ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পশুর বর্জ্য যাবে বায়োগ্যাস প্লান্টে, উৎপন্ন হবে বিদ্যুত

রাজশাহীতে বিজ্ঞানসম্মত কসাইখানা স্থাপনের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২৩ জুলাই ২০১৬

রাজশাহীতে বিজ্ঞানসম্মত কসাইখানা স্থাপনের  উদ্যোগ

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ যেখানে সেখানে পশু জবাই নয়, এবার রাজশাহীতে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত কসাইখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ শুধু কসাইখানা নয়, সেখান থেকে বায়োগ্যাস প্লান্টের মাধ্যমে বিদ্যুত উৎপাদন করাও সম্ভব হবে। পশু জবাই করার পর তার রক্ত, হাড় সংগ্রহ করে বায়োগ্যাস প্লান্টে ব্যবহার করা হবে। ফলে একদিকে যেমন মানুষ পাবে জীবাণুমুক্ত মাংস অন্যদিকে রক্ষা হবে পরিবেশ। এছাড়া জবাই করা পশুর রক্ত ও হাড় দিয়ে বায়োগ্যাসের মাধ্যমে উৎপন্ন হবে বিদ্যুত। গত সোমবার রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত ‘স্ল্যাটার হাউস কাম বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট’ শীর্ষক কর্মশালায় এমনই তথ্য উপস্থাপন করা হয়। সেখানে বলা হয়, বিজ্ঞানসম্মত কসাইখানায় পশু জবাই করা হলে পরিবেশ দূষণ রোধ করে একটি স্বাস্থ্যসম্মত আধুনিক নগরী গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এজন্য শুধু রাজশাহীতে নয় প্রতিটি নগরীতে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত কসাইখানা গড়ে তুলে পশুর মাংস প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যুক্ত করা দরকার। যৌথভাবে ওই কর্মশালার আয়োজন করে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ও জার্মানভিত্তিক সংস্থা জার্মান ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন। কর্মশালায় জানানো হয়, দেশের প্রত্যেকটা শহরে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য ব্যবস্থা আছে। কিন্তু পশু জবাই করে তার বর্জ্য অপসারণের কোন ব্যবস্থা নেই। বর্জ্য অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকায় হাটে-বাজারে, খোলা জায়গায়, বাড়ির পাশে যত্রতত্র পশু জবাই করা হয়। পশু জবাই করার পর তার বর্জ্য সেখানেই পড়ে থাকে। অনেক সময় নোংরা-আবর্জনার মধ্যেই পশু জবাই করা হয়। এতে ময়লা-আবর্জনায় ছড়িয়ে থাকা জীবাণু ওই মাংসের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ওই মাংস খাওয়ার পর মানুষ মাংসে থাকা জীবাণুতে আক্রান্ত হয়। কর্মশালায় এসইডি-জিআইজেড’র ভারপ্রাপ্ত প্রোগ্রাম ম্যানেজার আল মুদাববির বিন আনাম জানান, দেশে পশু জবাইয়ের পূর্বে ও পরে ভেটেরিনারি সার্জন দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মাংস বাজারজাতকরণের যে প্রক্রিয়া তার অনেকটাই মানা হয় না। ফলে এ্যানথ্রাক্স, র‌্যাবিস, টিবি, বার্ড ফ্লু ও সোয়াইন ফ্লু’র মতো রোগজীবাণু মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন, আধুনিক কসাইখানার মাধ্যমে পশুর বর্জ্য যেমনÑ গোবর, মলমূত্র, নাড়িভুঁড়ির ভিতরের দ্রব্যাদি, মাংসের উচ্ছিষ্ট, রক্ত সবগুলো কাজে লাগিয়ে বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ রোধ করা সম্ভব। কর্মশালায় রাবির ভেটেরিনারি এ্যান্ড এ্যানিমেল সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দিন সরদার জানান, বর্তমানে যে পদ্ধতিতে মাংস বাজারজাতকরণ করেন ব্যবসায়ীরা, তা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত কসাইখানা খুব জরুরী। এজন্য সাসটেইন্যাবল এ্যান্ড রিনিউয়েবল এন্যার্জি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এসআরইডিএ) কাজ করছে। আগামী এক বছরের মধ্যে রাজশাহীতে একটি আধুনিক কসাইখানা ও বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিজাম উল আযিম বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় রাজশাহী নগরে অন্তত একটি আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত কসাইখানা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে রাজশাহী হবে আরও স্বাস্থ্যসম্মত ও দূষণমুক্ত নগরী।
×