জলবায়ু পরিবর্তনে সাগরের জলে কিছু কিছু জীবাণু ও উদ্ভিদ মনের সুখে বংশবৃদ্ধি করছে, অন্যরা কোণঠাসা। পানির অম্লত্ব বাড়ছে, পানিতে কমছে অক্সিজেনের পরিমাণ। বিজ্ঞানীরা বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করছেন।
জার্মান বিজ্ঞানীরা উত্তর সাগরে পরীক্ষা করে দেখছেন, সাগরের পানির নিচে জলবায়ু পরিবর্তনের কী ধরনের প্রভাব পড়ছে; বিশেষ করে কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমন বাড়ার ফলে সমুদ্রের প্রাণিজগতের কোন সমস্যা দেখা দিচ্ছে কিনা। জলের নিচে এক্সপেরিমেন্টের জন্য প্লাস্টিকের চৌবাচ্চা নামানো হচ্ছে। এগুলো যেন সুবিশাল টেস্টটিউব বা রিএজেন্ট গ্লাস। জলের মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড প্রবেশ করালে প্রাণী আর উদ্ভিদদের কী প্রতিক্রিয়া হয়, তা দেখতে চান বিজ্ঞানীরা। কেননা কার্বন ডাই অক্সাইড যুক্ত হলে সাগরের জল এ্যাসিডিক হয়ে যায়। বাড়ির কাছেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন কিল-এর হেল্মহলৎস সেন্টার ফর ওশেন রিসার্চের বিজ্ঞানীরা।
সাগরে ঝিনুক, এ্যালজি অর্থাৎ সমুদ্রশৈবাল আর ব্যাকটেরিয়া মানে জীবাণুরা মিলেমিশে থাকে। পরিবেশের কোন একটি উপাদান বদলালেই চেন রিয়্যাকশন শুরু হয়ে যায়। মেরিন বায়োলজিস্ট মার্টিন জানালেন, ‘এই নতুন সরঞ্জাম দিয়ে আমরা এই প্রথম জলবায়ু পরিবর্তনের অনুরূপ অবস্থা সৃষ্টি করতে পারছি। আমরা তার সব ক’টি তাৎপর্যপূর্ণ উপাদান বদলাতে পারি ও তার স্বাভাবিক ওঠানামা অনুকরণ করতে পারি।’ বিজ্ঞানীরা দেখতে চান, ২০৫০ সালে বালটিক সাগরের অবস্থা কী দাঁড়াবে। সেজন্য কখনও জলের তাপমাত্রা বাড়ানো হয়, কখনও তার অম্লত্ব।
গলছে বরফ, আসছে বিপর্যয়
সাগরের প্রাণীরা মরতে শুরু করলে বিশ্বে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে। যদিও সাগরের নিজেকে নিরাময় করার ক্ষমতা অসীম। এ ব্যাপারে জিওমার-এর মেরিন বায়োলজিস্ট মার্টিন ভাল বলেন, ‘সাগর যাতে একটা অক্সিজেনশূন্য, দুর্গন্ধ নোংরা জলের ডোবা না হয়ে ওঠে, তা নিশ্চিত করে বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের এই স্বনির্ভর, স্থিতিশীল সহাবস্থান। আশা করি এই ভারসাম্য আরও অনেকদিন টিকবে।’
সাগরের নিচের উদ্ভিদরা যে অম্লত্বের ফলে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার প্রমাণ এই সি উইড। পানির এ্যালকালাইন ভ্যালু যত কম হবে, ততই এ্যান্টিবডির উৎপাদন কমবে। বালটিক আইসোপড-রা সি উইড খেতে খুব ভালবাসে। সাগরের নিচের জীবজগত খুবই জটিল, যা বিজ্ঞানীদের মুগ্ধ করে। মার্টিন ভাল বলেন, ‘সাগরে ২০ ধরনের বেশি ফাইলা বা বর্গের জীব আছে, যা শুধু সাগরেই পাওয়া যায়। প্রত্যেক ফাইলাম বা বর্গকে বিবর্তনের একটা নতুন আবিষ্কার বলা চলে। শুধু এই কারণেই জলের নিচে যে জীববৈচিত্র্য আছে, তা ডাঙ্গায় পাওয়া সম্ভব নয়।’
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি
সাগরের পরিবেশ প্রণালী পরিবর্তনের সঙ্গে কিছুদূর খাপ খাইয়ে নিতে পারেÑ তবুও মানুষ সাগরের প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের ওপর প্রভাব ফেলছে। মাইক্রোঅরগ্যানিজম- এও পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা জানার চেষ্টা করছেন, কোন কোন অরগ্যানিজমÑ প্রাণী বা উদ্ভিদÑকী ধরনের পরিস্থিতিতে ব্যাপকভাবে বংশবৃদ্ধি করে।
পানি যত গরম হবে, তার মধ্যে তত বেশি ব্যাকটেরিয়া থাকবে। অপরাপর প্রয়োজনীয় প্রাণিসত্তা হয়ত কোণঠাসা হবে। গবেষকরা এক ধরনের শীঘ্র সতর্কতা প্রণালী বার করার চেষ্টা করছেন; তাঁরা এমন সব ইন্ডিকেটর বা সূচকের খোঁজ করছেন, যেগুলো থেকে বোঝা যাবে, কোন পর্যায় থেকে প্রজাতির বিলোপ রোধ আর সম্ভব নয়।
মার্টিন বলেন, ‘আমরা যদি এভাবে কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়তে থাকি, তাহলে অম্লতা বাড়তে থাকবে। ফলে উষ্ণায়ন ও অন্য সমস্যাও বেড়ে চলবে। আমরা শুধু আশা করতে পারি যে, এসব ধীরে ধীরে ঘটবে, যা থেকে প্রাণী আর উদ্ভিদরা খাপ খাইয়ে নেয়ার সময় পাবে।’ বিজ্ঞানীরা বিশ্বের সমুদ্রাঞ্চলের ভবিষ্যত কী হতে পারে, তা বোঝার চেষ্টা করছেন। সেই বোঝাটাই হয়ত সমুদ্রের পরিবেশকে বাঁচানোর প্রাথমিক পদক্ষেপ হতে পারে।
সূত্র : ডয়েচ ভেলে