ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

উপদ্রুত এলাকায় খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের তীব্র সঙ্কট

উত্তরাঞ্চলে বন্যায় লাখো মানুষ পানিবন্দী

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৩ জুলাই ২০১৬

উত্তরাঞ্চলে বন্যায় লাখো মানুষ পানিবন্দী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী চব্বিশ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে। শুক্রবারও অব্যাহত বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পানির কারণে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি ব্যাপক জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করে। দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি ১২ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যাউপদ্রুত এলাকায় খাবার, পানি ও প্রয়োজনীয় ওষুধের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ সামনে আরও বৃষ্টির যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতে পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। শুক্রবার বিকেলের মাঝারি ধরনের বৃষ্টিতে রাজধানীবাসীও দুর্ভোগে পড়ে। রাস্তাঘাট ও অলিগলি হয়ে ওঠে কর্দমাক্ত। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান শুক্রবার সন্ধ্যান জানান, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদ-নদীসংলগ্ন কুড়িগ্রাম, জামালপুর ও বগুড়া জেলার নিম্নাঞ্চলের কিছু অংশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছিল। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। তবে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীসমূহের পানি হ্রাস অব্যাহত থাকতে পারে। পর্যবেক্ষণাধীন ৯০টি পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে শুক্রবার ৫৫টির বৃদ্ধি এবং ৩১টি স্টেশনের পানি হ্রাস পায়। আর বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল ৯টি নদীর পানি। স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, বৃষ্টি এবং উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ছোট-বড় ১৫টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে শুক্রবার কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী প্রায় ১ লাখ মানুষ খাদ্য, বিশুদ্ধ পানিসহ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে। ঘরের ভেতর মাচা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। রাত জেগে একমাত্র সম্বল গবাদিপশু পাহারা দিতে হচ্ছে। সরকারী কিংবা বেসরকারী পর্যায়ে ত্রাণ তৎপরতা শুরু না হওয়ায় দেখা দিয়েছে খাদ্য সঙ্কট। যাদের ঘরে খাবার আছে তারা জ্বালানির অভাবে রান্না করতে পারছে না। ফলে শুকনা খাবারের ওপর সকলকে নির্ভর করতে হচ্ছে। নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা পড়েছে চরম বিপাকে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ৯ উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। গত দু’দিনে নদীর ভাঙ্গনে আরও শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে একটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৪টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরও কয়েকটি স্কুল, রাস্তা ও বাঁধ। তীব্র স্রোতে যান পারাপার ব্যাহত ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা মানিকগঞ্জ থেকে জানান, পদ্মা-যমুনায় তীব্র স্রোতে ও ৬টি ফেরি সচল না থাকায় পাটুরিয়া দৌলতদিয়ায় যানবাহন পারাপার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গত ৩-৪ দিন ধরে এ সমস্যা দেখা দেয়ায় পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় লম্বা লাইন দিয়ে পারের অপেক্ষায় রয়েছে অসংখ্য যানবাহন। এ কারণে ঘাট এলাকায় সাধারণ যাত্রী ও যানবাহন চালকরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। শুক্রবার সকাল থেকেই পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় পারের অপেক্ষায় থাকে ছয় শতাধিক যাত্রীবাহী যান ও ট্রাক।
×