ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সচিব জানালেন শীঘ্রই বিতরণ শুরু হবে

দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও স্মার্টকার্ড দেয়া হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৩ জুলাই ২০১৬

দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও স্মার্টকার্ড দেয়া হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নাগরিকদের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দিতে গত বছর জানুয়ারিতে ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল নির্বাচন কমিশনের। কথা ছিল এ বছর জুনের মধ্যে সারাদেশে সব ভোটারের হাতে লেমিনেটিং করা জাতীয় পরিচয়পত্রের বদলে উন্নতমানের স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়া হবে। ইতোমধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের দেড় বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখন দেশের কোন নাগরিকের হাতে পৌঁছায়নি কাক্সিক্ষত স্মার্টকার্ড। তবে ইসির পক্ষ থেকে জোরেশোরেই বলা হচ্ছে আগামী আগস্ট মাসেই প্রাথমিকভাবে স্মার্টকার্ড বিতরণের কাজ শুরু করবে ইসি। এরপর পর্যায়ক্রমে আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই সারাদেশের নাগরিকের হাতে এই কার্ড পৌঁছে যাবে। ইসি সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন শীঘ্রই স্মার্টকার্ড বিতরণে কাজ শুরু হবে। তবে কমিশনের কর্মকর্তারা আগামী মাসে এই বিতরণের প্রস্তুতির কথা জানালেও সম্ভাব্য কোন তারিখের কথা উল্লেখ করতে পারেনি। তারা জানিয়েছেন আগামী মাসের কোন এক সময়ে রাষ্ট্রপ্রতি বা প্রধানমন্ত্রীর দিয়ে স্মার্টকার্ড বিতরণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে সারাদেশের নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়া হবে। দেশের নাগরিকদের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দিতে গত বছর জানুয়ারিতে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের। চুক্তি হওয়ার পর স্মার্টকার্ড বিতরণে ইসির পক্ষ থেকে একাধিবার সম্ভাব্য তারিখও দেয়া হয়েছিল। বিশেষ করে কোন জাতীয় দিবসে স্মার্টকার্ড বিতরণের প্রস্তুতির কথাও ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। এরপর প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও কোন নাগরিকের হাতে পৌঁছায়নি এই কার্ডটি। চুক্তি অনুযায়ী সবার হাতে পৌঁছে দিতে হাতে আর মাত্র সময় রয়েছে দেড় বছরের মতো। তবে জানা গেছে, প্রকল্প গ্রহণের দেড় বছরের বেশি সময় পর উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র স্মার্টকার্ড বিতরণে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি অথবা প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন হতে পারে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মোঃ সালেহ উদ্দিন জানিয়েছেন শীঘ্রই স্মার্টকার্ড বিতরণে যেতে চাই আমরা। আগামী মাসেই বিতরণ কাজ শুরুর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সব গুছিয়ে এনে যথাসময়ে বিস্তারিত তথ্য গণমাধ্যমে জানানো হবে উল্লেখ করেন। জানা গেছে, স্মার্টকার্ডের সার্বিক অগ্রগতির বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধি দল ৮ জুন থেকে ১৬ জুন প্রকল্প কার্যক্রম পরিদর্শনও করেন। বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পটি সহায়তা দিচ্ছে। এছাড়া জানা গেছে, জরুরীভিত্তিতে স্মার্টকার্ড বিতরণের নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে তাগাদা দেয়া হয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের পক্ষ থেকে। এই মর্মে কমিশনকে তারা একটি চিঠিও দিয়েছে। গত ১১ ও ১২ মে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে ত্রিপক্ষীয় পর্যালোচনা বৈঠকে বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে ইসি সচিবালয়ের বাস্তবায়নাধীন ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং এক্সেস টু সার্ভিস (আইডিইএ)’ প্রকল্পের বিষয়েও আলোচনা হয়। এতে বিশ্বব্যাংক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, ইসি সচিবালয় ও আইডিইএ প্রকল্পের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় উল্লেখ করা হয়, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় প্রকল্পটি ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে শেষ হবে। কিন্তু প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ এনআইডি কার্ড বিতরণ এখনও শুরু করা সম্ভব হয়নি। বৈঠকে ইসি সচিবালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয় ত্রুটির কারণে চার মাস কার্ড তৈরি বন্ধ থাকায় বিতরণ কার্যক্রমে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সভায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্নের জন্য এবং প্রকল্প শেষ করতে জরুরীভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইসি সচিবকে ইআরডির পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়। এরপরই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি গুছিয়ে আনতে ফ্রান্স সফর করেন ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম ও প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মোঃ সালেহ। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক সৈয়দ মুহাম্মদ মূসা এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, স্মার্টকার্ড বিতরণের কাজ সব গুছিয়ে আনা হয়েছে। উদ্বোধনের পর কোথায় কীভাবে বিতরণ করা হবে এ সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন পেলে বিস্তারিত গণমাধ্যমে তুলে ধরা হবে। তবে প্রাথমিকভাবে ঢাকায় এ বিতরণ কাজ শুরু করা হবে। ইতোমধ্যে কোটি নাগরিকের স্মার্টকার্ড বিতরণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এর আগে গত বছরের আগস্টে জাতীয় পরিচয়পত্রের স্মার্টকার্ড ব্যবহার, প্রযুক্তি ও কারিগরি দিকসহ সার্বিক বিষয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করে নির্বাচন কমিশন। ওই সময় স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে মানুষ কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে তা প্রচারের ওপর গুরুত্ব দিতে নির্দেশ দেন তিনি। দেশের প্রায় ১০ কোটি ভোটারের মধ্যে প্রায় ৯ কোটির ভোটারের হাতে লেমিনেটেড করা জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা পেতে বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র উপাদান হিসেবে কাজ করছে। ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করাসহ প্রায় সব কাজেই জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যবহার বাধ্যতামূলক।
×