ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শর্ষেয় ভূত- সহস্রাধিক এনওসিই অবৈধ, তোলপাড়

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২২ জুলাই ২০১৬

শর্ষেয় ভূত- সহস্রাধিক এনওসিই অবৈধ, তোলপাড়

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ নৌ পরিবহন অধিদফতর (অধুনালুপ্ত সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর) থেকে ইস্যুকৃত সহস্রাধিক এনওসি নিয়ে শিপিং সেক্টরে চাঞ্চল্য ও তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এসব এনওসির সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে ইমিগ্রেশন বিভাগের সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ায় তদন্ত শুরু হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে উদ্ঘাটিত হয় নৌ পরিবহন অধিদফতরের এনওসি নিয়ে জালিয়াতি, অনিয়ম ও এর নেপথ্যে মানবপাচারের নানা তথ্য। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাস্তবিক অর্থে নৌ পরিবহন অধিদফতরের চেন অব কমান্ড নিয়ে নানা সংশয় রয়েছে। ইমিগ্রেশন বিভাগের দাবি অনুযায়ী উক্ত অধিদফতর থেকে সহস্রাধিক এনওসির স্বাক্ষরদাতা একজনই। এমনকি ওসব এনওসিতে সরকারী প্যাড ব্যবহার এবং সূত্র নম্বর থাকলেও এগুলোর জন্য অধিদফতরের কোন নথি সংরক্ষণ করা হয়নি। তদন্তে এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এসব ঘটনায় ইতোমধ্যে নৌ পরিবহন অধিদফতর থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। অধিদফতরের মহাপরিচালকের নির্দেশে এ কমিটি গঠিত হয়েছে। কিন্তু জালিয়াত এনওসির স্বাক্ষরদাতা এতই প্রভাবশালী যে, গঠিত ওই কমিটিকে তিনি বিলুপ্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। এর পাশাপাশি তার ইচ্ছানুযায়ী নতুন একটি কমিটি গঠন করতে বাধ্য হয়েছেন মহাপরিচালক। সূত্র জানায়, এনওসির স্বাক্ষরদাতা একজন ডক্টরেট ডিগ্রীধারী। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন অপর দুই কর্মকর্তা। সঠিক ও সুষ্ঠু তদন্ত হলে এ দফতরে এনওসি কেলেঙ্কারি ঘটনা নিয়ে বহু তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে অধিদফতরের বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে। সূত্র জানায়, ইতোপূর্বে এসব এনওসি ইস্যু প্রদানকালে প্রতিটি এনওসির জন্য সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা গ্রহণ করা হয়েছে অবৈধ পন্থায়। এক্ষেত্রে সরকার কোন রাজস্ব পায়নি। অপরদিকে, পিলে চমকানো ঘটনা হচ্ছেÑ যারা এসব জাল এনওসি নিয়ে ইতোমধ্যে দেশত্যাগ করেছে তারা কারা। এরা কি প্রকৃত নাবিক নাকি ভুয়া সিডিসিধারী (কন্টিনিউয়াস ডিসচার্জ সার্টিফিকেট)। জানা গেছে, অধিকাংশের প্রকৃত কোন সিডিসি নেই। তারা ভিন্ন দেশে পাড়ি জমাতেই এ পথ বেছে নিয়েছে, যাকে এক ধরনের মানবপাচার হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, অধিদফতরের এ চক্রটির অপকর্ম এত ব্যাপক বিস্তৃত এবং তারা এতই প্রভাবশালী যে, খোদ মহাপরিচালক এক্ষেত্রে এক ধরনের অসহায়ত্ববরণ করে আছেন। প্রসঙ্গক্রমে সূত্র জানায়, কোরিয়া-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগের ৩৭৫ কোটি টাকার জিএমডিএসএস প্রকল্প ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অদ্যাবধি এর কাজই শুরু হয়নি। অথচ ৩৬ কোটি টাকা এ খাতে ইতোমধ্যে খরচের নামে অপচয় হয়ে গেছে। জিএমডি এসএস প্রকল্পের পরিচালকও একই ব্যক্তি। উল্লেখ করা যেতে পারে, মূল প্রকল্প পরিচালককে অত্যন্ত কৌশলে মহাপরিচালকের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে সরিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটে। উল্লেখ্য, বিদেশে জাহাজের চাকরির নামে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের ছাড়পত্র নো অবজেকশন সার্টিফিকেট বা এনওসি নিতে হয়। এভাবে সহস্রাধিক এনওসি ইস্যু হওয়ার পর ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগের নজরে আসে একটি ঘটনা। এ নিয়ে তদন্ত হয়। এনওসি প্রদান কর্মকর্তার পদবিযুক্ত স্বাক্ষর ও নিজস্ব ফোন নম্বর থাকায় এ নিয়ে নৌ পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালককেও চিঠি দিয়ে তদন্তের অনুরোধ জানায় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। এ প্রেক্ষিতে মহাপরিচালক গত ২৪ জুন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। অধিদফতরের প্রকৌশল ও জাহাজ জরিপকারক মির্জা সাইফুর রহমানের নেতৃত্বে কমিটিতে অপর দুই সদস্য রয়েছেন। কমিটির কার্যপরিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রদানকৃত এনওসির সত্যতা যাচাই এবং এর তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করা ২০১৩ সাল থেকে অদ্যাবধি কত এনওসি অধিদফতরের নামে ইস্যু করা হয়েছে তা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ থেকে সংগ্রহ করা। যাদের অনুকূলে এনওসি ইস্যু করা হয়েছে তাদের মধ্য থেকে লিখিত বক্তব্য বা সাক্ষাতকার গ্রহণ করা। এ জাতীয় এনওসি কে বা কাদের মাধ্যমে ও কোন প্রক্রিয়ায় কী কী কৌশল অবলম্বন করে ইস্যু করা হয়েছে তার তথ্যউপাত্ত সংগ্রহকরণ, মহাপরিচালক কমোডর জাকির হোসেন ভূঁইয়া অফিস আদেশে জানিয়েছেন, বিগত ৭-৮ মাসে এ ধরনের এক হাজার ছাড়পত্র প্রদান করা হয়েছে, যা ইমিগ্রেশন বিভাগে সংরক্ষিত রয়েছে। সূত্রমতে, এ অবৈধ প্রক্রিয়ায় মূল স্বাক্ষরদাতার সঙ্গে দুই কর্মচারী জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। ইমিগ্রেশন বিভাগের পক্ষ থেকে এ ধরনের জালিয়াত এনওসির কিছু নমুনা কপি সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরে প্রেরণ করা হয়েছে।
×