ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিখোঁজ তালিকা নিয়ে হ য ব র ল অবস্থা সৃষ্টি

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২২ জুলাই ২০১৬

নিখোঁজ তালিকা নিয়ে হ য ব র ল অবস্থা সৃষ্টি

শংকর কুমার দে ॥ সারাদেশে র‌্যাব যে ২৬২ জন নিখোঁজ নামের তালিকা প্রকাশ করেছে তার মধ্যে শতাধিকের বিরুদ্ধে জঙ্গী সম্পৃক্ততার অভিযোগ থাকতে পারে। নিখোঁজদের জঙ্গী সম্পৃক্ততার বিষয়টি এখন যাচাই-বাছাই সম্পন্ন শেষে হালনাগাদ করে আবারও তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। হালনাগাদ করা তালিকাটিতে জঙ্গী সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্পষ্ট করে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ও সীমান্তে নামের তালিকা সংবলিত ছবি ও পরিচিতি দিয়ে সতর্কবার্তা পাঠানো হবে। থানা পুলিশের তৈরি করা নিখোঁজের তালিকাটি র‌্যাবের হাতে ধরিয়ে দেয়ার পর তাতে তালগোল পাকিয়ে গেছে। নিখোঁজের তালিকার অনেকেই ফিরে আসছে, অনেকেই বিদেশে অবস্থান করছে, আবার অনেকেই নিহত হয়েছে, কেউবা কারাগারে আছে, যার কারণে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে নিখোঁজের তালিকার বেশিরভাগেরই জঙ্গী সম্পৃক্ততার অভিযোগ না পাওয়া গেলেও দেশব্যাপী একটি জঙ্গীবিরোধী ইতিবাচক মনোভাব পরিবেশ তৈরিতে তোলপাড়ে সৃষ্টি হয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের দাবি। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় জড়িত জঙ্গীরা নিখোঁজ থাকার প্রেক্ষাপটে তালিকা তৈরির সময়েই জঙ্গী হামলার বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও ডিএমপি কমিশনার গুজবে কান না দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। ব্রিটেনে দ-িত জঙ্গীর ভাই ইয়েমেন ফেরত নিখোঁজ তালিকায় ॥ বর্তমানে যুক্তরাজ্যের কারাগারে ৩০ বছরের দ-িত রাজিব করিমের ভাই তেহজীব করিম নামে এক যুবক নিখোঁজের তালিকায়। তেহজীব করিম (৩৩) নামের এই যুবক গত ১৭ মে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে নিখোঁজ হন বলে তার পরিবারের ভাষ্য। তেহজীব করিমের মেজো ভাই রাজিব করিম ব্রিটিশ এয়ারওয়াজের কর্মী। তাকে ২০১১ সালে ৩০ বছরের কারাদ- দেয় দেশটির একটি আদালত। রাজিব করিম বর্তমানে যুক্তরাজ্যের কারাগারে। ইয়েমেনের উগ্রপন্থী মুসলিম নেতা আনওয়ার আল আওলাকির ‘ভক্ত’ রাজিব করিম। সে যুক্তরাষ্ট্রগামী একটি উড়োজাহাজ বোমা ফাটিয়ে উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করছিলেন বলে তার বিরুদ্ধে মামলায় বলা হয়েছিল। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজিব যখন গ্রেফতার হন, তখন সে সময় ইয়েমেনে ছিলেন তার ছোট ভাই তেহজীব। রাজিব-তেহজীবের বাবা জয়নুল করিমের পৈত্রিক বাড়ি ঢাকার গ্রীনরোডে। এক সময় গার্মেন্টসসহ কয়েকটি ব্যবসা চালালেও এখন তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় বাড়িতে সময় কাটাচ্ছেন। তেহজীবরা তিন ভাই, বড় ভাই আতিক করিম ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর লন্ডনের একটি বহুতল ভবনের ছাদ থেকে পড়ে দুর্ঘটনায় মারা যান। তার সঙ্গে ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের একমাত্র মেয়ে শামায়লা রহমানেরও মৃত্যু হয়। গ্রীনরোডের ১৪৯ নম্বরে ‘স্বপ্নীল’ নামের বাড়িটিতে তেহজীবের দাদা ফজলুল করিম থাকতেন, যিনি করিম ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক ছিলেন বলে জানান জয়নুল করিম। ছেলে তেহজীবের নাম নিখোঁজের তালিকায় দেখার পর তার বাবা জয়নুল করিম গণমাধ্যমকে বলেছেন, থাইল্যান্ডের ইন্টারন্যাশনাল হাউস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অধীনে ডেল্টা টিচিং (ইংরেজী শিক্ষাবিষয়ক) কোর্সের জন্য তেহজীব গত ১৩ মার্চ ব্যাঙ্কক যায়। ইংরেজী ছাড়াও হিন্দী ও আরবী ভাষা জানত তেহজীব। গত ১৭ মে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে নাম সে। এরপর মোবাইলে গাড়িচালকের সঙ্গে কথা হলেও পরে তার আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। পুলিশ প্রথমে জিডি নিতে চায়নি। পরে তাকে প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ দিয়ে বলা হলে তিনি জিডি নিয়েছিলেন বলে জানান তেহজীবের বাবা জয়নুল করিম। তিনি বলেন, এতে সন্দেহ হয়, হয়তো তাহজীব সরকারী কাস্টডিতে রয়েছে। যদিও তার বিরুদ্ধে আগে কোথাও কোন ধরনের অভিযোগ ছিল না। মঙ্গলবার নিখোঁজ ২৬১ জনের যে তালিকা দিয়েছে তাতে ২৪ নম্বরে তেহজীবের নাম রয়েছে। নিখোঁজ তেহজীবের বাবা বলেন, নিখোঁজের তালিকায় ছেলের নাম দেখেছেন, র‌্যাব যে তালিকা দিয়েছে সে অনুযায়ী নিখোঁজ সবার পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করা হোক। অবিলম্বে তাদের সবাইকে খুঁজে বের করা হোক। তেহজীব বাংলাদেশের কোন কর্তৃপক্ষের কাছে আছেÑ এমন সন্দেহ প্রকাশ করে তার বাবা বলেন, তার কোন দোষ যদি থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হোক। তবে আমার বিশ্বাস ও খারাপ কাজে জড়িত থাকতে পারে না। তেহজীবের বাবা জয়নুল করিম বলেন, তার মেজো ছেলে রাজিব করিম যুক্তরাজ্যে গ্রেফতার হওয়ার পর তার সঙ্গে একবার ঢাকায় ব্রিটিশ দূতাবাসে গিয়েছিল তেহজীব। বড় ভাইয়ের বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল ওকে। তিনি জানান, ঢাকার স্কলাসটিকা থেকে ‘এ লেভেল’ শেষ করে তেহজীব একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও তার বাল্যবন্ধু সীরাহ রশীদকে বিয়ে করেন। এরপর আমাকে না জানিয়ে কয়েক মাসের জন্য একবার পাকিস্তান যায়। পরে পরিবার নিয়ে ইয়েমেন ঘুরে আসে। এরপর সেখানে শিক্ষকতার জন্য ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে ইয়েমেনে গিয়ে পরের বছর ডিসেম্বরে দেশে ফেরে। এর মধ্যে তেহজীব সেখানে আট মাস কারাগারে ছিল বলে জানান তার বাবা। তার বাবা বলেন, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়া এবং সেখানকার বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশের মুখোমুখি হয়ে ওই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয় তেহজীব। সে সময় দেশটিতে অনেক বিদেশী নাগরিক আটক হন। এরপর সেখানে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তেহজীব দেশে ফেরেন বলে তার বাবার ভাষ্য। তার বাবা জয়নুল করিম বলেন, এক সময় ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও কোন পদে ছিল না সে। ১৯৯০ সালে বিএনপিতে যোগ দিয়ে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সুনামগঞ্জ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরে যায়। এরপর থেকে সে দলীয় কোন কর্মসূচীতে যোগ দেয়নি ও রাজনীতি থেকে দূরে সরে যায়। তিনি বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও কোন সনদ নেইনি। ভারতের মেলাঘরে খালেদ মোশাররফের অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। সেখানে এ্যাডজুটেন্ট ছিলেন এখনকার বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের ছোটভাই বাদল খান। ওখানে ছাত্র ইউনিয়নের সবাই ছিলেন। আমরা ছাত্র ইউনিয়নের মতিয়া চৌধুরীপন্থী অংশের সমর্থক ছিলাম। পরে ওই পক্ষের লোকেরা আওয়ামী লীগে যোগ দিলেও আমি দেইনি। থানা পুুলিশের নিখোঁজের তালিকার নমুনা ॥ র‌্যাব যে ২৬২ জনের নিখোঁজ তালিকা প্রকাশ করেছে সেই তালিকায় ২১৫ নম্বর ক্রমিকে থাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোঃ রহমতুল্লাহ এখন রয়েছে রাজশাহীর কারাগারে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রহমতুল্লাহ নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজলোর মাগুরা গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। গত এপ্রিলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকা-ের পর ১৭ মে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রহমতুল্লাহকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর পর তাকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। বর্তমানে সে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে। গত ১৪ মে রাতে নগরীর মতিহার থানায় রহমতুল্লাহর নিখোঁজ হওয়ার তথ্য জানিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন ক্রপ সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নুরুল আলম। এই তালিকার ১ নম্বর ক্রমিকে থাকা বগুড়ার ধুনট উপজেলার সাইদুল ইসলাম ঢাকায় তার কর্মস্থলে রয়েছেন। তালিকায় থাকা ৮ জন ফেনীতে নিখোঁজ হওয়ার পর থানায় জিডি হওয়ার পর উদ্ধার করা হয় তাদের। বগুড়ার ধুনট উপজেলার মাধবডাঙ্গার মৃত হায়দার আলীর ছেলে সাইদুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সন্ত্রাসীরা তাকে ধরে নিয়ে গেলে গত ১৪ জুন তার স্ত্রী হোসনে আরা বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। তবে দুদিন পরেই সন্ত্রাসীরা তাকে ছেড়ে দেয়। নিখোঁজের তালিকায় থাকার খবর পেয়ে বনানী থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি প্রত্যাহার করে নেয় তার পরিবার। র‌্যাবের নিখোঁজের তালিকা প্রকাশের পর তারা সাইদুলের অবস্থান তারা জানান। বগুড়ার নিখোঁজদের তালিকায় গাবতলি থানার তেলিহারা গ্রামের সুজন নামে একটি নাম রয়েছে। তিনি ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ থেকে নিখোঁজ বলে তালিকায় জানানো হয়। গাবতলি থানার ওসি শাহীদ মাহমুদ খান গণমাধ্যমকে বলেন, সুজন নামের ১২টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কেউ নিখোঁজ নেই। তারপরে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। র‌্যাবের তালিকায় ফেনীতে নিখোঁজ ১১ জনের মধ্যে ৮ জনকে নিয়ে ফেনী মডেল থানায় জিডি হয়েছিল। ফেনী মডেল থানার ওসি মাহবুব মোর্শেদ বলেছেন, জিডি করা নিখোঁজ ৮ জনের মধ্যে ৭ জনই উদ্ধার হয়েছে। র‌্যাবের তালিকায় ২১০ নম্বর ক্রমিকে থাকা ফেনীর পরশুরাম উপজেলার সুবার বাজার ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামের মোঃ ফোরকান চৌধুরী উদ্ধার হয়ে বর্তমানে বাড়িতে রয়েছেন। র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান বলেছেন, আমরা আসলে নিখোঁজের এই তালিকা তৈরি করেছি বিভিন্ন থানা থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে। এখন যদি কেউ ফেরত আসে কিংবা কারও সন্ধান পাওয়া যায়, তা জেনে আমরা সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করে তালিকা হালনাগাদ করব। ‘আইএসে’ সপরিবারে সাইফুল্লাহ ওজাকি ॥ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিখোঁজের ১০ যুবকের তালিকায় থাকা জাপান প্রবাসী ধর্মান্তরিত সাইফুল্লাহ ওজাকি স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে আইএসে যোগ দিয়ে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত ১ জুলাই গুলশান হামলায় ঘরছাড়া যুবকদের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে দেয়া নিখোঁজদের প্রথম তালিকায় সাইফুল্লাহ ওজাকির নাম আসে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার জিনদপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি গ্রামের জনার্দন দেবনাথের ছেলে সজিত চন্দ্র দেবনাথই এই সাইফুল্লাহ ওজাকি। সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ২০০১ সালে বৃত্তি নিয়ে জাপান গিয়ে ধর্মান্তরিত হন সজিত। নাম রাখেন সাইফুল্লাহ ওজাকি। জাপান গিয়ে সেখানে ি এক জাপানী নারীকে বিয়ে করে জাপানের নাগরিকত্ব নেন তিনি; তাদের চার ছেলে ও এক মেয়েরও জন্ম হয়। ধর্মান্তরের পর বাংলাদেশে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা সাইফুল্লাহ ২০১১ সালে পিএইচডি ডিগ্রী নেয়ার পর রিসুমেকান ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছিলেন। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অনুপস্থিত থাকায় গত মার্চে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরখাস্ত করে বলে জাপান টাইমস জানিয়েছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা কিয়োদো নিউজ জানিয়েছে, স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ইউরোপ হয়ে সিরিয়া পাড়ি দিয়েছেন সাইফুল্লাহ ওজাকি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইফুল্লাহ ওজাকি ২০১৫ সালের ১৫ মে তুরস্কের ইস্তানবুুল হয়ে সিরিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তখন জাপান ফিরে আসার পর পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। সিরিয়ার শরণার্থীদের সহায়তা করার কথা বলে ইউরোপ যান সাইফুল্লাহ। সেখান থেকে পরে স্ত্রী-সন্তানসহ তিনি সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট অধ্যুষিত এলাকায় চলে যান বলে জাপানের সংবাদ সংস্থা কিয়োদো নিউজের খবর। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের সজিতকে মেধাবী ও শান্ত স্বভাবের বলেই চিনতেন স্থানীয়রা। তার জঙ্গী সম্পৃক্ততার খবরটি পরিবারসহ এলাকাবাসীর পুরোটাই অজানা। ১৪ মাস আগে বাংলাদেশে এসে গ্রামে গিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের বাড়িতে বাবা-মার সঙ্গে দেখা করে গেলেও তখনও তাকে নিয়ে কোন সন্দেহ হয়নি কারও। র‌্যাবের তালিকায় নাম আসার পর ব্যবসায়ী বাবা জনার্দন দেবনাথ জানতে পারেন, তার ছেলে নিখোঁজ। ছেলের জন্য তার মা প্রতিদিনই কাঁদেন বলে জানান বাবা জনার্দন। জাপানের আর্কাইভ ডট ওরাজি ওয়েবসাইটে সজিতের নামে একটি গবেষণাপত্র পাওয়া গেছে। যোগাযোগ সাময়িকী প্রোসিডা’র ২০১৫ সালের জুলাই মাসে তার একটি প্রবন্ধও প্রকাশিত হয়। এরপরই তিনি উগ্রবাদী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের সংস্পর্শে আসেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। জাপানের ডশিসা ইউনিভার্সিটির সাবেক অধ্যাপক হাসান কো নাকাতার সংস্পর্শে এসে আইএসে যুক্ত হন সাইফুল্লাহ। ১৯৭৯ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী হাসান নাকাতা আইএসের হয়ে কাজ করছেন। টোকিও ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক এবং মিসরের কায়রো ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট নেয়া নাকাতা ডশিসা ইউনিভার্সিটিতে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন ২০০৩ সালে। সৌদি আরবে জাপানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করে আসা নাকাতা এরপরই হিযবুত তাহরীরে যোগ দেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা যায়। সংগঠনটির বিভিন্ন কার্যক্রমে তার যুক্ত থাকার প্রমাণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আছে। ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি জাপানের দুই সাংবাদিক আইএসের হাতে আটক হলে জাপান সরকার নাকাতাকে সিরিয়া পাঠায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে। এরপর ৮ ফেব্রুয়ারি রয়র্টাসের এক প্রতিবেদনে তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইএসের চেচেন যোদ্ধা ওমর গুরবার মধ্যে ‘অভ্যন্তরীণ সমঝোতার’ চেষ্টা চালালেও মন্ত্রণালয় ‘যথাযথ ভূমিকা’ নেয়নি। এরপর থেকে নাকাতার আইএসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার প্রমাণ সংবলিত কয়েকটি ছবি আসে গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইএস স্টাডি গ্রুপের ওয়েবসাইটে। গত ১৪ অক্টোবর ইন্দোনেশিয়ায় গিয়ে নাকাতার সঙ্গে সাইফুল্লাহ ওজাকির দেখা করার তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। জাপানের জাতীয় পুলিশ সংস্থা (এনপিএ) বলছে, ওজাকি যার সংস্পর্শে গিয়ে আইএসে গেছেন সেই গা ঢাকা দেয়া নাকাতাকে খুঁজছে জাপান পুলিশ। নাকাতার সহযোগী হিসেবে সাইফুল্লাহ ওজাকিকেও জাপান পুলিশ খুঁজছে। গুজবে কান না দিতে ডিএমপি কমিশনারের আহ্বান ॥ ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, আমি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, একটি কুচক্রী মহল অসৎ উদ্দেশে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট গুজব ছড়িয়ে জনগণের মনে ভীতি এবং আতঙ্ক তৈরি করছে। কখনও বলছে অমুক তারিখে হামলা হবে, কখনও বলছে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জঙ্গী হামলা হবে, কখনও বলছে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জঙ্গী হামলা হবে। স্কুলে জঙ্গী হামলা হবে, রেস্টুরেন্টে জঙ্গী হামলা হবে, হোটেলে-মার্কেটে জঙ্গী হামলা হবে, শপিংমলে জঙ্গী হামলা হবে। এই ধরনের গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা একটি ফৌজদারি অপরাধ। আমি সকলকে বিনীতভাবে অনুরোধ করব, এই ধরনের মিথ্যা গুজবে কেউ কান দেবেন না। বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এই কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, নানা ধরনের গুজব রটিয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করে যারা দেশকে অশান্ত করতে চায়, দেশের দৃশ্যমান উন্নয়নকে ব্যাহত করতে চায়, তারা প্রকৃত অর্থে জঙ্গীদেরই পৃষ্ঠপোষক, জঙ্গীদেরই সমর্থক। তাদের বিরুদ্ধে আমরা দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তৎপর রয়েছি। গত ১ জুলাই গুলশানে জঙ্গী হামলার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারের একাধিক এ্যাকাউন্ট থেকে রাজধানীর শপিংমল ও বিনোদন কেন্দ্রে জঙ্গী হামলার গুজব আসতে থাকে। এর মধ্যেই গুলশানে হামলার পরের সপ্তাহে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটে। জঙ্গী হামলা ঠেকাতে পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়ে মানুষকে তাদের দৈনন্দিন কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
×