ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিচারককে ঘুষ দিয়ে তারেক রায় পক্ষে নিয়েছিলেন ॥ সেলিম

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৩ জুলাই ২০১৬

বিচারককে ঘুষ দিয়ে তারেক  রায় পক্ষে  নিয়েছিলেন ॥ সেলিম

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বিচারিক আদালতে ঘুষ দিয়ে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান অর্থপাচার মামলার রায় নিজের পক্ষে নিয়েছিলেন দাবি করে বলেছেন, তারেক রহমানের কাছ থেকে তিন কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে বিচারক মোতাহার হোসেন তাকে খালাস দিয়েছিলেন। কিন্তু হাইকোর্ট ওই রায় বাতিল করে তারেক ও তার বন্ধু মামুনকে সাত বছর করে সাজা দিয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর ঢাকেশ^রী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির ™ি^বার্ষিক সম্মেলনে শেখ ফজলুল করিম সেলিম এ কথা বলেন। বিচারিক আদালতে তারেক রহমানের খালাস পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘ওই যে খালেদা জিয়ার একটা পোলা আছে না, তারেক জিয়া। চোর, চুরি করে টাকা পাচার কইরা বাইরে নিছে। বিচারের সময় কী করছে জানেন? মোতাহার হোসেন নামের এক বিচারককে তিন কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে কোনমতে তারে বাঁচাবার জন্য বলছে। ওই ব্যাটা করছে কী, যেদিন রায় দিছে, ওইদিন রাতেই পালাইয়া গেছে। কেননা তিনি জানেন নিম্নআদালত যে রায় দিছে, তা ঠিকমতো দেন নাই।’ শেখ সেলিম বলেন, এই রায়ও বিএনপি মানে না। তারা বিচার, সংবিধান ও আইন-আদালত কিছুই মানে না। তারা মানে কেবল ক্ষমতায় যাওয়া। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের আহ্বানের জবাবে শেখ সেলিম বলেন, খালেদা জিয়া তো জঙ্গী, জঙ্গীদের সঙ্গে ঐক্য করতে হবে? যারা পেট্রোলবোমা মেরে দু’শতাধিক মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তাদের সঙ্গে কিসের ঐক্য? ঐক্য তো দেশের জনগণের মধ্যে ইতোমধ্যে হয়েই গেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূল করব। ‘আমরা এদেশে থাকতে পারব না’- হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েক নেতার এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে শেখ সেলিম বলেন, তারা কেবল হিন্দু কিংবা মুসলিমের ওপরই নয়, গোটা মানবজাতি ও মানবতার ওপর আক্রমণ করছে। তারা গণতন্ত্র, মানবতা ও আইনের শাসনের শত্রু। এরা তালেবান। কিন্তু এদেশে তালেবানের রাজত্ব কায়েম হবে না। হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা ক্ষণিকের জন্যও ভয় পাবেন না। আপনাদের পুরোহিত মারা গেছে, আমাদের ইমাম কী মারা যায়নি? কাজেই আপনারা এসব কথা চিন্তাও করবেন না। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা এক পরিবার হয়েছি। এদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কোন স্থান হবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শান্তির নীড় হিসেবে বাংলাদেশে সবাই একসঙ্গে বসবাস করব।’ মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন সময় ভারতের সহযোগিতা গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী লড়াইয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ^াস দিয়েছেন। এমন বন্ধু প্রতিবেশী দেশ পাশে থাকলে আমরা যে কোন অপশক্তিকে মোকাবেলা করতে পারব। তিনি বলেন, বাংলাদেশের যদি কেউ ক্ষতি করে থাকে, তাহলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছেন জিয়াউর রহমান। পাকিস্তানী এজেন্ট হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে তিনি যুদ্ধের কৌশল পাকিস্তানী প্রভুদের জানাতেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ প্রতিটি বিপদে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে থাকার আশ^াস দিয়ে বলেন, এদেশে কোন তালেবান-আইএসের অস্তিত্ব নেই। দেশব্যাপী যত গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটছে সব বিএনপি-জামায়াত ঘটাচ্ছে। তাদের একটাই লক্ষ্য, দেশকে অস্থিতিশীল করে সরকার উৎখাত করা। কিন্তু তাদের এ লক্ষ্য কখনই পূরণ হবে না। শেখ হাসিনা ২০১৪ ও ১৫ সালে যেভাবে আগুনসন্ত্রাসীদের দমন করেছেন, ঠিক একইভাবে এবারও সন্ত্রাস নির্মূল করা হবে। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জে এল ভৌমিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার আদর্শ সোয়াইকা ছাড়াও বক্তব্য রাখেন প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী, জয়ন্ত সেন দীপু, এ্যাডভোকেট তাপস কুমার পাল, নারায়ণ সাহা মনি, ডি এন চ্যাটার্জি ও শ্যামল কুমার রায়। ইমামদের বক্তব্য নিয়ন্ত্রণ নয়, পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছেÑখাদ্যমন্ত্রী ॥ খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, মসজিদে ইমামদের বক্তব্য নিয়ন্ত্রণ নয়, পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ধর্মের অপব্যাখ্যা করলে বা জঙ্গীবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, তারা একথা বলেন। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটা ইমাম শুক্রবার মসজিদে কি বলে সেটা জানার অধিকার সরকারের আছে। যারা জঙ্গীবাদকে উস্কানি দেয়ার জন্য মসজিদে মসজিদে বক্তব্য রাখছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এ অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ৩ লাখ মসজিদে ইমামদের ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমরা আশা করি, এই অনুরোধ আপনারা দেশের স্বার্থে, সরকারের স্বার্থে এবং ইসলামের স্বার্থে রক্ষা করবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাসী-জঙ্গীদের কোন ঠাঁই হবে না। অপরদিকে বিকেলে রাজধানীর ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-পরিষদের বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি কি এতই ঠুনকো দল। গুলশান থেকে বিএনপি নেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় সরালেই তাদের দল ধ্বংস হয়ে যাবে? গুলশান ডিপ্লোম্যাটিক জোন থেকে অনুমোদিত কার্যালয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরানোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। কাজেই গুলশানে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার কার্যালয়ও সরানোর প্রশ্ন এসেছে। বিএনপি নেতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, এসব বাদানুবাদ বাদ দিয়ে বাংলাদেশে যে কূটনীতিকরা কাজ করছে তাদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করুন।
×