ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অশুভ শক্তি রুখতে-

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ২৩ জুলাই ২০১৬

অশুভ শক্তি রুখতে-

সামাজিক সংগঠন গড়ে ওঠে সমাজের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের সমন্বয়ে। বিভিন্ন মত ও পথের মানুষের বহুল স্বর একটি সম্মিলিত অবস্থানে এসে উপনীত হয়। সামাজিক সংগঠনের শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য, লক্ষ্য ও আদর্শ সংহত রূপ লাভ করে এর সভ্যগণের চিন্তা ও সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে। সামাজিক সংগঠনগুলোর তাই দায় অনেক। সমাজের আত্মিক বন্ধনের নেপথ্য প্রভাবক হিসেবে কাজ করে এসব সংগঠন। সমাজসেবার পরিধি বিরাট। সামাজিক সংগঠনগুলো প্রকারান্তরে নানাভাবে সমাজের সেবকের দায়িত্বই পালন করে থাকে। সমাজের একেকটি অনুঘটক বা নিউক্লিয়াস হিসেবে ভূমিকা রাখে সংগঠন। ব্যক্তি একা; কিন্তু সামাজিক সংগঠনের অভ্যন্তরে ওই ব্যক্তিই সমষ্টির অংশ। ফলে ব্যক্তির শক্তি সামষ্টিক শক্তিতে অনুপ্রাণিত ও রূপান্তরিত হয়ে সমাজের অগ্রযাত্রায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। সমাজের কোন অর্জনের স্বীকৃতি ও সম্মাননা জ্ঞাপনে সামাজিক সংগঠনগুলো পালন করে বিশেষ ভূমিকা, যা সমাজের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সামর্থ্য যোগায়। একইভাবে সমাজের ওপর কোন আঘাত এলেও এই সামাজিক সংগঠনের শক্তিই তার অভ্যন্তরীণ সুপ্ত ক্ষমতাকে সমুন্নত ও সক্রিয় করে তোলে। সমাজের হৃদস্পন্দন অনুভব করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে তার সামাজিক সংগঠনগুলোর সত্তায় কান পাতা। আজ অসামাজিক নৃশংস শক্তি জঙ্গীবাদ যখন সমাজের ওপর চোখ রাঙাচ্ছে, তখন সামাজিক সংগঠনগুলোর সম্মিলিত শক্তিই তা প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারঙ্গম। বাংলার সামাজিক শক্তি আগেও ভুল করেনি। সময়ের আহ্বানে বরাবরই সে সাড়া দিয়েছে। দুঃসময়কে হটানোর ব্রত নিয়ে রচনা করেছে সুসময়। চলতি মাসের প্রথম দিন বাংলাদেশের সমাজ যে অভূতপূর্ব অত্যাশ্চর্য মরণ ছোবল প্রত্যক্ষ করেছে তা সূচনাপর্বেই অকার্যকর করার জন্য কালবিলম্ব না করে জেগে ওঠা ছিল প্রত্যাশিত। সামাজিক সংগঠনগুলো ওই নৃশংসতার আকস্মিকতায় হতভম্ব ও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লেও কিছুকালের মধ্যেই সে রুখে দাঁড়িয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি অতীতের মতোই দেশের সামাজিক সংগঠনগুলো সমাজের সুস্থতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে তার ব্যাধিকে নির্মূল করায় ব্রতী হবে। একইভাবে নতুন করে যাতে রোগ বাসা না বাঁধে সেজন্যও উদ্যোগী হবে। সংস্কৃতি সমাজবদ্ধ মানুষের সৃষ্টিশীল নান্দনিক চেতনার আরেক নাম। সংস্কৃতির ব্যাপ্তি ও উচ্চতা সীমাবদ্ধ হতে পারে না। একমাত্র মানুষই নিয়োজিত হয় সুকুমার বৃত্তিতে। মানুষ যেমন সংস্কৃতির উপাদান সৃজন করে, তেমনি সেটি তার জীবনযাপনের অংশ, জীবন উপভোগের সূত্র করে তোলে। সাহিত্য রচিত হয় ব্যক্তির হাতে; কিন্তু সেটি হয়ে ওঠে সমষ্টির সম্পদ। সেই সম্পদ সমষ্টিকে আপ্লুত করে, তাকে শক্তি যোগায়, অনির্বচনীয় আনন্দ প্রদান করে। সাহিত্যের আলোয় যে আলোকিত হয় তার পক্ষে অন্ধকার রচনা করা কিংবা অন্ধকারের যাত্রী হওয়া অসম্ভব। সঙ্গীত কিংবা নাটক, চিত্রকলা কিংবা চলচ্চিত্রÑ শিল্পের প্রতিটি শাখা সম্পর্কে আমরা একই কথা উচ্চারণ করতে পারি। একটি সমাজের এসব সাংস্কৃতিক শক্তি সমাজকে সুশীলতা ও সৌরভ দান করে। রক্তপিপাসু অসুস্থ মনের পরম শুশ্রƒষা হতে পারে সংস্কৃতির সৌন্দর্য ও সুঘ্রাণ। বিচ্ছিন্ন, বিহ্বল, বিপথগামী তারুণ্যকে জীবনের ইতিবাচক দিকটির প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট করার জন্য শিল্প-সংস্কৃতির অন্তর্নিহিত শক্তিকে কাজে লাগানোর তাই বিকল্প নেই। জাতির চরম ক্রান্তিলগ্নে চিরকালের বাতিঘর হলো মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও অনন্য অর্জন। অপশক্তির বিরুদ্ধে হাজার বছরের ইতিহাসে প্রথম মহা একতার শক্তি সুষমা প্রদর্শন করেছিল ওই মহান একাত্তর। আজ আমাদের মাতৃভূমির ওপর যখন মৌলবাদ-জঙ্গীবাদ ছায়া বিস্তার করে চলেছে তখন মুক্তিযুদ্ধকালীন সঙ্কল্পবদ্ধ সুন্দর সেই মন ও সক্রিয়তা নিয়ে তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক শক্তি একযোগে সুপরিকল্পিত উপায়ে কাজ করলে অশুভ শক্তি অপসারিত হবেÑ এটা সুনিশ্চিত।
×