ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দু’দেশের সম্পর্ক ভাল থাকবে ॥ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২২ জুলাই ২০১৬

দু’দেশের সম্পর্ক  ভাল থাকবে ॥  হাসিনা

সংসদ রিপোর্টার ॥ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে ভারত সব সময় থাকবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, নিজেকে কখনও একা ভাববেন না, এমন পরীক্ষার সময় (সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই) ভারত আপনার পাশেই আছে। পুরো ভারত বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। জঙ্গীবাদ দমনে দুই দেশ একসঙ্গেই চলবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও ভারতের পারস্পরিক সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, দুই দেশের সম্পর্ক সব সময়ই ভাল থাকবে। সমস্যা হলে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। আগামীতে বাংলাদেশ-ভারত আরও গভীর সম্পর্কের মধ্য দিয়ে অর্থনীতিতে মজবুত ভিত্তি রচনা করবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বেনাপোল ও পেট্রাপোল সমন্বিত চেকপোস্টের যৌথ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পরস্পরকে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে এসব কথা বলেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সময় বক্তব্য রাখেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীও। মমতা ব্যানার্জী বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক চিরদিনের, চিরকালের। ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে একে অপরের সহযোগিতার মাধ্যমে এ সম্পর্ক আরও ভাল পর্যায়ে যাবে। এই ২১ কেবল আন্দোলনের (ভাষা আন্দোলন) কথা নয়, উন্নয়নের কথাও মনে করিয়ে দেয়। এতবড় স্থলবন্দর হওয়ায় এ সুবিধা হয়েছে। এ দুটি চেকপোস্ট দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক চিরদিনের, চিরকালের। গঙ্গা, তিস্তা ও অন্য নদীগুলোও এ সম্পর্কের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমাদের সম্পর্ক অনেক ভাল। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যেখানে আছেন, সেখানে এ সম্পর্ক আরও ভাল হবে। বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে এই ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সময় ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীর নিজ কার্যালয় থেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় ‘নবান্ন’ থেকে ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বেনাপোল ও পেট্রাপোল সমন্বিত চেকপোস্টের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে একটি ভিডিওচিত্র দেখানো হয়। এরপর প্রথমে মমতা ব্যানার্জী, পরে শেখ হাসিনা এবং সবশেষে নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য শেষে তিন নেতার নামাঙ্কিত উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করা হয়। এ উদ্বোধন শেষে বেনাপোলে অবস্থানরত জনপ্রতিনিধি, সরকারী কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলাদাভাবে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেনÑ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, ড. গওহর রিজভী, মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলাসহ সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজসহ দেশটির কর্তাব্যক্তিরা। ভারত সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে -ভারতের প্রধানমন্ত্রী ॥ ভিডিও কনফারেন্সে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার বক্তৃতার শুরুতে বাংলায় কথা বলেন। বাংলায় শেখ হাসিনাসহ এ দেশের জনগণকে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ থেকে আমাদের দুই দেশের মধ্যে আদান-প্রদান আরও সহজ হবে। আমরা আরও কাছাকাছি এলাম। এ শুভ অনুষ্ঠানে সকলকে জানাই অভিনন্দন।’ পবিত্র রমজান মাসে ঢাকা ও কিশোরগঞ্জে সন্ত্রাসী হামলা, মন্দিরে, পুরোহিত, সাধারণ মানুষের ওপর সন্ত্রাসী হামলারও নিন্দা জানান মোদি। হামলায় হতাহত নিরীহ মানুষের সঙ্গে পুরো ভারতের মানুষের সমবেদনা রয়েছে বলেও জানান তিনি। মোদি বলেন, রমজানের পবিত্র মাসে এ হামলা তার ও গোটা ভারতবাসীর কাছে অত্যন্ত পীড়াদায়ক ঘটনা। ওই জঙ্গী হামলার দরুন সকল নির্দোষ নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি প্রার্থনা রইল। এই কঠিন সময়ে গোটা ভারত আপনাদের পাশে আছে। হিন্দিতে শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীÑ এই পরীক্ষার সময় পুরো ভারত আপনার সঙ্গেই আছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে আপনার সুযোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে যেভাবে ধৈর্যের সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাতে আমি মন থেকে আপনাকে অভিনন্দন জানাই। আপনার নেতৃত্ব পুরো অঞ্চলের জন্য একটি উদাহরণস্বরূপ। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিজের এ লড়াইয়ে আপনি কখনও নিজেকে একা ভাববেন না, ভারতের পূর্ণ সমর্থন আপনার সঙ্গে আছে। প্রধানমন্ত্রী হাসিনাজীকে আশ্বাস দিতে চাইÑ এ সময়ে যা প্রয়োজন, সেটি আমরা দিতে প্রস্তুত। বাংলাদেশের পাশে ভারত আগেও ছিল, এখনও আছে। যেকোন ধরনের সহযোগিতায় ভারত সরকার আপনাদের পাশে থাকবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এটাও আশ্বাস দিতে চাই যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আপনার এই যে লড়াই, তাতে ভারত আপনাকে সব ধরনের সহায়তা দিতে সব সময় প্রস্তুত। আমরা এখন এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে শুধু আমাদের চ্যালেঞ্জগুলোই এক নয়, আমাদের বিকাশের পথও একসঙ্গে জড়িত। সেই সঙ্গে আমাদের সমান সম্ভাবনাও রয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যের বিকাশ বিষয়ে মোদি বলেন, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশ হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর কা-ারী। ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও ওপরে যাবে। দুই দেশের মধ্যে উন্নতি আরও হবে। বেনাপোল-পেট্রাপোল পুরো দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, শুধু এখানে নয়, এর আগে আগরতলায়ও ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। আমি মনে করি, আর্থিক বিকাশ ও কানেক্টিভিটি একে অন্যের সঙ্গে জড়িত। এ বন্দর শুধু বাণিজ্যকে না বরং আমাদের দুই দেশের মানুষের মধ্যেও সম্পর্কের বিকাশ ঘটাবে। বক্তব্য প্রদানকালে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বিকাশে শেখ হাসিনার ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, এ বন্দর দুই দেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত লাভজনক হবে। দুই দেশের অর্থনীতির ভিত্তি আরও মজবুত হবে -শেখ হাসিনা ॥ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ দুই বন্ধুপ্রতীম দেশ। আমাদের দেশের জনগণের স্বার্থে এ যোগাযোগটা প্রয়োজন ছিল। কথায় আছে বাণিজ্যে বসতি লক্ষী, বাণিজ্য যত বাড়বে দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার তত উন্নতি হবে। তিনি বলেন, শুধু দুই দেশেই নয়, আঞ্চলিক যোগাযোগ আমরা স্থাপন করেছি। মিয়ানমার, ভারত, বাংলাদেশ, চীনের মধ্যে যোগাযোগের ফলে এ অঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে এবং আমাদের দুই দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি আরও মজবুত হবে বলেই আমি বিশ্বাস করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানো এবং মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে। আমাদের মধ্যে বাস সার্ভিস চালু হয়েছে, রেল সার্ভিস চালু হয়েছে, নৌপথও চালু রয়েছেÑ এভাবেই আমরা দুই দেশের সর্ম্পককে আরও ঘনিষ্ঠ করেছি। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালের কথা সবসময় মনে করি। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের যে অবদান সে কথা আমরা সবসময় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের সর্ম্পক সবসময় সুন্দর থাকবে, সৌহার্দপূর্ণ থাকবে এবং যেকোন সমস্যা হলে আমরা তার দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারব, যা অতীতেও আমরা করেছি। সেভাবেই আমরা দুই দেশের সর্ম্পক আরও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে চাই। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য। বিশেষ করে আমরা নিকটবর্তী প্রতিবেশী, আমাদের মধ্যকার সহযোগিতাপূর্ণ সর্ম্পক সবসময় অব্যাহত থাকবে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়ে বলেন, চেকপোস্টের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের একটা নতুন সীমানা উন্মোচিত হলো। এর মধ্য দিয়ে আমাদের সর্ম্পক আরও উন্নত হবে। যদিও দুই বাংলার মধ্যকার সর্ম্পক চিরদিনের। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, তিস্তার মতোই
×