ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মগড়া এখন নিষ্প্রাণ

প্রকাশিত: ০৪:২২, ২৩ জুলাই ২০১৬

মগড়া এখন নিষ্প্রাণ

আঞ্চলিক ‘মগড়া’ শব্দের অর্থ একগুঁয়ে, গোঁয়ার বা অবাধ্য। এক সময় নেত্রকোনার ‘মগড়া’ নদীও ছিল এমন স্বভাবের। কোন বাধাই মানেনি খরস্রোতা এ নদী। বর্ষায় পাহাড়ী ঢলে উপচে পড়েছে। প্রবল স্রোতে ভেঙ্গে চুরে গেছে তীরের সবকিছু। কিন্তু কালের ধারাবাহিকতায় মগড়া এখন নিষ্প্রাণ, শীর্ণকায় জলধারা। উপরন্তু এটি এখন আবর্জনার ভাগাড়। অথচ নেত্রকোনা শহরের সৌন্দর্য বর্ধনে অভাবনীয় ভূমিকা রাখতে পারে নদীটি। মগড়ার উৎপত্তি পূর্বধলা উপজেলার ত্রিমোহনী এলাকায় ধলাই ও লাউয়ারী নদীর সঙ্গম স্থলে। এরপর তা নেত্রকোনা সদর, আটপাড়া ও মদন উপজেলার ওপর দিয়ে গিয়ে ধনু নদীতে পড়েছে। নেত্রকোনা শহরের বুক চিরে প্রবাহিত হয়েছে এ নদী। মূলত এ নদীকে কেন্দ্র করেই ব্রিটিশ শাসকদের হাত ধরে এক সময়ের কালীগঞ্জ বাজারে আজকের নেত্রকোনা পুলিশ স্টেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। কালক্রমে তা মহকুমা এবং পরবর্তীতে জেলা শহরে পরিণত হয়। দুই-তিন যুগ আগেও নদীটিতে বড় বড় পাল তোলা নৌকা আর লঞ্চ চলেছে। শহরের মালনী রোডের লঞ্চ ঘাটটি আজও সে কালের সাক্ষ্য বহন করছে। উৎসমুখে সøুইজগেট আর যত্রযত্র ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ, পলির স্তর এবং খননের অভাবে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে বর্ষা ছাড়া নদীটিতে তেমন পানি থাকে না। চৈত্র-বৈশাখের শুষ্ক মৌসুমে নদীর কোথাও কোথাও হাঁটু জলও মেলে না। আবার দখলও হয়ে গেছে নদীর বিরাট অংশ। এখন আর নদীর কোন পাড় খালি নেই। পৌর এলাকায় নদীর দুই পাড়েই গড়ে উঠেছে বাসাবাড়ি, দোকানপাট। আবার অন্যান্য এলাকায় নদীটি পরিণত হয়েছে চাষের জমিতে। এক সময় মগড়ার পানি দিয়ে কৃষকের সেচের চাহিদা পূরণ হয়েছে। এখনও তা-ও সম্ভব হয় না। নেত্রকোনা পৌর এলাকায় মগড়ার দুই তীরে অন্তত ২০টি ঘাট ছিল। শহরের সিংহভাগ মানুষ এসব ঘাটে গোসল করেছে। কাপড়-চোপড় ধুয়েছে। ওই ঘাটগুলোর প্রত্যেকটি আজ পরিত্যক্ত। শহরের অনেক ড্রেন-নর্দমা সংযুক্ত করা হয়েছে মগড়ায়। যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে বাসা-বাড়ির ময়লা আবর্জনাও। সারা বছর কচুরিপানায় ছেয়ে থাকে নদীটি। এসব দেখার কেউ নেই। অনেকে বলেন, একসময় মগড়াই ছিল নেত্রকোনার প্রাণ। কিন্তু আজ এটি মৃতপ্রায়। অথচ একটু পরিকল্পনা নিলেই নদীটির যৌবন ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ জন্য নদীটি দ্রুত খনন প্রয়োজন। আর প্রয়োজন দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং ঘাটগুলোর সংস্কার। এ ছাড়া নদীটির দুই পাড়ে ফুট রোড নির্মাণ এবং কয়েকটি ভ্রমণ তরীর ব্যবস্থা করলে এটি একটি আকর্ষণীয় বিনোদন স্পটেও পরিণত হবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। Ñসঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা থেকে
×