ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে অর্থমন্ত্রী

রিজার্ভ চুরির তদন্ত রিপোর্ট কয়েকদিনের মধ্যে প্রকাশ হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২২ জুলাই ২০১৬

রিজার্ভ চুরির তদন্ত রিপোর্ট কয়েকদিনের মধ্যে  প্রকাশ হবে

সংসদ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরির ঘটনায় তদন্ত রিপোর্ট কয়েক দিনের মধ্যেই প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে রিজার্ভ চুরির বিষয়ে আমি বক্তব্য দিয়েছি। আমার মনে হয় কয়েক দিনের মধ্যে আমাদের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হবে। আমি চলতি অধিবেশনের কোন এক সময়ে এ বিষয়ে বক্তব্য রাখব।’ অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিগত বছরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চুরি ও ডাকাতির ঘটনা আমরা দেখেছি। এ বিষয়ে সরকার থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, বিভিন্ন মামলার বিপরীতে ধরপাকড়ও চলছে। এ বছর আমরা ব্যাংক ও আর্থিক খাতে অধিক নজর দিচ্ছি। এতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের পরিবর্তন আনছে। তরিকত ফেডারেশনের এমএ আউয়ালের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমানে দেশের ৮টি সরকারী ব্যাংককে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান খাতে প্রদেয় ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকার মধ্যে ২৮ হাজার ৫৪০ কোটিই হচ্ছে খেলাপী ঋণ। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে ঋণের বিপরীতে মোট আদায় হয়েছে ৬ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। সরকারী ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপী ঋণ রয়েছে সোনালী ব্যাংকে। অর্থমন্ত্রীর দেয়া তথ্যানুযায়ী, ৮টি ব্যাংকে ঋণখেলাপীর পরিমাণ হচ্ছেÑ অগ্রণী ব্যাংকে ৪ হাজার ৫৮৮ কোটি ১৩ লাখ, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে ৬৩০ কোটি, বেসিক ব্যাংকে ৬ হাজার ৩০০ কোটি ৮২ লাখ, জনতা ব্যাংকে ২ হাজার ৮৩০ কোটি ৬৮ লাখ, রূপালী ব্যাংকে ১ হাজার ৫৪৭ কোটি ৭৬ লাখ এবং বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে কৃষি ব্যাংকে ৩ হাজার ৮৬১ কোটি এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে মোট খেলাপী ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৮০১ কোটি ৯৯ লাখ। অর্থমন্ত্রী জানান, খেলাপী ঋণ আদায়ে সরকার তথা বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। খেলাপী/শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও তদারকির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি পৃথক টাস্কফোর্স সেল গঠন করা হয়েছে। উক্ত সেলের মাধ্যমে অর্থঋণ আদালতসহ অন্যান্য আদালতে দায়েরকৃত মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। সরকারী দলের মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানীর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ব্যাংকের জাল-জালিয়াতি রোধ এবং আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক তার পরিদর্শন কার্যক্রমকে আধুনিকীকরণ করার পাশাপাশি আরও শক্তিশালী করেছে এবং এর ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও অক্ষুণœ থাকবে। প্রচলিত পরিদর্শন কার্যক্রমের পরিবর্তে ঝুঁকিভিত্তিক পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর যে কোন ঝুঁকিপূর্ণ কার্যক্রমকে আগেভাগেই শনাক্তকরণপূর্বক এর প্রতিকারের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে, যার ফলে ব্যাংকগুলোতে অনিয়ম/জাল-জালিয়াতির সুযোগ কমে আসবে। তিনি জানান, অনিয়ম/জাল-জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনের আওতায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা প্রদান করে থাকে। এক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী ভবিষ্যতে আইন ও বিধিসমূহ সংশোধন অথবা নতুন আইন/বিধি-বিধান প্রণয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বেকারদের কর্মসংস্থানে সহায়তার লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে প্রতিটি উপজেলায় কর্মসংস্থান ব্যাংকের শাখা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।
×