ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে এ্যাকুরিয়ামের জনপ্রিয়তা

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২৩ জুলাই ২০১৬

বাড়ছে এ্যাকুরিয়ামের জনপ্রিয়তা

এমদাদুল হক তুহিন ॥ ‘স্বচ্ছ কাঁচে ঘেরা সামুদ্রিক পরিবেশে। বাহারি বৃক্ষের সমাহার। রঙিন পাথর। পাখনা দুলিয়ে সাঁতার কাটছে নানা প্রজাতির মাছ।’ -এমন পরিবেশের এ্যাকুরিয়াম বাড়িয়ে তোলে ঘরের সৌন্দর্য। ফলে শহুরে মধ্যবিত্ত পরিবারে দিনদিন বাড়ছে এ্যাকুরিয়ামের জনপ্রিয়তা। একই সঙ্গে বেড়ে চলছে এ্যাকুরিয়াম সামগ্রীর বাণিজ্যিক প্রসার। এ্যাকুরিয়াম সামগ্রীর সবচেয়ে বড় বাজার হিসেবে রাজধানীর কাঁটাবন পরিচিত হলেও এর বাইরে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় দোকান। নিউমার্কেট, মিরপুর, মহাখালী ও বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে থাকা মাছের দোকান চোখে পড়ে। এসব দোকানে প্রতিদিন আসছেন নতুন ক্রেতা। সৌন্দর্যপিপাসু যাদের ঘরের কোণে রয়েছে এ্যাকুরিয়ামÑ তাদের আগ্রহ এ্যাকুরিয়াম সামগ্রীর প্রতিই বেশি। ঘুরে ঘুরে তারা মাছের খাদ্য ও ওষুধ সংগ্রহ করছেন। কেউ কেউ পছন্দ অনুযায়ী কিনছেন রঙিন পাথর। পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহের লক্ষ্যে নিচ্ছেন ফিল্টার, এয়ার মোটর বা রাবারের ফ্লেক্সিবল পাইপ। জানা গেছে, মাত্র ২০০ টাকা খরচ করেও পূরণ করা যাবে এ্যাকুরিয়ামে মাছ পালনের সখ। বড় আকারের এ্যাকুরিয়ামে ব্যয় পড়বে কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা। মাছের দাম ৩০ টাকা থেকে শুরু হয়ে প্রজাতি ভেদে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্তও হয়ে থাকে। সিলভার এ্যারোনার দাম সবচেয়ে বেশি। এই প্রজাতির এক জোড়া বড় আকারের মাছ বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। কাঁটাবনই এ্যাকুরিয়াম ও এ্যাকুরিয়াম-সামগ্রীর সবচেয়ে বড় বাজার। প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি দোকান রয়েছে এখানে। সকাল থেকে শুরু হয়ে রাত অবধি চলে হরদম বেচাকেনা। একই সঙ্গে চলে মাছের পরিচর্যা। কেউ কেউ ক্রেতাদের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয় নতুন প্রজাতির মাছ। ১৯৯৯ সাল থেকে রাজধানীর কাঁটাবনে এ্যাকুরিয়াম সামগ্রীর ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রিভেল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মতিউর রহমান। তিনি বলেন, প্রায় ১৬ থেকে ১৭ বছরের ব্যবসায় দেখেছিÑ এ্যাকুরিয়ামের প্রতি মধ্যবিত্ত পরিবারের চাহিদা বেশি। অতীতে উচ্চবিত্ত পরিবারের মধ্যে এক ধরনের আগ্রহ লক্ষ্য করা গেলেও বর্তমানে সেই চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। তিনি বলেন, মানুষের হৃদয়ে যতোদিন সখের অনুভূতি থাকবে, থাকবে ভালবাসাÑ ততোদিন এ ব্যবসা বেড়েই চলবে। এ্যাকুরিয়ামে চাষের উপযোগী নানা প্রজাতির মাছ থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া থেকে আসে। একই সঙ্গে আসে ওষুধ। এ ব্যবসায় আয় কেমনÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মাছ মরণশীল তাই আয় তেমন নয়। মাছ পালনকারীরা দোকানদারদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সাহায্য পায় না এমন প্রশ্নের উত্তরে মতিউর বলেন, বিদেশ থেকে মাছ আনার সময় আমাদের কিছু ওষুধ দেয়া হয়। কিছু উপদেশও দিয়ে থাকেন তারা। আমরা যেভাবে মাছ পালন করি ঠিক সেভাবেই ক্রেতাদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। সাহায্য পায় না এটা ঠিক নয়। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ্যাকুরিয়ামে মাছ চাষ নিয়ে মৎস্য অধিদফতর বা সরকারীভাবে কোন কাজ হয়েছে বলে আমার জানা নেই। একটু দূরেই কথা হয় ‘মৎস্য মেলা’র বিক্রয়কর্মী সবুজের সঙ্গে। তিনি জানান, দোকানটিতে ২০ পদের মাছ রয়েছে। বেচাকেনা ভালই। প্রতিদিন নতুন ক্রেতা আসছেন। আসছেন পুরাতন ক্রেতারাও। তিনি জানান, ক্রেতারা মূলত নতুন মাছের খোঁজ করেন। একই সঙ্গে পুরনো মাছকে দীর্ঘ সময় ধরে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টাও চালিয়ে যান তারা। কাঁটাবনের অল্প দূরে কথা হয় মুন্নি এ্যাকুরিয়ামে। দেশীয় টেংরার মতো অবিকল মাছটির নাম টাইগার শার্ক। বিক্রেতা সৈকত জানান, প্রতিপিস টাইগার শার্ক ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর নাখালপড়ায় সম্প্রতি এ্যাকুরিয়াম ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর একটি দোকান গড়ে উঠেছে। বিক্রেতা হাসানের ভাষ্য অনুযায়ী সেখানেও বিক্রি কম নয়। ২টি মাছ ও বৃত্তাকার ছোট্ট এ্যাকুরিয়ামে খরচ পড়বে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। এক বাই দেড় ফিট বর্গাকারের এ্যাকুরিয়ামে খরচ দেড় হাজার টাকা। আকার, মাছের প্রজাতি ও সংখ্যার ওপর এ্যাকুরিয়ামের ব্যয় নির্ভর করবে। সব মাছ এ্যাকুরিয়ামে রাখা যায় না। এর জন্য আলাদা মাছের চাষ হয়। মাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছেÑ গোল্ডফিশ, এ্যাঞ্জেল, শার্ক, টাইগার বার্ব, ক্যাটফিশ, গাপ্পি, মলি, ফাইটার, সাকার, সিলভার ডলার, অস্কার, কার্প, হাইফিন নোজ, এলিফ্যান্ট নোজ, টেট্রা, এ্যারোনা, রোজি বার্ব, কমেট। তবে গোল্ডফিশের চাহিদাই বেশি। এর দাম প্রতিপিস ৩০ থেকে ৪০ টাকা। কমেট এবং কৈ কার্পও একই দামে বিক্রি হয়। আর মাছকে সুস্থ রাখতে এ্যাকুরিয়ামে নিয়মিত অক্সিজেন সরবরাহ, এ্যাকুরিয়াম পরিষ্কার করা ও মাছের খাবার সরবরাহ করা বাধ্যতামূলক। বাজারে সজীব ও শুকনা খাবার পাওয়া যায়। দোকানদারদের তথ্যমতে বাণিজ্যিক নামে প্যাকেটজাত খাবারের বিক্রিও বেশ। বাসাবাড়িতে সাজিয়ে রাখা রঙিন ও স্বচ্ছ এ্যাকুরিয়াম হতে পারে মন ভাল করে দেয়ার উপকরণ। আর মাছের বাসাটি রঙিন হলে কারও কারও মনে জেগে উঠতে পারে সমুদ্রে ডুব দেয়ার ইচ্ছে। কল্পচিত্তে সুখানুভূতির এমন সখ পূরণ করতেই শহুরে বাসাবাড়িতে জনপ্রিয় হচ্ছে এ্যাকুরিয়ামে মাছ পালন।
×