপমেন্ট (বিএমডি) উপকূলীয় ভোলা এবং পটুয়াখালী জেলার বালু উত্তোলনের ওই আবেদন বাতিল করে দেয়। সরকারী সূত্রগুলো বলছে, দেশের উপকূলীয় এলাকায় পৃথিবীর সব থেকে বেশি খনিজ বালুর মজুদ থাকার বিষয়ে সরকারের ধারণা রয়েছে। তবে সেখানে কি পরিমাণ সম্পদ মজুদ রয়েছে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন গবেষণা নেই। বিভিন্ন সময়ে এই খনিজ বালুর সম্ভাবনা নিয়ে বিদেশী কোম্পানি আগ্রহ দেখিয়ে আসছে। বিএমডি সূত্র বলছে, এর আগেও প্রিমিয়ার মিনারেলসকে নরসিংদী এবং চাঁপাই নবাবগঞ্জে অনুসন্ধানের জন্য লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল তবে তারা সরকারের বাৎসরিক ফি পরিশোধ করেনি। তাদের খেলাপী বলে উল্লেখ করেন বিএমডির নাম প্রকাশে এক জন কর্মকর্তা। খনিজ সম্পদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের অভ্যন্তরের বালিতে তেমন কোন খনিজ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিদেশী কোম্পানিগুলোর আসল লক্ষ্য উপকূলীয় এলাকার বালু। তারা দেশের মধ্যের লাইসেন্স নিলেও সেখানে কাজ করে না। তারা দেশের মধ্যের লাইসেন্স নিয়ে দেখাতে চায় এখানে অনেক দিন ধরে কাজ করছে। এর ভিত্তিতে উপকূলীয় এলাকায় বালু থেকে খনিজ আহরণের লাইসেন্স চায়। বিএমডির একজন কর্মকর্তা জানান, ভোলা এবং পটুয়াখালীতে বালু থেকে খনিজ আহরণের জন্য পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন প্রয়োজন ছিল। প্রিমিয়ার মিনারেলস ওই অনাপত্তিপত্র যোগাড় করতে না পারায় স্থানীয় জেলা প্রশাসকরা আপত্তি তোলায় সরকার তাদের আবেদন বাতিল করে দিয়েছে। গত ১৩ জুলাই বিএমডির পরিচালকের আছে প্রিমিয়ার মিনারেলস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গ্রান্ট ফিগত্রি একটি চিঠি লেখেন। ওই চিঠিতে তাদের লাইসেন্সের আবেদন বাতিলের খবরে বিস্ময় প্রকাশ করে তা ফিরে পাওয়ার আব্দার জানান। আবেদনের সঙ্গে স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের অনাপত্তিপত্র জামা দেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপকূলের বালুতে বিপুল পরিমাণ খনিজ রয়েছে। তবে কি পরিমাণ খনিজ আহরণ করা যেতে পারে সে সম্পর্কে কোন গবেষণা নেই। সঙ্গত কারণে আগে পরীক্ষা করে দেখা উচিত। যাতে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ সংরক্ষিত হয়। এরপর ইজারা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। দেশে সিরামিক এবং রঙশিল্প ছাড়াও বিভিন্ন শিল্পে এসব খনিজের বিপুল চাহিদা রয়েছে, এখন যার পুরোটাই আমদানি করা হয়। ভবিষ্যতে এসব খনিজ থেকে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের জ্বালানিও পাওয়া যেতে পারে। বালু প্রক্রিয়াজাত করে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার খনিজ আহরণ সম্ভব বলে জানা গেছে। এই খনিজ বালুকে মহামূল্যবান কালো সোনা মনে করা হয়। ভারতের তামিলনাড়ু, উড়িষ্যা ও কেরালায় বালু থেকে খনিজ আহরণ করা হচ্ছে। এছাড়া শ্রীলঙ্কায় একইভাবে খনিজ আহরণ হচ্ছে। আমাদের এখানে অনেক দিন ধরে চেষ্টা করেও আমরা কিছু করতে পারছি না। দেশে এ বিষয়ে কোন নীতিমালা নেই বলে জানগেছে। জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রিমিয়ার মিনারেলস এর আগে ২০০৯ থেকে ২০১০ সালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও দ্বীপের বালু উত্তোলন করার জন্য অন্তত ১১টি খনিজ লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করেছিল। সরকার এর একটিতেও সাড়া দেয়নি। তবে প্রিমিয়ার মিনারেলসের দাবি, তাদের প্রতিষ্ঠানকে কক্সবাজারের টেকনাফের খনিজ বালু বাণিজ্যিকভাবে আহরণের নিশ্চয়তা দিয়েছিল সরকার। এর আগে জ্বালানি বিভাগে দেয়া এক চিঠিতে বলা হয়, যদি সরকার খনিজ বালু থেকে খনিজ আহরণের অনুমতি দেয় তাহলে এ থেকে প্রাপ্ত জিরকন, রুটাইল ও গারনেটের আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ সেরা নেতৃত্ব দিতে পারবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সম্মান বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের সমুদ্রের খনিজ বালু থেকে খনিজ আহরণ করে বিশ্ববাজারে ভারত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিয়েছে। অথচ ভারতের খনিজ বালু থেকে বাংলাদেশের বালু অনেক সমৃদ্ধ। কারণ বাংলাদেশের সাগর অঞ্চল দিয়েই হাজার বছর ধরে এই বালু ভারতের উড়িষ্যা সমুদ্র সৈকতে স্থান নিয়েছে।
×