ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রেজা ফারুক

সিরাজুল ইসলাম মুনিরের জন্য কয়েক পঙ্ক্তি

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২২ জুলাই ২০১৬

সিরাজুল ইসলাম মুনিরের জন্য কয়েক পঙ্ক্তি

পাঠকপ্রিয় গল্পকার হিসেবে ইতোমধ্যে সিরাজুল ইসলাম মুনির রচিত করেছেন এক স্বকীয় প্লাটফর্ম। সমকালীন বাংলা সহিত্যের সিরিয়াস ধারার এক নন্দিত ও পাঠকসমাদৃত ঔপন্যাসিক, গল্পকার সিরাজুল ইসলাম মুনিরের রয়েছে পাঠকপ্রিয়তা। যার রচনা বিগত তিনদশক কাল ধরে একটা বাঁক ঘুরে এসে দাঁড়িয়েছে শিল্পোত্তীর্ণ কথাসাহিত্যের গভীর ব্যঞ্জনা আর ব্যঙ্গময় উপকণ্ঠে। মুনির তার সাহিত্যবোধকে বুনন করে চলেছেন আত্মানুসন্ধানের অমোঘ শিল্প চেতনায়। প্রচলিত হালকা চালের বাইরে এসে জীবনের নানা অভিঘাত, জটিল প্রক্ষেপণ, টানাপোড়েন, মুক্তিযুদ্ধ, প্রেম ও মানবিক মনোভঙ্গিকে তার লেখার প্রধান উপজীব্য অনুষঙ্গ এবং ঘটনার মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে সহজাত কথাশিল্পে করেছেন রূপায়িত। সম্প্রতি মুনির মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকে সামনে রেখে দীর্ঘ উপন্যাস রচনায় হাত দিয়েছেন। গভীর মনোনিবেশের ছাপ মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক ঐতিহাসিক এ উপন্যাসে উঠে আসবে বলে পাঠক আশাবাদী। আশির দশকের প্রধান সারির লেখক সিরাজুল ইসলাম মুনিরের জন্মদিন হলো ২৬ জুলাই। তার শুভ জন্মদিনের আলো যেন ছড়িয়ে যায় আদিগন্ত আকাশে এমন শুভকামনাই তার জন্য পাঠকের পক্ষ থেকে। বলে নেয়া ভালো মুনির ইতোমধ্যে কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য কিউট সাহিত্য পুরস্কার (২০০৪) এবং ২০০২ সালে রাজশাহী সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক ‘পদ্মা উপাখ্যান’ উপন্যাসের জন্য সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। কী দিয়ে শুরু মুনিরের। সিলেট বেতার কেন্দ্রের ঘোষক এবং খবর পাঠের মধ্য দিয়ে তার শিল্প মাধ্যমে অভিষেক হলেও ভিতরে ভিতরে তিনি ছিলেন একজন পুরোদস্তুর গল্পকার। এর আগে ১৯৮১ সালে তৎকালীন দৈনিক গণকণ্ঠের সহ-সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। এছাড়া বাংলদেশ টেলিভিশনে দীর্ঘদিন সাহিত্যানুষ্ঠান ‘বইপত্র’ গ্রন্থনা ও সঞ্চালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দীপ্তকথা শিল্পী সিরাজুল ইসলাম মুনির অনর্গল অবিচল থেকেছেন তার আদর্শ, বোধ আর আবেগের প্রতি। আর তিনি অবিশ্রাম তার রচনায় সে সব গল্পগাঁথা সন্নিবেশিত করেন বিপরীতমুখী চেতনার কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে অবস্থান করেও। আর এখানেই সিরাজুল ইসলাম মুনিরের সততা, একাগ্রতা, কমিট্মেন্টের স্ফুরণটুকু প্রতিভাত হয়। সিরাজুল ইসলাম মুনিরের গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় কুড়িটি। গল্পগ্রন্থ অংকুরি, কালো কাইতন, কমলা সুন্দরী ও অন্যান্য গল্প, ভালোবাসার গল্প, মুক্তিযুদ্ধের গল্প প্রভৃতি। যখন প্রপাত, আবর্ত, পদ্মা উপাখ্যান, সব পাখি ঘরে ফেরে, কৃষ্ণকলি আমি তারে বলি, প্রিয় প্রেম, বিলোনিয়া, তার ফিরে আসা’ মুনিরের উল্লেখযোগ্য উপন্যাস এবং ভ্রমণ সাহিত্য উপন্যাস মেপল পাতার দেশের মধ্যে দিয়ে পাঠকের অন্তরে যায়গা করে নিয়েছেন অনায়াসে। উল্লেখ্য, ২০১৬ বইমেলায় বেরিয়েছে তার প্রথম উপন্যাস সমগ্র। এইতো আদ্যোপান্ত কথাশিল্পী সিরাজুল ইসলাম মুনির। যার গল্পে গল্প নয়- খেলা করে অনন্তকালীন জীবনের খ- খ- চিত্রবীথি। যে চিত্রে রয়েছে মূর্ত-বিমূর্ত নানা ফর্মের প্রতিবিম্ব। তার স্বতন্ত্র স্বরের গুঞ্জন পাঠকের মনোজগতকে নিবিড়ভাবে স্পর্শ করে। কী শহর, কী মফস্বল। নাগরিক বোধ যেমন তার লেখার ভিতর এক ভিন্ন প্যাটার্নের গল্প শুনিয়ে যায় তেমনি কোনো মফস্বল কিংবা সমুদ্রপারের অথবা দ্বীপ অধিবাসীদের জীবনের নানা আখ্যান, উপাখ্যান তার লেখায় দুলে ওঠে সমুদ্র তীরবর্তী নোনারু হাওয়ায় লাল ঝাউবনের চূড়োর মতো। রোদের ফোয়ারার মতো মুনিরের জীবনোপাখ্যানের নানা প্রসঙ্গ নিরন্তর এক আলাদা বৈশিষ্ট্যের স্বপ্ন বোনায়। যে স্বপ্ন ক্রিস্টালের ঝাড়বাতির মতো সারারাত্রি ধরে জ্বলে থাকে সিরাজুল ইসলাম মুনিরেরই গল্পকথায়, কথাশিল্পে। এভাবেই কথাসাহিত্যিক সিরাজুল ইসলাম মুনিরের সৃষ্টিশীলতাও ক্লাসিকেল সাহিত্য বোধ আরও ব্যাপৃতরূপে পাঠকের অন্তর্জগতে সৃষ্টি করুক অবিশ্রাম স্পন্দন- তার শুভ জন্ম দিনে এটাই পরম প্রত্যাশা।
×