ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশাল

জীবনানন্দ দাশের ধানসিঁড়ি অস্তিত্ব সঙ্কটে

প্রকাশিত: ০৪:২২, ২৩ জুলাই ২০১৬

জীবনানন্দ দাশের ধানসিঁড়ি অস্তিত্ব সঙ্কটে

আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়ি নদী তীরে এই বাংলায়/হয়তো মানুষ নয় হয়তো শঙ্খচিল শালিকের বেশে;/হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে। জীবনানন্দ দাশের সেই ধানসিঁড়ি নদী যৌবন হারিয়েছে অনেক আগে। কালের আবর্তে ধানসিঁড়ি নদী আজ মরা খাল। ভরাট হয়ে গেছে নদীর অধিকাংশ স্থান। ভূমিদস্যুদের অনেকে কোন কোন স্থান দখল করে চাষাবাদ ও বাড়িঘর তুলে বসবাস করছে। পলি জমে শুকিয়ে গেছে নদীর বিস্তীর্ণ এলাকা। শুকনো মৌসুমে নদীর কোন কোন স্থান দিয়ে জুতা পায়েই পার হওয়া যায়। কবির ভাষায় ‘হায় চিল, সোনালি ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে/তুমি আর কেঁদো নাকো উড়ে উড়ে ধানসিঁড়ি নদীটির পাশে!/তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে।’ জীবনানন্দের সেই ধানসিঁড়ি নদীই যেখানে হারিয়ে গেছে, সেখানে কোথা থেকে আসবে সোনালি ডানার চিল? স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, জরুরী ভিত্তিতে সরকারী উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে জীবনানন্দের এই ধানসিঁড়ি মানচিত্র থেকে হারিয়ে শুধু কবিতায় আর বইয়ের পাতায় টিকে থাকবে। বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি জেলা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটি হলো সুগন্ধা। উত্তর-দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত বিষখালী নদী দক্ষিণ-পশ্চিমে কাঁঠালিয়া হয়ে বরগুনার দিকে বয়ে গেছে। আবার উত্তর-পশ্চিম দিকে কাউখালী হয়ে পিরোজপুরের দিকে প্রবাহিত হয়েছে গাবখান নদী। সুগন্ধা, বিষখালী আর গাবখান নদীর সংযোগস্থল থেকে ধানসিঁড়ি নদীর উৎপত্তি। ঝালকাঠি জেলার গাবখান ইউনিয়নের বৈদারাপুর গ্রাম থেকে ধানসিঁড়ির যাত্রা। বৈদারাপুর থেকে ধানসিঁড়ি বয়ে গেছে ছত্রকান্দা গ্রাম হয়ে পিংড়ি, হাইলাকাঠি, মঠবাড়ী ও শুক্তাগড় ইউনিয়নের কোল ঘেঁষে রাজাপুর থানা সদর হয়ে জাঙ্গালিয়া নদী পর্যন্ত। বাঘড়িরহাট পর্যন্ত যার শেষ সীমানা। তিন দশক আগেও আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ধানসিঁড়ি নদী ছিল রাজাপুরের সঙ্গে ঝালকাঠির একমাত্র সংযোগসূত্র। এ নদী ধরেই রাজাপুরের লোকজন তখন ঝালকাঠি ও বরিশালে যাতায়াত করেছে। এককালে এ নদী দারুণ স্র্রোতস্বিনী ছিল। এখন মরা খালে পরিণত ধানসিঁড়ির দেহ শীর্ণ হয়ে গেছে। স্থানে স্থানে শুকনো মৌসুমে পানিশূন্য থাকে। ধানসিঁড়ি নদী দিয়ে মানুষ একসময় ঝালকাঠি ও বরিশালে যাতায়াত করেছে। বড় বড় গয়না নৌকায় চড়ে মানুষ গেছে শহরে। জীবনানন্দ দাশ ধানসিঁড়িকে যেভাবে বাঁচিয়ে রেখেছেন, তাতে এখনও অনেকের আগ্রহ একনজর এই নদীটিকে দেখার। দেশ-বিদেশের বহু মানুষ ধানসিঁড়ি দেখার জন্য ছুটে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যায়। নৌকা নিয়ে ঘুরেও ধানসিঁড়ি নদী দেখার সুযোগ নেই। -খোকন আহম্মেদ হীরা বরিশাল থেকে
×