ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সাগরের অলিম্পিক ভাবনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২২ জুলাই ২০১৬

সাগরের অলিম্পিক ভাবনা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ পাবনা সদর উপজেলার দ্বীপ চরের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান টিংকু ছিলেন কাবাডি খেলোয়াড়। ১৯৯৩ সালের ১৫ মে। টিংকুর স্ত্রী মসকুরা খাতুন নিলু জন্ম দিলেন ফুটফুটে এক পূত্র সন্তানের। নাম রাখা হলো মাহফিজুর রহমান। ডাক নাম সাগর। যার নাম সাগর, সে সাঁতারু হলেই যেন মানায়, তাই না? একটু বড় হতেই তাই হলো। বাবার আগ্রহেই সুইমিং পুলের জল দাবড়াতে শুরু করল সাগর। শুধু তাই নয়, একের পর পদক জিতে সৃষ্টি করল আলোড়ন। একদিন সে অংশ নিল অলিম্পিকের মতো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসরেও। এখানেই শেষ নয়, আগামী ৫ আগস্ট থেকে ব্রাজিলের রিওতে শুরু হতে যাওয়া গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকেও অংশ নিতে যাচ্ছে সেদিনের ডানপিটে-দুরন্ত সেই ছেলেটি, যার বয়স এখন ২৬। আগামী ১ আগস্ট বিমানে চেপে অথই সাগর পাড়ি দিয়ে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’-এ অংশ নিতে যাচ্ছেন সাঁতারু সাগর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে পড়াশুনা করা সাগর এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অলিম্পিক গেমসে খেলার সুযোগ পেলেন। এর আগে তিনি ২০১২ লন্ডন অলিম্পিক গেমসে খেলেছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে কর্মরত। ৩০তম লন্ডন অলিম্পিক গেমসে সাগরই বাংলাদেশ দলের লাল-সবুজ পতাকা বহন করেছিলেন। থাইল্যান্ডে উন্নত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন দেশের অন্যতম সেরা এ সাঁতারু। অলিম্পিয়ান হওয়ার আজন্ম স্বপ্নসাধ ছিল সাগরের। লন্ডন আসরে সেটা পূরণ হয়েছে। তবে এবার রিও আসরে আবারও সুযোগ পেলে তার খারাপ লাগছে দুটি কারণে। এবারও ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে যাওয়ায় এবং গত আসরের মতো এবার আর বাংলাদেশের পতাকা অলিম্পিকের মার্চপাস্ট অনুষ্ঠানে বহন করতে পারবেন না বলে। সেটা বহন করবেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান, যিনি প্রথম বাংলাদেশী এ্যাথলেট, যিনি ওয়াইল্ড কার্ড ছাড়াই এই প্রথম অলিম্পিকে সরাসরি অংশ নেয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। ২০০৩ সালে জাতীয় জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়ে সাঁতারে ক্যারিয়ার শুরু করা সাগর এরই মধ্যে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে থলিতে পুড়েছেন ৪৮ স্বর্ণ। বাংলাদেশের এই ‘জলমানব’ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় ১২ ইভেন্টের সবই পান স্বর্ণপদক! ২০০৫ সালে জতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় দেশের ‘সর্বকনিষ্ঠ সাতারু’ হিসেবে জেতেন সোনা। জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় ২০১১ সালে আটটি ইভেন্টের আটটিতেই সোনা জিতে হন সেরা সাঁতারু। ২০১৩ বাংলাদেশ গেমসে সাত সোনা আর একটি রুপা জিতে হন সেরা এ্যাথলেট। ৫০ মিটার ফ্রি-স্টাইলে ২৪.০২ সেকেন্ড সময় নিয়ে জাতীয় রেকর্ডের মালিকও সাগর। এগুলো নিঃসন্দেহে গর্ব করার মতো বিষয়। তবে আক্ষেপও আছে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় এখন পর্যন্ত মাত্র একটি স্বর্ণপদক জিতেছেন তিনি। পাঁচ মাস আগে ভারতের গুয়াহাটি ও শিলংয়ে অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে অংশ নিয়ে জেতেন সাত তাম্রপদক। ২০১০ এসএ গেমসে জেতেন ২ রৌপ্য ও ১ তামপ্রদক। গত এত্রিলে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত থাই ওপেনে ২০০ মিটার ফ্রি-স্টাইলে জেতেন স্বর্ণপদক। লন্ডন অলিম্পিকে ৫০ মিটার ফ্রি-স্টাইলে অংশ নিয়ে ৬৩ জনের মধ্যে হয়েছিলেন ৩৬তম। টাইমিং ছিল ২৪.৬৪ সেকেন্ড। আসন্ন রিও অলিম্পিকে পদকজয়ের দুঃসাহস না করলেও এই টাইমিংকে অতিক্রম করতে বদ্ধপরিকর সাগর, ‘লক্ষ্য থাকবে রিওতে ২৪.০৬ সেকেন্ড টাইমিং করা।’ যদিও এখন কাঁধের চোটে ভুগছেন সাগর। এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘দীর্ঘদিন সাঁতার কাটলে বা ওভারলোড নিলে এ ধরনের ইনজুরি হয়ে থাকে। আমারও তাই হয়েছে। আমার চোট বাম কাঁধে। এটা হয়েছে গত এপ্রিল-মেতে। এই চোট নিয়েই থাই ওপেনে অংশ নিই। ডাক্তার বলেছিলেন কমপক্ষে দুই সপ্তাহ বিশ্রাম নিতে। কিন্তু অলিম্পিকে যাব, জোর প্রস্তুতি প্রয়োজন, এ কারণে আর সেভাবে বিশ্রাম নিতে পারিনি। তবে আশা করছি আর সপ্তাহখানেক রেস্ট নিলেই পুরোপুরি চোট সেরে যাবে।’ বিশ্ব সাঁতারে সাগরের আদর্শ যুক্তরাষ্ট্রের মাইকেল ফেল্পসসহ আরও অনেকেই। স্বপ্নের নায়কের সঙ্গে দেখা ও কথা হয়েছে সাগরের? কোন টিপস নেননি? ‘আসলে ব্যস্ততার কারণে সেভাবে কথা বলা হয়নি। শুধু পরামর্শ দিয়েছেন অনুশীলনের।’ রিও অলিম্পিকে জিকা ভাইরাস ও সন্ত্রাসী-জঙ্গী হামলার ভয়ে অনেক এ্যাথলেটই সেখানে যাচ্ছেন না। এ প্রসঙ্গে সাগরের অভিমত, ‘পৃথিবীর সব স্থানেই এ ধরনের শঙ্কা কমবেশি থাকে। তাই বলে জীবন তো আর থেমে থাকতে পারে না। আমি এ নিয়ে মোটেও ভীত নই। শুধু নিজের পারফর্মেন্স নিয়েই ভাবছি।’
×