ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মোরসালিন মিজান

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২২ জুলাই ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

শহর ঢাকা এখন অপেক্ষাকৃত শান্ত। যার যা কাজ, তা-ই নিয়ে আছেন। ঈদের ছুটি শেষে পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে অফিস-আদালতে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় সব খোলা। মার্কেটগুলোতে কেনাবেচা শুরু হয়েছে। তবে এ কর্মচাঞ্চল্য থামিয়ে দেয়ার হুমকিও কম আসছে না। আজ এখানে জঙ্গী হামলা হবে; কাল ওখানে। এভাবে নানা গুজব ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে মার্কেট বা শপিংমলগুলোতে হামলা হতে পারে- এমন গুজবে অনেকেই গত কয়েক দিন আতঙ্কে কাটিয়েছেন। তারও আগে রটে যায় ২০ জুলাই যমুনা ফিউচার পার্কে হামলা চালাবে জঙ্গীগোষ্ঠী। অন্য মার্কেট শপিংমলগুলোতেও বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তেমন কিছু একদমই ঘটেনি। বরং জঙ্গীবাদের হুমকি মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন নগরবাসী। এ বড় আশার কথা। বৃহস্পতিবার বসুন্ধরা সিটি শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, দারুণ ফুরফুরে পরিবেশ। পছন্দের কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতা। ফুডকোর্ট বিভিন্ন বয়সী মানুষের দখলে। চলছে আড্ডা। হৈ হুল্লোড়। সিনেপ্লেক্সে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সব হল হাউসফুল। সব দেখে আশাবাদী হয়ে ওঠে মন। এখন শ্রাবণ মাস। ভরা বর্ষা। যখন তখন কালো হয়ে যাচ্ছে ঢাকার আকাশ। অঝরধারায় বৃষ্টি নামছে। বইছে ঝড়োহাওয়া। গত মঙ্গলবার কাঁটাবন এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ করেই ঝড়োহাওয়ার কবলে পড়তে হয়। উল্টোদিক থেকে আসা রিক্সা এগোতে পারছিল না। ঠিক তখনই এক বিচিত্র দৃশ্য চোখে পড়ে। সাধারণ এক পথচারী লুঙ্গি পরে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। দমকা বাতাসে তার লুঙ্গি ফুলে ওঠে। তাতেই ঘটে বিপত্তি। লুঙ্গির একপ্রান্ত রিক্সার চাকার সঙ্গে আটকে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় পথেই বসে পড়েন তিনি। এক হাতে লুঙ্গির গিট শক্ত করে ধরেন। অন্য হাত রিক্সার চাকায়। লুঙ্গি ছাড়ানোর চেষ্টা চলে। অনেক্ষণ চেষ্টার পর বিপদ থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব হয় তার। ততক্ষণে আশপাশের সবাই দৃশ্যটি দেখে ফেলেছেন। তারা যেমন হাসছিলেন, হাসছিলেন ওই পথচারীও। তবে তার লাজুক হাসি। তার দিকে তাকিয়ে এক রিক্সাযাত্রী রসিকতা করতে ছাড়লেন না। বললেন, এতকাল ঢাকার রাস্তায় মেয়েদের ওড়না কিংবা শাড়ি রিক্সার চাকায় আটকে যেতে দেখেছি। আজ ভাই লুঙ্গিও আটকাতে দেখলাম! রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা শিরিন বানু মিতিল আর নেই। বুধবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিরবিদায় নেন তিনি। এমন সাহসী বীর নারীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সংশ্লিষ্ট মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সবার মুখেই শোনা যায় তার নাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার যে বিপুল অবদান কৃতজ্ঞতাচিত্তে স্মরণ করেন নগরবাসী। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাবনা পুলিশ লাইনে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়। এতে যোগ দেন সাধারণ মানুষও। একই লড়াইয়ে অসীম সাহসী নারী শিরিন বানু যোগ দেন। বীরকন্যা প্রীতিলতা দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি পুরুষের সাজে সেজে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেন। ভারতের স্টেটসম্যান পত্রিকায় তার সে ছবি ছাপা হলে ব্যাপকভাবে আলোচনায় চলে আসেন তিনি। পরে পাবনা টেলিফোন এক্সচেঞ্জে পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে যে লড়াই, তাতে পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেন। ৩৬ জন পাকসেনা বধ হয় এই যুদ্ধে। একই নারী নগরবাড়ি যুদ্ধের সময় পাবনার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে ছিলেন। পাবনা শহর পাকিস্তান বাহিনীর দখলে চলে গেলে ২০ এপ্রিল ভারতে চলে যান তিনি। সেখানে বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত নারীদের একমাত্র প্রশিক্ষণ শিবির ‘গোবরা ক্যাম্পে’ যোগ দেন। পরবর্তিতে মেজর জলিলের নেতৃত্বে ৯ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। বীর এই নারীর মৃত্যুর খবরের সঙ্গে সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে সেসব দিনের স্মৃতি নিয়ে। শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে বৃহস্পতিবার মঞ্চস্থ হয়েছে ঢাকা থিয়েটারের উল্লেখযোগ্য প্রযোজনা ‘বিনোদিনী’। এতে একক অভিনয় করেন শিমুল ইউসুফ। বারবার দেখা নাটক। এরপরও হলভর্তি দর্শক। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখেন শিমুল ইউসুফের অভিনয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে দাপটের সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন বিনোদিনী দাসী। পেশাদার বাংলা থিয়েটারের উন্মেষকালের অবিস্মরণীয় অভিনেত্রী তিনি। তার আত্মজীবনী ‘আমার কথা’ ও ‘আমার জীবন’ গবেষণা করে সাইমন জাকারিয়া ‘বিনোদিনী’র গ্রন্থণা করেন। বিনোদিনী দাসীর ১৩ বছরের অভিনয় জীবন। এ সময়ের মধ্যে ৫০টি নাটকের ৬৩টি চরিত্রে অভিনয় করেন। তবে গোটা জীবন নয়, তার অভিনীত নীলদর্পণ, মেঘনাদবধ কাব্য, মৃণালিনী ও চৈতন্যলীলা নাটকের অংশবিশেষ উপস্থাপন করা হয়। ছিল তার কবিতা ও গান। বর্ণনাত্মক রীতিতে পরিবেশিত নাটকের দৈর্ঘ্য ছিল দেড় ঘণ্টা। নির্দেশনা দেন নাসিরউদ্দীন ইউসুফ। জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে এখন চলছে পোড়ামাটির শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃৎশিল্প বিভাগের শিক্ষার্থীরা এতে অংশগ্রহণ করেছেন। মূলত তাদের শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে গ্যালারি। মোট শিল্পী ৩২ জন। শিল্পকর্ম সংখ্যা ৭২। প্রদর্শনীতে আরও যোগ হয়েছে জাতীয় জাদুঘরের সংগ্রহে থাকা পোড়ামাটির ১০০ দুর্লভ নিদর্শন। জাদুঘরের নিদর্শনে শত শত বছর আগের ইতিহাস খেলা করছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাজে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার শৈল্পিক ছোঁয়াÑ শিল্পকর্ম ঘুরে দেখা নয় শুধু, শিল্পটি সম্পর্কে সুন্দর একটি ধারণা দিচ্ছে প্রদর্শনী। এখানে চোখের সামনে শিল্পকর্ম তৈরি করে দেখাচ্ছেন একাডেমিক শিক্ষায় শিক্ষিত শিল্পীরা। পাশেই হুইল নিয়ে বসেছেন বংশপরম্পরায় মৃৎশিল্পের কাজ করা একজন শিল্পী। দর্শনার্থীরা মুগ্ধ চোখে তাদের কাজ করা দেখছেন। ১৫ জুলাই শুরু হওয়া প্রদর্শনী চলবে ২৬ জুলাই পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার থেকে খামারবাড়িতে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী মৎস্যমেলা। বিকেলে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের খোলা চত্বরে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। মৎস্য অধিদফতর আয়োজিত মেলায় বেশ কয়েকটি স্টল। সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টল থেকে মাছ নিয়ে তাদের গবেষণা ও চাষের নানা পদ্ধতি বর্ণনা করা হচ্ছে। মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, যেখানে জল আছে সেখানেই মাছের চাষ করুন। যারা দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষ করছেন, মেলায় অংশ নিয়েছেন তারাও। রুই কাতল পাবদা শিং কৈ বোয়ালসহ নানা জাতের মাছ পাওয়া যাচ্ছে মেলায়। সজীব সতেজ মাছ বিক্রিও হচ্ছে। যার যেমন পছন্দ, কিনছেন। মেলার আয়োজকদের পক্ষে আবদুল খালেক জানান, এখন চলছে মৎস্য সপ্তাহ। এর অংশ হিসেবে মেলার আয়োজন। প্রতিবছরই মেলার আয়োজন করা হয়। আগে আয়োজনটি ছিল রমনা পার্কে। এখন স্থানান্তরিত হয়েছে খামারবাড়ি। রাস্তার পাশে হওয়ায় প্রথম দিনই মেলায় উঁকি দিতে দেখা গেছে অনেককে। দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সব স্টল সাজানোর কাজ শেষ হয়নি। এরই মাঝে চলে এসেছে দর্শনার্থী। কৌতুহল নিয়ে মাছ দেখছেন। আশিকুর রহমান নামের এক সরকারী কর্মচারী মেলায় ঘুরে তাজা মাছের খোঁজ করছিলেন। বললেন, সরকারী আয়োজন। এখানে ফরমালিনমুক্ত সতেজ মাছ পাওয়া যায়। আগে একবার কিনেছিলাম। আজ দেখেই মনে পড়ে গেল। তাই চলে আসা। তবে তখনও মাছ বিক্রি শুরু না হওয়ায় কিছুটা হতাশ বলেই মনে হলো তাকে। মৎস্যমেলা ২৫ জুলাই পর্যন্ত চলবে।
×