ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বদলে গেছে ময়মনসিংহ মেডিক্যালের চেহারা

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ২৩ জুলাই ২০১৬

বদলে গেছে ময়মনসিংহ মেডিক্যালের চেহারা

বাবুল হোসেন, ময়মনসিংহ ॥ অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। বদলে গেছে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিরচেনা চেহারা। সরকারী বরাদ্দের জীবন রক্ষাকারী প্রয়োজনীয় সব ওষুধই মিলছে হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে। নিউরো সার্জারি, প্লাস্টিক সার্জারি ও রুট ক্যানেল থেকে শুরু করে সিজারে সন্তান প্রসবের মতো প্রতিটি ব্যয়বহুল অপারেশন হচ্ছে এখন নামমাত্র খরচে! সিটি স্ক্যান, আলট্রাসনোগ্রাম, এক্সরে, ইকো কার্ডিওগ্রাম, ইটিডি ও ইসিজিসহ প্রয়োজনীয় প্রায় সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষাও মিলছে হাসপাতালে কম খরচে। চালু করা হয়েছে বিশ্বমানের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট-আইসিইউ। নবজাতকের জন্য ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট তো আছেই। ভর্তি হওয়া রোগীদের দেয়া হচ্ছে মাছ-মাংসসহ উন্নতমানের সব খাবার। ডায়াবেটিস ও অচেতন রোগীদের জন্য রয়েছে আলাদা মেন্যুর খাবার। কমেছে সংঘবদ্ধ দালাল, স্পেশাল আয়া ও ওষুধ কোম্পানি প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য। নেই পুতিদুর্গন্ধময় সেই নোংরা পরিবেশ। হাসপাতালের ভেতরে-বাইরে তকতকে ঝকমকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। রোগীবান্ধব ময়মনসিংহ মেডিক্যাল থেকে সরকারী ওষুধ, উন্নতমানের খাবার, কম খরচে পরীক্ষা- নিরীক্ষাসহ অপারেশনের সুবিধা পেয়ে খুশি রোগী, স্বজন ও ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিন আহমদের দাবি, বাস্তবমুখী পরিকল্পিত উদ্যোগ আর সকলের সহযোগিতার ফলেই বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুত স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবার সুফল পাচ্ছে এখন বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলসহ আশপাশের ৩ কোটির বেশি সাধারণ মানুষ। স্বাস্থ্য সেবায় সরকারের এই দৃশ্যমান সুফল দেশের অন্যান্য সরকারী হাসপাতালের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় চিকিৎসকরা। সেবার এই মান ধরে রাখতে সকলের অব্যাহত সহযোগিতা চেয়ে হাসপাতাল পরিচালক আরও জানান, কোবাল্ট-৬০ মেশিন, এমআরআই, কিডনির ডায়ালাইসিস মেশিন স্থাপন, হৃদ রোগীদের জন্য ক্যাথল্যাবসহ উন্নত ও আধুনিক কিছু যন্ত্রপাতির সংযোজন করা গেলে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিশ্বমানের সেবা দেয়া সম্ভব। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার দেওয়ালিয়াবাড়ি গ্রামের মুফতি সোহায়িল আহমদ স্ত্রী ইয়াসমিনকে সন্তান প্রসবের জন্য ভর্তি করেন হাসপাতালের গাইনি বিভাগে। সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবে তার ওষুধ বাবদ সাকুল্যে ব্যয় হয়েছে মাত্র ১১৭০ টাকা। বাকি ওষুধের যোগান দেয়া হয়েছে হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে। অথচ এক বছর আগে এই হাসপাতালেই প্রথম সন্তান প্রসবের এমন অপারেশনের জন্য সোহায়িলের খরচ পড়েছিল ৮ হাজার টাকার ওপর। ওই সময়ে স্যালাইন বাদে সব ওষুধই তাকে কিনে দিতে হয়েছিল বাইরে থেকে। কিন্তু এবার এমন অবিশ্বাস্য কম খরচে স্ত্রীর সিজারে খুশি সোহায়িল জানান, একই সিজারে হাসপাতালের বাইরে খরচের এই অঙ্ক কমপক্ষে ১৫-২০ হাজার টাকা। দরিদ্র ও অসহায় রোগীদের জন্য সরকারের এমন ব্যবস্থাপনায় হতবাক সোহায়িল প্রশ্ন রেখে বলেনÑ সরকারী হাসপাতালে এমন সেবা কী করে সম্ভব হচ্ছে এখন? ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আমিন কালাম জানান, গত আট মাসে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। হাসপাতালের নোংরা পরিবেশ নেই। নেই কোন দুর্গন্ধ। কমেছে দালাল, আয়া আর ওষুধ কোম্পানি প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য- এমন দাবি নাগরিক আন্দোলনের এই নেতার।
×