ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন

পদ্মা সেতুর নির্মাণযজ্ঞে ভারি যন্ত্র বাড়ছে, অগ্রগতি ২৮ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৩ জুলাই ২০১৬

পদ্মা সেতুর নির্মাণযজ্ঞে ভারি যন্ত্র বাড়ছে, অগ্রগতি ২৮ শতাংশ

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর নির্মাণযজ্ঞে ভারি যন্ত্র বাড়ছে। আমেরিকা থেকে শুক্রবার এসে পৌঁছেছে ভারি যন্ত্র ড্রাউটিং। এটি আমেরিকা থেকে থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়া হয়ে সমুদ্র পথে চট্টগ্রাম পৌঁছে। পরে নদী পথে আনা হয় মাওয়ায়। এ যন্ত্রটি নদীর তলদেশে পাইলের নিচে পাথর সঠিকভাবে স্থাপন করে। এর আগে অনুরূপ আরেকটি ড্রাউটিং আসে। এখন মূল সেতুর কাজে গতি বাড়াতে এটি আনা হয়েছে। এছাড়া উচ্চক্ষমতার আরেকটি হ্যামারসহ আরও বেশ কয়েকটি ভারি যান এ নির্মাণযজ্ঞের বহরে যোগ হচ্ছে শীঘ্রই। এদিকে ১৬ জুলাই শেষ হওয়া প্যানেল অব এক্সপার্ট তিন দিনব্যাপী সর্বশেষ সভা শেষে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অবজারভেশন দিয়েছেন। সে অনুযায়ী হুলস্থুল কাজ চলছে। জুলাইয়ের মধ্যে মূল সেতুর সব পিলারের ডিজাইন চূড়ান্ত করা হচ্ছে। মূল সেতু দৃশ্যমান প্রক্রিয়ার কাজও এগোচ্ছে। পাইল স্থাপনে মাটির বৈচিত্র্যসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলোও সমাধান হচ্ছে। একই সঙ্গে নদী শাসন এবং অন্যান্য কর্মকা-ও এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২২ পাইল স্থাপন হয়েছে। এর মধ্যে জাজিরা প্রান্তে ১৬টি এবং মাওয়া প্রান্তে ৬টি। সেতু প্রথম দৃশ্যমান হবে জাজিরা প্রান্তে। সেতুর স্প্যান চায়না পোর্টে লোড করা হচ্ছে। এ মাসের শেষের দিকে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে। পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রকল্পের বাইরে থাকা সকল বিদেশী নাগরিকদের প্রকল্প এলাকার ভেতরে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রকল্প এলাকার চারদিকে সেনাবাহিনী পুরো প্রস্তুত রয়েছে। তীরের চারদিকে ব্লক দিয়ে এলএমজি লোড করে রাখা হয়েছে। সীমান্ত এলাকার মতো পালাক্রমে রাত-দিন সেনাবাহিনী ডিউটি করছে চারদিকে। নানা কারণে নিরাপত্তা ব্যাপক বৃদ্ধি করা হয়েছে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে স্থাপন করা ৯৯ কম্পোজড ব্রিগেডের প্রায় দুই হাজার সদস্য অনবরত কাজ করছেন। সেতু কর্তৃপক্ষ জানান, প্রায় ১১শ’ বিদেশী কাজ করছেন প্রকল্পে। এদের কেউ কেউ প্রকল্পের বাইরে ভবন ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন। তাদের ভেতরে নিয়ে আসা হয়েছে। শুক্রবার সর্বশেষ জাজিরা প্রান্তে ১৬ জনকে প্রকল্প এলাকার ভেতরে আনা হয়। দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, এখন মূল সেতুর কাজে অগ্রগতি বেশি হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২৮ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়েছে। আর মূল সেতুর অগ্রগতি ৩৮ শতাংশ। পদ্মা সেতু প্রকল্পে নিয়োজিত বিদেশী নাগরিকসহ কর্মরত সকলের নিরপত্তায় সন্তুষ্ট সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে আকস্মিক সফরে এসে কর্মরত দেশী-বিদেশীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার খোঁজখবর করে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। পরিদর্শন শেষে মাওয়ায় প্রকল্পের খুঁটিনাটি সম্পর্কে সাংবাদিকদের মন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতি ৩৭ শতাংশ। ইতোমধ্যে মূল সেতুর ২২টি পাইল স্থাপন হয়েছে। ২০১৮ সালকে লক্ষ্য রেখে সেতুর কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। সেতুর কাজ চলছে সিডিউল অনুযায়ীই পরিকল্পনামাফিক। মন্ত্রী বলেন, যেভাবে কাজ এগোচ্ছে, ২০১৮ সালেই চলাচলের জন্য খুলে দেয়া সম্ভব হবে। ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ের সেতুটি চার লেনবিশিষ্ট; মূল সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এবং চওড়ায় ২২ মিটার। সেতুটিতে মোট ৪১টি স্প্যান থাকছে, যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। স্প্যান বড় হওয়ার কারণে রিইনফোর্সড কংক্রিট দিয়ে তৈরি না করে ওজন কমাতে এ সেতুটির মূল অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে স্টিল দিয়ে। তীব্র বায়ুপ্রবাহ ও ভূমিকম্পজনিত ধাক্কা মোকাবেলায় বেছে নেয়া হয়েছে ওয়ারেন ট্রাস ফর্ম। পুরো সেতুটির ভার বহন করার জন্য থাকছে ৪২টি পিলার, যার প্রতিটির নিচে থাকছে গড়ে প্রায় ৬টি পাইল। স্থানীয় সাংসদ অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি জনকণ্ঠকে জানান, পদ্মা সেতু পুরো বাঙালী জাতির ভাগ্য বদলে দেবে। আর এ সেতুর সঙ্গে রয়েছে বাঙালীর বীরত্বগাঁথা। প্রধানমন্ত্রীর সাহসী এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের পথে। পাশাপাশি এ সেতু ঘিরে পুরো এলাকায় দৃশ্যপটে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসছে। পরিবর্তন হচ্ছে মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থায়। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল হাসান বাদল জানান, পদ্মা সেতুর কাজে নিরাপত্তা আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ নিরাপত্তা বিষয়ে নানারকম পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। দুই পারেই পুলিশের পাশাপাশি পর্যাপ্ত সেনাবাহিনী রয়েছে। কাজ চলছে স্বাভাবিকভাবে। দেশী-বিদেশী নাগরিকগণ এখানে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন।
×